December 23, 2024, 7:37 pm
মহান আল্লাহ্’তালার মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল তারা এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ্’র এবাদত করবে, তার সহিত কাহাকেও শরিক করবে না, এবং স্রষ্টার সহিত এক পরম সেতু বন্দন করে জগতকে ঐশি আলোতে বিকশিত করবে। এই জন্য মহান আল্লাহ্’তালা এক লক্ষ চল্লিশ / দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার পয়গম্বর / নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন এবং হযরত আদম (আ:) এর পর হইতে কখনও মানব জাতিকে নবুওয়ত তথা খিলাফত শুন্য অবস্থায় রাখা হয়নি – এমন কি আজ অব্দি মহান আল্লাহ্’তালা তার প্রিয় বান্দা গণের সহিত ওহী – ইলহাম ও সত্য সপ্ন দেখানোর মাধ্যমে তাঁর অস্তিত্ব সাক্ষী দিচ্ছেন এবং ঐশি আলোতে বান্দাদের পরিশুদ্ধ করেছেন যেন তারা আল্লাহ্’র সঠিক ইচছাটি বাস্তবায়ণ করতে পারে এবং নিজেরা আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভের অংশ হতে পারে। আল্লাহ্’তালা তাই সকল মানুষ নিজেই যেন সহজ তাঁর শিক্ষা গ্রহন ও আমল করতে পারে তাই পবিত্র কুরআনকে সহজ ও সরল ভাষায় নাযিল করেন। এবং ঘোষনা করেন –
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
“ইহা সেই কামেল ও পরিপূর্ণ কিতাব যা পথপ্রদর্শক মুত্তাকি গণের জন্য।”
এই আয়াত হতে আমরা পাই –
১. ইহা কামেল বা পূর্ণাঙ্গ কিতাব।
২. ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।
৩. ইহা পথ দেখায় শুধুমাত্র মুত্তাকিদের।
সুতরাং মানব জাতিকে কুরআন বুঝার জন্য ঈমান ইজারা দেওয়ার শিক্ষা এখানে নেই
বিধায় মহান আল্লাহ্’তালা বার বার কুরআন পাঠ করার তাগিদ দিয়েছেন যেন সে
নিজেই কুরআন বুঝে সেই অনুযায়ী আমল করতে পারে। এখানে এই শিক্ষা নাই –
হোদাললিল মোফাস্সিরীন, মোহাদদে্সীন, মৌলভীইন, এমন কি কোন ডাক্তার,
ইন্জিনিয়ার মাত্রই কুরআন বুঝবে। যদি তাই শর্ত হত রসুলের (স:) যুগে সব চেয়ে
বড় জ্ঞানী বা পন্ডিত আবুল হাকাম সবার আগে কুরআন বুঝে নিত এবং সে আবু জাহেল
বা অজ্ঞতার পিতা কেতাব পেত না। আজ যারা কুরআন বুঝার ও আমল করার জন্য বড়
বড় কিতাবের দোহাই দেন তাদের জেনে রাখা উচিত – মহান আল্লাহ্ কুরআন বুঝার
জন্য ঐ সমস্ত কিতাবকে শিক্ষক নিয়োগ করেন নি – বরং তিনি বলেছেন মোমেন
মাত্রই কুরআন হইতে হেদায়াত লাভ করবে। কোন মোফাসসির বা মোহাদদিস কুরআন বুঝবে
এ কথা বিশ্বাস করার সুযোগ নাই। সুতরাং কুরআন সবার জন্য উন্মুক্ত তাই এখান
হইতে কেবল মাত্র মোত্তাকি হেদায়াত পাবে বিধায় প্রত্যেক ব্যক্তি কুরআন পড়ে
নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নাই। কারণ মৃত্যুর পর
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কৃত কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে – তখন এ কথা
বললে চলবেনা আমি / আমার অমুক বড় হুজুর রা পীর সাহেবের কারণে সত্য মানিতে ও
আমল করিতে সক্ষম হইনি।
[ খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ]
_________________________
ইসলামে খিলাফত একটি গুরুত্ব পূর্ন বিষয় যা খোদ ঈমানের সহিত সম্পর্কিত।
পৃথিবীতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা আল্লাহ্’তালার এক মহান উদ্দেশ্য। হযরত আদম (আ:)
হতে খেলাফত শুরু হয় এবং মুহাম্মদ (স:) এর নিকট রেসালতের পরিপূর্ণতা দান করে
পুনরায় মহান আল্লাহ্ ঘোষণা দিলেন আমি মোমেনগণের সহিত খেলাফত ‘প্রতিষ্ঠিত’
করে দিব – অতপর ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিব।
খলিফা শূন্য জাতি মাঝি বিহীন নৌকায় আরোহীগণের ন্যায় যার গন্তব্য অন্ধকার ও বিপদের দিকে যাত্রা হয়ে থাকে।
সুতরাং খেলাফতের বাহিরে ইসলামের পরিপূর্ণতা নাই। আল্লাহ্ তাঁর মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রথমেই হযরত আদম (আ:) কে, প্রথম খলিফা হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিঁন ছিলেন একই সাথে নবী ও খলিফা।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ
خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ
الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ
بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেন, নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করিতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার প্রশংসাসহ গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। (বাকারা – ৩১)
*** এই আয়াত হতে আমরা একটি বিষয় উপলব্ধি করেছি যে যারা নিজেরা মনে করে তার আল্লাহ্’র অধিক প্রিয়ভাজন তারা ছাড়া আর কেহই তাদের ছেয়ে অধিকতর আল্লাহ্’র এবাদত করতে পারবে না – তা ঠিক নয় আল্লাহ্’র সৃষ্টির মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (স:) সর্বাধিক আল্লাহ্’র প্রশংসাকারী হয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ্’র পরিকল্পনায় বাদা যদি সয়ং ফেরেশতাও দেয় এমনকি কোন মানুষ যারা তাদের নিজেদের আমলের কারণে মানুষের নিকট ফেরেশতা হিসাবে পরিচিত খোদ তারাও যদি আল্লাহ্’র পরিকল্পনায় বাঁধা দেয় তবু আল্লাহ্’র কিছু য়ায় আসে না – আলাহ তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করবেনই ইহাই চুরান্ত সত্য। সুতরাং নিজেদের সঠিক এবং সত্য জামাত মনে করে খিলাফতের বাহিরে থাকা সয়ং আল্লাহ্ হইতে দূরে অবস্থানের শামিল। খিলাফতের অস্বীকৃতি মোট তথা আল্লাহ্’র অস্বীকৃতি।
অতপর আল্লাহ্ নিজ পরিকল্পনা অনুযায়ী আদমকে সৃষ্টি করলেন এবং ফেরেশতাদেরকে আদমকে সিজদা / আনুগত্য করতে বলেন –
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
‘এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে আনুগত্য করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই আনুগত্য করিল। কেবল ইবলিশ ব্যতিরেকে, সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল ( সে নিজেকে অনেক বড় মনে করিল)। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।’(বাকারা – ৩৫)
এই আয়াতে পাই :
১. ফেরেশতা গণ (নেক বানদাগণ) আনুগত্য করল।
২. ইবলিশ (দুষ্ট প্রকৃতির লোক) ঈমান আনল না।
৩. সে অহংকার করল।
৪. ফলে সে ( অস্বীকারের কারণে ) কাফের দের অন্তরভুক্ত হয়ে গেল।
আরো কতিপয় আয়াত নীচে পেশ করা হল –
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ
‘যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সেজদা (আনুগত্য) কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।’(তোয়াহ্ – ১১৭)
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ۗ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
‘যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদমকে আনুগত্য কর, তখন সবাই আনুগত্য করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল। ‘( সুরা কাহাফ – ৫১)
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ
‘নিশচয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে (খলিফাকে) আনুগত্য কর তখন সবাই আনুগত্য করল, কিন্তু ইবলীস সে আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত হইল না।’(আল আরাফ – ১২)
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
‘আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোমাকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বলল, ‘আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।’( আল আরাফ – ১৩)
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا
‘স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদায় পড়ে গেল। কিন্তু সে বললঃ আমি কি এমন ব্যক্তিকে সেজদা করব, যাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?’ (বনী – ইসরাঈল – ৬২)
এই আয়াত গুলি হতে পাই :
_______________________
১. আমি আদমকে সৃষ্ঠি করেছি।
২. আমি তোমাদেরকে ( মানুষকে) সৃষ্ঠি করেছি।
৩. ফেরেশতাগণ আনুগত্য করল – ইবলিশ ব্যতিরেক।
৪. সে আনুগত্যের পরিবর্তে অহংকার করল ।
৫. সে নিজেকে শ্রেষ্ট মনে করল কারণ সে আগুনের তৈরী জীন বা উঁচু শ্রেনীর অন্তরভুক্ত।
৬. আদম (মানুষ) মাটির তৈরী বা সাধারণ গোত্রের অন্তরভূক্ত ।
৭. তোমরা কি আমার (আল্লাহ্’র) পরিবর্তে তার ( অস্বীকার কারী / ইবলিশের ) বংশধরকে বন্ধু রূপে গ্রহন করবে।
৮. অথচ তারা তোমাদের শত্রু । এটা জালেমদের (অস্বীকারকারীদের ) জন্য নিকৃষ্ট বদল বা (অনুসবরণ) অনুকরণ।
*** উপরের দুটি ব্যাখ্যা হতে আমরা পাই পৃথিবীতে আল্লাহ্ তাঁর মহান পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের লক্ষে হযরত আদম (আ:) কে খলিফা বা প্রতিনিধি (নবী) হিসাবে প্রেরণ করেন মানব জাতি এবং জীনদেরকে ( উচ্চ শ্রেণীর লোক) প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। অহংকারীরা এবং অস্বীকারকারীগণ কাফেরে পরিণত হয়, তারা নিজেদের উচ্চ মর্যাদা সম্পন মানব বা জীন জাতীর অন্তরভুক্ত মনে করে। আজ যারা খলিফা অস্বীকার কারী হবে তারা একে অপরের বন্ধু – এ এক নিকৃষ্ট সম্পর্ক । সুতরাং আল্লাহ্’তালার মতে যারা খলিফাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহন করবে তারা ইহলিশে পরিণত হবে তারাই কাফেরদের অন্তরভুক্ত এবং তারা আল্লাহ্’র ও তাঁর প্রিয় বান্দাগণের শত্রু এবং জালেমদের অন্তরভুক্ত । মূল কথা হল প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকে মিথ্যা সাব্যস্থ করার প্রয়াসে তাকে অস্বীকার করে অন্য কোন দল বা মতকে সত্য বলে গ্রহন করার কোন সুযোগ নাই – বরং এরা অহংকারী, কাফের, জালেমদের অন্তরভুক্ত এমনকি দুসকৃত কারীদের দলভূক্ত। সুতরাং খলিফা ও তার জামাতকে যারা খাট করার জন্য উঠে পরে লেগেছে ইহা তাদের চরম দুঃসংবাদ ! খলিফার অস্বীকার তাদের জন্য জাহাননাম প্রস্তুত করছে। বিধায় যারা নিজেদের মুসলমান দাবী করেন তাদের সাবধান হওয়া উচিত।
[ কুরআনের অধীনে সাক্ষীদাতা নবীর আগমন ]
_________________________________________
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
আর আল্লাহ্ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্যায়ন করার জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (আল ইমরান – ৮২)
يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي ۙ
فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
হে বনী-আদম, যদি তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে পয়গম্বর আগমন করে তোমাদেরকে আমার আয়াত সমূহ শুনায়, তবে যে ব্যক্তি সংযত হয় এবং সৎকাজ অবলম্বন করে, তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (আল আরাফ – ৩৬)
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দাতা রূপে, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। (সুরা সাফফ – ৭)
আল্লাহ্’র সুন্নত প্রত্যেক আসমানি কিতাবের অধিনে সত্যায়ন কারী প্রেরণ, যার ফলশ্রুতিতে তিঁনি সকল নবীদের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহন করেন – ঐশি নেয়ামত হইতে যেন প্রত্যেক নবীর অনুসারীরা পথভ্রষ্ট না হয় এবং সহজে গ্রহন করতে পারে। সর্বশেষ কিতাব কুরআনের সত্যায়ন করার জন্য নবী প্রেরণ করবেন, সেই সত্যায়নকারী নবীর ভবিষ্যতদবাণী করেন পূর্ববর্তী তৌওরাতের সত্যায়নকারী নবী হযরত ঈসা (আ:)। ইহা আল্লাহ্’র এক মহা পরিকল্পনা ! ঈসা (আ:) বনী ইসরাঈলী শরিয়ত একদিকে যেমন সমাপ্ত ঘোষণা করেন – তেমনি বনী ইসমাঈলী শরিয়তের সূচনা করেন মুহাম্মদ (স:) আগমনের সংবাদ দানের মাধ্যমে এবং তাঁর (ঈসার আ: ) স্থলাভিষিকত নবীর নাম ঘোষণা করেন, বলেন – আহমদ নামে অপর একজন নবীও আসবেন যিনি প্রকারন্তরে আমার ন্যায় সেই ইসমাঈলী / মুহাম্মদী শরিয়তের সত্যায়ন কারী বা প্রশংসা কারী নবী হবেন।
[ মুহাম্মদ (স:) এর মাধ্যমে শরিয়তের পূর্নতা লাভ ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা ]
________________________________________________________
প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ বেদ ও পুরানে মুহাম্মদ নামে এক বিশ্ব নবীর আগমনের
ভবিষ্যত বানী করা হয়। বেদে – তাঁকে নরাশংস – প্রশংসিত (মুহাম্মদ) বলা হয়
এবং পুরানে স্বয়ং ‘মহামদ ইতিখ্যাত: শিষ্য শাখা সমন্বিত:’- অর্থাৎ –
মুহাম্মদ (স:) তিনি মরুস্থলে আগমন করবেন।
তৌওরাতের (১৮:১৮) এবং বাইবেলের নতুন নিয়ম যোহন : ১:২১ ও ১৬: ৭-১৪)। একজন মহাপুরুষের কথা বলা হয় যিনি স্রষ্ঠার নাম নিয়ে কথা বলবেন, সে ভাববাদী হলেন মুহাম্মদ। এমনকি ! এক সময় বাইবেলে ছিল- ‘হিকো মামতাতীম ওয়া কুলু মুহাম্মদীম। জিহ দৌদি ওয়াজিহরিয়ী বনৌত এয়ারুশালেম(শেরহশেরেম, ৫:১৬)। অর্থাৎ – হে যেরুজালেমের কন্যাগণ, আমার প্রিয়তমের নাম হল, মুহাম্মদ।
সুতরাং মুসা (আ:) ও ঈসা ( আ:) এর ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী মুহাম্মদ (স:) এর আগমনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্’তালা ইসলামী শরিয়তকে পূর্ন করে দিলেন। ঘোষণা করলেন – إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ “ইন্না দ্বীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম” – ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ – ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে (ধর্মকে) পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার কার্য সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে ধর্ম হিসেবে মনোনিত করলাম।’ রসুল (স:) কে ঘোষনা দিলেন – وَلَـٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ তিঁনি আল্লাহ্’র রসুল এবং নবীগনের উপর শ্রেষ্ঠত্ত্ব দান করলাম। তাঁর (স:) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্’তালা আমাদেরকে পরিপূর্ন জীবন বিধান আল কুরআন দান করেন – যা ফুরকান নামে অবহিত।
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا
সেই সত্তা পরম বরকতের অধিকারী যিনি নিজ বান্দার উপর ফুরকান অবর্তীণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়,।(আল ফুরকান – ২)
মহান পবিত্র দয়াময় আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলউল্লাহ্ (স:) উম্মতগণ যাতে পথভ্রষ্ট না হয় তার জন্য মহা কল্যান সাধন করলেন এবং এক সিলসিলা জারির অঙ্গীকার করলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন পুনরায় খিলাফত স্থায়ী / প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন এবং ধর্মকে পরিপূর্ন করে দিবেন যা আমাদের জন্য মনোনিত করা হইয়াছে। তিনি বলেন –
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করবেন যেভাবে তিনি তাদের পূর্ববর্তীগণকে খলিফা নিযুক্ত করেছিলেন, এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে মনোনিত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অস্বীকার করবে তারা দুসকৃতকারী হইবে।
খিলাফতকে আখরে ধরে থাকার জন্য পবিত্র কুরআনের তাগিদ হল –
** وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُو
‘তোমরা সকলে আল্লাহ্’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাক এবং পরস্পর বিচ্ছন্ন হয়োনা’( আল ইমরান – ১০৪)।
যারা খিলাফত বাদ দিয়ে দলে উপদলে বিভক্ত হয় তাদের জন্য সতর্ক বাণী হল –
** إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
‘যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করে দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে নবীর কোন সম্পর্ক নেই’ ( আনআম – ১৬০)।
[ হেদায়াত প্রাপ্ত সুন্নাত আল – জামাত ]
__________________________________
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا ۚ إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَـٰنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا ۩
এরাই তারা-নবীগণের মধ্য থেকে যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা নেয়ামত দান করেছেন। এরা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম, তাদের বংশধর, এবং ইব্রাহীম ও ইসরাঈলের বংশধর এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছি ও মনোনীত করেছি, তাদের বংশোদ্ভূত। তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তখন তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ত এবং ক্রন্দন করত। ( মারইয়াম – ৫৯)
সেই হিসাবে মহান আল্লাহ্’তালা তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন তোমরা কামনা কর যেন পথভ্রষ্ট না হও –
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
আমাদেরকে সহজ সরল ও সুদৃঢ় পথে পরিচালিত কর।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
তাহাদের পথে যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ।
তাই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্’তালা ঘোষনা দেন হে মুহাম্মদের উম্মত, তোমাদের জন্য আমি আল্লাহ্’র পক্ষ হইতে সুসংবাদ দিচ্ছি –
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ
أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ
وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا
আর যে
কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেই সমস্থ পুরস্কার
প্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল
ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। (সুরা নিসা – ৭০)
এই পুরস্কার প্রাপ্তগণ দুই ভাগে বিভক্ত :
1.
ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ
তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।(আল ওয়াককিয়াহ ৪০)
যারা রসুলকে (স:) সরাসরি অনুসরণ করেছেন সাহাবীগণ এবং খিলাফতের অনুসারীগণ।
2.
وَثُلَّةٌ مِّنَ الْآخِرِينَ
এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে। (আল ওয়াককিয়াহ – ৪১)
যারা হযরত মুহাম্মদ (স:) প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ইমাম মাহদী (আ:) এর সহিত
মিলিত হবে এবং কেয়ামত পর্যন্ত খিলাফতের সহিত সম্পৃক্ত থাকবে। এর সমর্থনে
অপর একটি আয়াতে বলা হয়েছে –
وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘এই রসূল প্রেরিত হয়েছেন তোমাদের মধ্য হইতে অন্যদের মধ্যে যারা এখনও এসে
তোমাদের সহিত মিলিত হয়নি। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা জুমুআহ -৪)
বলা হয়েছে, মাহদীর যুগে সকল ফিরকার বিলুপ্তি ঘটবে। তখন সবাই আল্লাহ্’র কিতাব ও সুন্নতের অনুসারী হবে(হাদিসুল গাসিয়া – ১৫৫)। মাহদীর সঙ্গীরা রসুলে করিম (স:) এর সাহাবীদের অনুরুপ হবেন (নজমুল সাকেব)
وَالَّذِينَ
آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ
مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۙ كَفَّرَ عَنْهُمْ
سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ
আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে,
সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি
অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং
তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।(মুহাম্মদ – ৩)
মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্ সেই পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্য হইতে এক নবীর নাম ঘোষনা করলেন বনী ইসরাঈলী নবী ঈসা (আ:) এর মাধ্যমে । আল্লাহ্’র পরিকল্পনা হল যেহেতু বনী ইসরাঈলী মসীহ হযরত ঈসা ( আ:) সেহেতু তাঁর মাধ্যমে পরবর্তী মুহাম্মদী (স:) মসীর নাম ঘোষণা করে দেওয়া যেন – আখেরী যুগে বনী ইসরাঈলীগণ এবং হযরত মুহাম্মদ (স:) এর উম্মতগণ উভয়েই সহজে মসীলে মসীহকে চিনিয়া নিতে পারে এবং তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের সহিত সম্পৃক্ত হয়ে খোদাতালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন –
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমি উহার সত্যায়নকারী যা তৌওরাত হইতে আমীর সন্মুখে আছে ( তৌওরাতে হযরত ‘মুহাম্মদ’ (স:) এর আগমনের উল্লেখ করা হয় উহার সত্যায়ন)। এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদদাতা রূপে এসেছি যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। (সুরা সাফফ্ – ৭)
হাদীসে এই আহমদ নবীকে ইমাম মাহদী (আ:) এবং ঈসা মসীহ এবং ‘নবীউল্লাহ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
অন্যত্র আছে -‘আসাবাতুন তাগজুল হিন্দা ওয়াহিদা তাকুনু মায়াল মাহদীসমুহু আহমদ’ (বুখারী ফিত্ তারিখ) অর্থাৎ – আহমদ নামক মাহদী আবির্ভুত হবেন।
হুজাজুল কেরামা, ৩৫৬ পৃষ্টা বলা হয়েছে কতিপয় হাদীসে আছে -“ইমাম মাহদীর নাম ‘আহমদ’ হইবে।”
জগতের সবকটি বড় বড় ধর্ম মত এই মহাপুরুষের ভবিষ্যত দ্বাণী উল্লেখ করা হয়েছে –
পার্শী ধর্মগ্রন্থ গাঁতাতে আছে – ‘নইদ তি আহমদ দ্রাগোয়্যাতিম ফ্রামরুয়ামী স্পিতম যুরাথাস্ত্র’- এখানে স্পষ্ট আহমদ নামই বলা হয়েছে।
হিন্দুদের ভেদে সরাসরি শেষ যুগের এই মহাপুরুষের নাম আহমদ বলা হয়েছে। অথর্ববেদে আছে – ‘অহমিদ্দি পিতুস্পরি মেধা মৃতস্য জগ্রভ। অহং সূর্য ইদাজনি।’(২০ কান্ড, ১১৫ সুক্ত) অর্থাৎ – ‘আহমদ নামক ঋষি তাঁর (আত্মিক) পিতার (মুহাম্মদ স:) ন্যায় হবেন, তিনি সূর্যের ন্যায় আলোক বিতরণ করবেন।’
সুতরাং যিনি মাহদী হবেন কুরআন, হাদীস এবং অন্যান্য ধর্ম মত অনুয়ায়ী তিঁনি ‘আহমদ’ হবেন এতে কোন সন্দেহ রহিল না।
[নবী ও খলিফার আনুগত্যকারীরাই মুসলমান হইবে]
____________________________________________
যুগে যুগে মহান আল্লাহ্তা’লা মানব জাতির জন্য নবী রসূলগণকে প্রেরণ করেন
ইসলাম প্রচার করার জন্যই। ইসলামের অাভিধানিক অর্থ হল শান্তি। আর এই শান্তির
বাণীই সকল নবী ও অবতারগনের একমাত্র প্রচারিত ধর্ম। প্রত্যেক নবী ও
রসূলগণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার জন্য একমাত্র পথ হল বয়াত বা আনুগত্য। আনুগত্য
ব্যতিরেকে কোন ধর্ম নেই। আর বয়াত ব্যতিরেকে কোন ইসলাম নেই। সুতরাং ইসলামে
প্রবেশ করার জন্য এবং মুসলমান হওয়ার জন্য একমাত্র পদ্ধতি বা নিয়ম হচ্ছে
বয়াত।
যারা হযরত রসূলে করিম (সাঃ) এর হাতে বয়াত করেছিল কেবলমাত্র
তাদেরকেই আমরা মুসলমান বলতে পারি। বয়াত ব্যতিরেকে কাউকে মুসলমান বলা যায়
না। যেমন- রসূলের আপন চাচা আবু তালেব ইসলামের তথা রসূলে করিম (সাঃ) এর
হেফাজতের জন্য আমৃত্যু সহযোগিতা করে যান কিন্তু আমরা কেহই তাকে মুসলমান বলি
না। সুতরাং মুসলমান হইতে হইলে যুগের নবী অথবা তাঁর খলিফার হাতে বয়াত
বাধ্যতামূলক।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
১. مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ
( সূরা নিসা আয়াত ৮১) ।
অর্থ – যে কেহ এই রসূলের আনুগত্য করে (বয়াত করে) বস্তুতঃ সে আল্লাহ্’রই আনুগত্য করে।
২. إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ
(সূরা ফাতাহ আয়াত – ১১)।
অর্থ -নিশ্চয় যাহারা তোমার বয়’আত করে বস্তুতঃ পক্ষে তাহারা আল্লাহ্’র বয়’আত করে। আল্লাহ্’র হাত তাহাদের উপর আছে।
৩. لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ
تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ
عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
(সূরা ফাতাহ ১৯) ।
অর্থ
– নিশ্চয় আল্লাহ্ মোমেনগণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যখন তাহারা বৃক্ষতলে
তোমার বয়’আত করেছিল এবং তিনি তাহাদের অন্তরে যাহা ছিল তাহা অবগত ছিলেন,
সুতরাং তিনি তাহাদের অন্তরে প্রশান্তি নাযেল করিলেন এবং তাহাদিগকে
নিকটবর্তী বিজয় দান করিলেন।
৪. قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ
اللَّـهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّـهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ
ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّـهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
(সূরা আল ইমরান ৩২)
অর্থ – তুমি বল,যদি তোমরা আল্লাহ্’কে ভাল বাস, তাহা হইলে তোমরা আমার অনুসরণ
কর; আল্লাহ্ ও তোমাদিগকে ভালবাসিবেন এবং তিনি তোমাদিগকে তোমাদের সকল অপরাধ
ক্ষমা করিয়া দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
৫. قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
(সূরা আলে ইমরান ৩৩)
অর্থ- তুমি বল, আল্লাহ্ ও এই রসূলের আনুগত্য কর; কিন্তু যদি তাহারা মুখ
ফিরাইয়া লয় তাহা হইলে (জানিও) আল্লাহ্ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
৬. وَأَطِيعُوا اللَّـهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
(সূরা আলে ইমরান ১৩৩)
অর্থ- এবং তোমরা আল্লাহ্ ও এই রসূলের আনুগত্য কর যেন তোমাদের উপর রহম করা যায়।
সুতরাং এই আয়াতগুলি হইতে হইতে দেখা যায় মহান আল্লাহ্তা’লাকে পাইতে হইলে হযরত রসূলে করিম (সাঃ) এর হাতে বয়াত বা আনুগত্য ব্যতীত সম্ভব নয়। অনুরূপ ভাবে নবী করিম (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর আল্লাহ্ মুসলমান হওয়ার এবং জন্মগতদের মুসলমান থাকার জন্য একই বিধান রাখেন। যেমন পবিত্র কোরানে আল্লাহ্ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا
الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ
فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ
بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
(সূরা নিসা আয়াত ৬০) ।
অর্থ- হে যাহারা ঈমান আনিয়াছ ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ্’র এবং আনুগত্য কর
এই রসূলের এবং তাহাদের যারা তোমাদের মধ্যে আদেশ দানের অধিকারী
(প্রতিনিধির)। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা মতভেদ কর তাহা হইলে তোমরা উহা
আল্লাহ্ এবং রসূলের প্রতি সমর্পণ কর যদি তোমরা আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসের উপর
ঈমান রাখ। ইহা বড়ই কল্যাণজনক এবং পরিণামের দিক দিয়া অতি উত্তম।
হাদীসে আছে, – ”মান আতায়ানি ফাকাদ আতা আল্লাহ্ ওয়ামান আতায়ানি ফাকাদ আতা
আল্লাহ্ ওয়ামান আতা়য়া আমিরি ফাকাদ আতায়ানি ওয়ামান আতায়া আমিরি ফাকাদ
আতায়ানি।” (বুখারী, মুসলিম ও মিসকাত )
অর্থ- যে ব্যক্তি আমার ইতায়াত (
আনুগত্য স্বীকার) করে, নিশ্চয় সে আল্লাহ্তা’লার ইতায়াত করে। যে ব্যক্তি
আমার অবাধ্যতা করে, নিশ্চয় সে আল্লাহ্তা’লার অবাধ্যতা করে। যে ব্যক্তি আমার
আমীমের ইতায়াত করে, নিশ্চয় সে আমার ইতায়াত করে। যে ব্যক্তি আমার আমীরের
অবাধ্যতা করে নিশ্চয় সে আমার অবাধ্যতা করে।
অন্য এক হাদীসে আছে – ‘পছন্দ হউক আর না হউক মুসলমানদের জন্য আমীরের এতায়াত করা ফরজ’ (বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নেছায়ী, ইবনে মাজা)।
ইসলামে প্রবেশ করার স্বীকৃতিই হল বয়াত, এ জন্যই হযরত রসূলে করিম (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর সকল সাহাবীগণ একত্রিত হয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে খলিফা নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর হাতে বয়াত করে তাদের ইসলামের মধ্যে থাকার স্বীকৃতি প্রদান করেন। যারা তখন জন্মগত মুসলমান ছিল তাঁরাও হযরত আবু বকর (রাঃ) এর হাতে বয়াত করল এবং পরবর্তীতে যারা নতুন মুসলমান হইলেন তাঁরাও একই নিয়মে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নিকট বয়াত করেই মুসলমান হইলেন। এরূপ একই বিধানের উপর চার খলিফার যুগ গেল। আর এ কথার স্বীকৃতিই মহান আল্লাহ্তা’লা পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ্তা’আলা বলেন –
وَعَدَ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ
وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا
اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ
الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ
أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ
بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
(সূরা নূর আয়াত ৫৬)
অর্থ- তোমাদের মধ্য হতে যাহারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাহাদের
সঙ্গে ওয়াদা করিয়াছেন যে, তিনি অবশ্যই তাহাদিগকে পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত
করিবেন যেভাবে তিনি তাহাদের পূর্ববর্তীগণকে খলিফার নিযুক্ত করিয়াছিলেন; এবং
অবশ্যই তিনি তাহাদের জন্য তাহাদের দীনকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিবেন
যাহাকে তিনি তাহাদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন, এবং তাহাদের ভয়-ভীতির অবস্থার
পর উহাকে তিনি তাহাদের জন্য নিরাপত্তায় পরিবর্তন করিয়া দিবেন; তাহারা আমার
ইবাদত করিবে, আমার সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করিবে না। এবং ইহার পর যাহারা
অস্বীকার করিবে, তাহারাই হইবে দুষ্কৃতকারী। পবিত্র কুরআনে এই আয়াত হইতে
আমরা পাই –
১. যারা ইমান আনে সৎ কর্মশীল (মোমেন) তাদের মধ্যে খলিফা প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন।
1. *** পূর্ববর্তীদের মত । যেমন – হযরত আদম (আ:), হযরত হারুন (আ:), হযরত
সুলায়মান (আ:) এবং হয়রত দাউদ (আ:) আল্লাহ্ পক্ষ হইতে খলিফা। ঊনারা একাধারে
নবী এবং খলিফা।
2. *** রসুল করীম (স:) মৃত্যুর পর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত
হয়। অন্যদিকে তিঁনি হযরত ইমাম মাহদী (আ:) কে আল্লাহ্’র খলিফা মাহদী বলেছেন (
সুনানে ইবনে মাজা-বাবু খুরুজুল মাহদী) – তাই তিনি একাধারে পূর্ববর্তীদের
মত নবী ও পরবর্তীদের মত খলিফা উভয় হবেন এবং তাঁর দ্বারাই দ্বিতীয় বার
‘খিলাফতে আলা মিনহাজিন নবুওয়ত’ প্রতিষ্ঠিত হবে।(মিশকাত) এবং একে তিঁনি
‘খলিফাতাল্লাহিল মাহদীয়া’ বলে উল্লেখ করেন- (আহমদ, বায়হাককী, ইবনে মাজা)।
3. *** ইমাম মাহদীর (আ:) খিলাফত পুর্ব দেশ কায়েম হবে ভবিষ্যত বাণী করা হয়
-‘ইয়াখরুজুনাছুম মিনাল মাশরিকী ইউ আতিউনালিল মারদীয়া খিলাফাতাহু’ -(ইবনে
মাজা)।
২. তাদের ধর্মকে সুদৃঢ় করিয়া দিবেন, যা আল্লাহ্ মনোনীত করিয়াছেন।
৩. ভয়-ভীতির পর নিরাপত্তা দিবেন।
৪. তাহারা শিরক করবে না। যেমন-পীর পূজা, কবর পূজা, ইত্যাদি।
৫. খলিফার অস্বীকারকারীরা দুষ্কৃতকারীর দলভুক্ত হবে।
সুতরাং খেলাফতের বহির্ভূতরা অর্থাৎ অস্বীকার কারীরা মোমেনত নয়ই বটে দুষ্কৃতকারী হইবে। আজ যারা কোন খিলাফতের অধীনে নাই তাদের জন্য ইহা সয়ং আল্লাহ্’র ফতোয়া।** কাজেই মুসলমানদের খলিফা খুঁজে তাঁর নিকট বয়াত করতেই হবে। সুতরাং তারা যদি নিজেদের কামেল, মোহাদদেস, মোফাসসির, এমনকি সবয়ং ফেরেশতা ও মনে করে থাকেন – তাদের জন্য খলিফার আনুগত্য করা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। বয়াতই মুসলমান হওয়ার একমাত্র পথ যা কোন মানুষকে মুসলমান এবং মুত্তাকি বানায়।
অতঃপর বয়াতের দ্বারা চলে গেলে মোজাদ্দেদ ও যুগ খলিফা / ইমামদের উপর। এ জন্যই মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন, এই উম্মতের মধ্যে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে মোজাদ্দেদ আসতে থাকবে। তিনি (সাঃ) বলেন,-
”ইন্নাল্লাহা ইয়াবাসু লিহাজিল উম্মাতে আলা রাসে কুল্লি মিয়াতি সানাতিন মান উজাদ্দিদু লাহা দ্বীনাহা।” (আবু দাউদ, মিশকাত) ।
অর্থ- নিশ্চয় আল্লাহ্তা’লা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এই উম্মতের জন্য
এমন মহাপুরুষকে আবির্ভূত করবেন, যিনি তাদের জন্য ধর্মকে সঞ্জীবিত করবেন।
রসূলে করিম (সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী হইতে হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রতি শতাব্দীতেই মোজাদ্দেদ আসেন এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) এসে পুনরায় খিলাফতে আলা মিনহাজিন নবুওয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ইমাম মাহদী (আঃ) আসলে তাঁর হাতে অবশ্যই বয়াত করতে হবে।
১. ”ফাইজা রাইতুমুহু ফাবাইয়ুহু ওয়ালাউ হাবুয়ান আলাস সালজি ফা ইন্নাহু
খলিফাতুল্লাহিল মাহদীয়ু।” (সুনানে ইবনে মাজা, বাবু খুরুজুল মাহদী)
অর্থ- ইমাম মাহদী যাহির হওয়ার সংবাদ পাওয়া মাত্রই তাঁহার হাতে বয়াত করিও,
যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়াও যাইতে হয়; নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্’র খলিফা
আল-মাহদী।
২. ”সুম্মা ইয়াবিয়ু খলিফাতুল্লাহিল মাহদীয়ু ফাইজা
সামিতুম বিহি ফাতুহু ফাবাইয়ুহু।” (মিসবাহ যুজাজা, হাসিয়া ইবনে মাজা বাবু
খুরুজুল মাহদী)
অর্থ- অতঃপর আল্লাহ্তা’লার *খলিফা ইমাম মাহদী আসিবেন, তোমরা তাঁহার আগমন বার্তা শুনা মাত্রই তাঁহার নিকট হাজির হইয়া বয়আত করিবে।”
আর এই বয়াত না করার পরিনাম জাহান্নাম।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ – আজ মুসলমানরা দিশাহারা হইয়া পীর, মাজার, মৌলভী, লেংটাশাহ, কেল্লাশাহ, পাগলাশাহ ইত্যাদির নিকট বয়াত করে। এখানে উল্লেখ্য যে শুধু মাত্র যুগের নবী এবং তাঁর খলিফা ব্যতিরেকে অন্য কারো নিকই বয়াই ইসলাম স্বীকৃত না। কারণ খলিফার ব্যাখ্যা স্বয়ং আল্লাহ্তালা দিয়ে রেখেছেন। আর যারা যুগের ইমাম ছিলেন তাঁরাও আল্লাহ্’র পক্ষ হইতে খলিফা, তবে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ্’র নিকট হইতে ওহী ও ইলহাম পেয়ে মোজাদ্দেদ হওয়ার ঘোষণা দিতে হয়। আল্লাহ্ই বলে দিবেন তিনি খলিফা কেহ নিজে থেকে দাবী করার কোন সুযোগ নাই। এর বাহিরে সকলই বিদাত ও ফেতনা। আর যারা বিদাত করল তারা শিরক করল, শিরককারীগণ আল্লাহ্’র নৈকট্য লাভ করবে না ।
[ হেদায়াত প্রাপ্তদের জন্য পুরস্কার ]
_____________________________
যারা আল্লাহ্’র পক্ষ হইতে পুরস্কার পাবে শুধু মাত্র তাহাই হেদায়াত প্রাপ্ত
হইবে । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন প্রত্যেক নবী ও অবতারের তিরোধানের পর তার
অনুসারীরা দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছে । প্রত্যেক যুগেই একটি মাত্র দল বা
সম্প্রদায়ই হেদায়াত প্রাপ্ত ছিল । আল্লাহ্ এক, সুতরাং যুগে যুগে আল্লাহ্’র
মনোনীত ধর্ম ও একই ছিল আর শেষ যুগেও একের মধ্যেই ধর্মের শেষ সমাপ্তি ঘটবে ।
আর এই এক হলেন, মাহদী, মসীহ, মসীহা, মৈত্রীয়, মসীহ দাহরামী, কলকি অবতার
সকল ধর্মের সকল মহাপুরুষ এক যুগ, একই লক্ষণ, একই সময় একই কাজে হযরত মির্যা
গোলাম আহমদ কাদিয়ানি (আঃ) এর মধ্যেই এসে মিলিত হল। যাকে পবিত্র কুরআনে
‘আহমদ’ নাম দেওয়া হয়েছে।বেদে ও তাকে আহমদ নাম দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যুগে
যুগে আল্লাহ্’র এবং তাঁর রসূলগণের অনুসারীরাই হেদায়াত প্রাপ্ত । এই আনুগত্য
কারীদের জন্যই রয়েছে পুরস্কার ।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্তা’লা বলেন,
وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ
أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ
وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا
(সূরা নিসা আয়াত ৭০)
অর্থ-এবং যাহারা আল্লাহ্ এবং এই রসূলের আনুগত্য করিবে তাহারা ঐ সকল লোকদের মধ্যে শামিল হইবে যাহাদিগকে আল্লাহ্ পুরস্কার দান করিয়াছেন অর্থাৎ নবীগন এবং সিদ্দীকগণ এবং শহীদগন এবং সালেহগণের মধ্যে । এবং ইহারাই ( পুরস্কার প্রাপ্তদের) সঙ্গী হিসাবে উত্তম ।
[ অস্বীকার কারীর আযাব ]
_______________________
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
وَمَن لَّمْ يُؤْمِن بِاللَّـهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيرًا
(সূরা ফাতেহ ১৪)
অর্থ- ”এবং যে, ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রসূলের উপর ইমান আনে না- অবশ্যই
আমরা এইরূপ কাফেরদের জন্য জলন্ত আগুন প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছিলেন ।”
وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَـٰذَا ۚ قَالُوا بَلَىٰ وَلَـٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ
قِيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَبِئْسَ مَثْوَى
الْمُتَكَبِّرِينَ
কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে
পৌছাবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে
বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বর আসেনি, যারা তোমাদের
কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করত এবং সতর্ক করত এ দিনের
সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হ্যাঁ, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির
হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে
প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্যে। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের
আবাসস্থল। ( সুরা যুমার ৭২ – ৭৩)
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ
تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ ۖ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ
قَالُوا بَلَىٰ قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ
فَاعْتَرَفُوا بِذَنبِهِمْ فَسُحْقًا لِّأَصْحَابِ السَّعِيرِ
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে
শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে
জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের
জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। যখন তারা তথায়
নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে। ক্রোধে জাহান্নাম
যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার
সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা
বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ
করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা
মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ। তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি
খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। অতঃপর তারা তাদের
অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক। (সুরা আল মুলক ৭ – ১২)
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিয়াছেন,-
১. ”মানলাম ইয়ারিফ ইমামা যামানিহি ফাকাদ মাতা মিতাতাল জালিয়াতি” (মুসনাদ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল)।
অর্থ- ”যে ব্যক্তি যুগের ইমামকে না মানিয়া মারা যাইবে, সে জাহেলিয়তের ( অজ্ঞতার ) মৃত্যু বরণ করিবে।”
২. ”মাম্মাতা ওয়ালাইসা ফি উনুকিহী বাইয়াতুন মাতা মিতাতান জাহেলিয়াতিন।” ( সহী মুসলিম)
অর্থ- ”যে ব্যক্তি যুগের ইমামের হাতে বয়াত না করিয়া ইহলোক ত্যাগ করিয়াছে, সে জাহেলিয়তের মৃত্যু বরণ করিয়াছে।”
***বর্তমান পৃথিবীতে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মধ্যেই ইসলামি খলিফা বিদ্যমান। আর এই জামাত হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। অন্য কোন ইসলামি জামাত খোদা প্রদত্ত খলিফা দাবীকারক নাই। একমাত্র আহমদীয়াতের খলিফাই খোদা প্রদত্ত খলিফা দাবীকারক। সুতরাং বয়াতের জায়গা একটাই।
***বয়াত ছাড়া ইসলাম বা ধর্ম নাই, নবী ও খলিফার আনুগত্যের বাহিরে আল্লাহ্ নাই। আর যেই দলের সহিত আল্লাহ্’র সম্পর্ক নাই, তাদের কোন পূণ্য নাই। বাহিরে যতই ধর্মের চাকচিক্য দেখা যাক না কেন তা সত্য ধর্ম নয়। খেলাফতের অস্বীকার কারীগণকে মহান আল্লাহ্’তালা ইবলিশ, কাফের, জালেম এবং দুসকৃতি কারী হিসাবে উল্লেখ করেন। এ কারণেই বলা হয়েছে ৭২ ভাগ আলেমই দোজখে যাবে। ১ টি মাত্র জামাত হবে যারা বেহেস্তে যাবে। সুতরাং মোমেন হিসাবে অন্তরে এই ভয়টি রেখে খলিফার হাতে বয়াত করে নিজেদের ইসলামের মধ্যে স্বীকৃতি দেওয়া বাধ্যতামূলক। কাজেই এই সভ্য জগতে এসে ঈমানের / ধর্মের ভার মৌলভী, পীর বা নামধারী পুরোহিতদের উপরে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নাই। খলিফার নিকট বয়াতই ইসলামে প্রবেশ ও একমাত্র মুক্তির উপায়। প্রত্যেক মানুষ আল্লাহ্’র দলে অবস্থান করুক এই দোয়া করি ।আমিন।
Leave a Reply