April 10, 2024, 9:24 pm

Latest Post:
হযরত উমর (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ হযরত আবু উবায়দা বিন জাররাহ্ (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণের বাকী অংশ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত আবু উবায়দা বিন জাররাহ্ (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত বিলাল (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণের ধারাবাহিকতা মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত বিলাল (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যকার মতভেদের মীমাংসায় যুগ ইমাম আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে দু’টি ভার্চুয়াল সভার সম্মান লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ হল্যান্ড মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ
খিলাফতের প্রতি আহমদীদের অকৃত্রিম ভালােবাসা

খিলাফতের প্রতি আহমদীদের অকৃত্রিম ভালােবাসা

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) একবার বলেছেন, “আমি খােদা তালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি কারণ তিনি আমাকে একটি বিশ্বস্ত ও নিষ্ঠাবান জামাত দান করেছেন; আমি দেখি আমি যে কাজের জন্যই তাদেরকে আহ্বান জানাই, তারা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুসারে তাতে একে অপরের চেয়ে অগ্রসর হয়। আর আমি তাদের মাঝে একপ্রকার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দেখতে পাই।’’

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর প্রতি এই বিশ্বস্ততা, নিষ্ঠা ও ভালােবাসার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত আমরা অহরহ দেখেছি। এ সম্পর্কে মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাহাবীদের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে; কিন্তু নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার এই দৃশ্য কেবল মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সত্তাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর তিরােধানের পরে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের সাথেও জামাতের সদস্যদের সেরূপই দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান, আর এই সম্পর্কই জামাতের ঐক্য ও অখণ্ডতার চিহ্ন ও পরিচয় বহন করে।

হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) যখন আল্লাহ্ তা’লার কাছ থেকে জেনে নিজ জামাতকে তাঁর সাথে বিচ্ছেদের সংবাদ দেন, তখন তিনি একইসাথে জামাতকে সান্ত্বনাস্বরূপ খিলাফতের ধারা প্রবর্তিত হওয়ার সুসংবাদও প্রদান করেন। তিনি (আ.) আল্ ওসীয়্যত পুস্তিকায় লিখেন: তােমাদেরকে আমি যে কথা বলেছি তাতে তােমরা দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়াে না আর তােমাদের চিত্ত যেন উৎকণ্ঠিত না হয়। কেননা তােমাদের জন্য দ্বিতীয় কুদরত (তাঁর অপার ক্ষমতার দ্বিতীয় বিকাশ)-ও দেখা আবশ্যক আর এর আগমন তােমাদের জন্য শ্রেয়। কেননা, তা স্থায়ী যার ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হবার নয়। আর সেই ‘দ্বিতীয় কুদরত’আমি না যাওয়া পর্যন্ত আসতে পারে না। কিন্তু আমার চলে যাবার পর খােদা তােমাদের জন্য সেই ‘দ্বিতীয় কুদরত’-কে প্রেরণ করবেন যা চিরকাল তােমাদের সঙ্গে থাকবে। যেভাবে ‘বারাহীনে আহমদীয়ায়’ খােদার প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান। সেই প্রতিশ্রুতি তােমাদের সাথে সম্পৃক্ত, আমার নিজের সম্বন্ধে নয়। খােদা তা’লা বলেছেন, ‘মায় ইস্ জামাতকো জো তেরে প্যেরাও হায় কিয়ামত তাক দুসরো পার গালাবা দুঙ্গা’। অর্থাৎ ‘তােমার অনুসারী এ জামাতকে আমি কিয়ামত পর্যন্ত অন্যদের ওপর প্রাধান্য দিব।আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মৃত্যুর পর খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

খলীফা ও জামাতের মধ্যে নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা, আনুগত্য ও ভালােবাসার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে না উঠলে শুধুমাত্র খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোন তাৎপর্য বহন করে না; আর আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ছাড়া কোন মানবীয় শক্তি এই সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে না। এটি আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হওয়ার এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথে আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ও সমর্থন থাকার এবং আহমদীয়া জামাতের সত্য হওয়ার অকাট্য প্রমাণ।হুযুর জামাতের সদস্যদের খিলাফতের প্রতি আবেগ-অনুভূতির এমন কতিপয় ঘটনা উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন, যেগুলাে প্রমাণ করে এই আবেগ ও অনুভূতি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে আজ ১১২ বছর পরও প্রত্যেক খিলাফতের যুগে ঠিক সেভাবেই বিদ্যমান, যেমনটি মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জীবদ্দশায় ছিল। আর তা হবেই না বা কেন? এটি তাে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী-ই ছিল যা বাস্তবায়িত হচ্ছে!

হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়ালের প্রতি জামাতের সদস্যদের ভালােবাসার উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘বদর’ পত্রিকার সম্পাদক বেশ কিছু চিঠির উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে হাকীম মুহাম্মদ হুসাইন কুরাইশী সাহেবের চিঠির অংশবিশেষ হুযূর তুলে ধরেন। খলীফাতুল মসীহর অসুস্থতায় তার বেদনার্ত ও উদ্বেগপূর্ণ দোয়া এবং হুযূরের সুস্থতার সংবাদে তার উচ্ছ্বাস ছিল ঈর্ষণীয়। আবার তার আনুগত্যের স্পৃহার ক্ষেত্রে সাহাবী আবু আব্দুল্লাহ (রা.)-এর ঘটনাও খুবই আশ্চর্যজনক; তিনি একদিন খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রা.)-কে নিবেদন করেছিলেন: “আমাকে কোন উপদেশ দিন।’ হুযূর (রা.) তাকে বলেন, “মৌলভী সাহেব! আমার মনে হয় না করার মত এমন কোন কাজ আছে যা আপনি করেন নি; কেবল কুরআন হিফয করাই বাকি আছে।’ হুযূরের এই কথা শুনে আবু আব্দুল্লাহ্ সাহেব ৬৫ বছর বয়সে কুরআন মুখস্ত করতে শুরু করেন ও হাফেযে কুরআনে পরিণত হন।

খলীফাতুল মসীহ্ সানী হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)-এর যুগের একটি ঘটনা; হুযূর (রা.) ৯ মার্চ, ১৯২৩-এ প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় শুদ্ধি আন্দোলনের ফলে যেসব স্থানে মুসলমানরা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল, তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেসব স্থানে আহমদীদেরকে নিজ খরচে গিয়ে তবলীগ করার আহ্বান জানান; অনেক উচ্চ শ্রেণী-পেশার সাথে জড়িত বহুসংখ্যক আহমদী এতে আত্মনিয়ােগ করেন। হুযূরের এই আহ্বানের পরদিন কারীনঈমউদ্দীন বাঙ্গালী সাহেব হুযুর (রা.)-এর এক বৈঠকে হুযুরের কাছে নিবেদন করেন: “বিএ’র শিক্ষার্থী আমার ছেলে জিল্লুর রহমান ও মতিউর রহমান যদিও আমাকে কিছু বলে নি, কিন্তু আমার ধারণা হুযূর যে পরিস্থিতিতে যেসব শর্তসহ জীবনােসর্গের আহ্বান করেছেন, তারা নিশ্চয়ই এতে সাড়া দেবে। তারা হয়তাে ভাবতে পারে যে, এতে আমার কষ্ট হবে। কিন্তু তাদের বৃদ্ধ পিতা হিসেবে হুযূরের সামনে আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার যত কষ্টই হােক, এতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই; আল্লাহ্র পথে কাজ করতে গিয়ে তারা যদি মারাও যায়, তবে আমি একফোঁটাও অশ্রুপাত করব না, বরং আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব। এমনকি যদি আমার তৃতীয় পুত্র মাহবুবুর রহমানও এরূপ করে ও মারা যায় এবং আমার যদি এমন আরও দশটি পুত্র হয় ও এ পথে মারা যায়, তবুও আমি একটুও দুঃখ করবনা।’’ হুযূর (রা.)-এর তবলীগের আহ্বান শুনে সারগােধার এক যুবক পাসপাের্ট ছাড়াই আফগানিস্তানে চলে যান ও তবলীগ শুরু করেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে তিনি জেলেই কয়েদী ও পুলিশদের তবলীগ শুরু করে ও কয়েকজনকে প্রভাবিতও করে ফেলে। মােল্লারা তাকে হত্যার চেষ্টাও করে, কিন্তু শেষমেশ তিনি নিরাপদেই দেশে ফিরে আসেন। হুযূর (রা.) যখন তাকে বলেন, তুমি অন্য কোন দেশে গেলে তাে গ্রেফতার না হয়েই তবলীগ করতে পারতে, তখন সেই যুবক সাথে সাথে নিবেদন করেন, আপনি কোন দেশের নাম বলুন, আমি এখুনি যাচ্ছি!’ হুযূর তাকে নিরস্ত করে তার অসুস্থ মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন, আর এ-ও বলেন, অন্য যুবকরাও যদি তার মত উৎসাহী হতাে, তবে কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দেয়া যেত।

খলীফাতুল মসীহ্ সালেস (রাহে.) ‘র যুগে আমেরিকায় সিস্টার নাঈমা লতিফ নামে খিলাফতের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক ভদ্রমহিলা ছিলেন। হুযূর (রাহে.)-এর আমেরিকা সফরের সময় এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে হুযুরের বক্তৃতা শুনে তিনি সাথে সাথে হিজাব পরিধান শুরু করেন; সেই পুরাে অঞ্চলে তখন তিনি-ই একমাত্র নারী ছিলেন যিনি ইসলামী পর্দা পালন করতেন।

হুযূর (আই.) ২০০৪ সালে তার নাইজেরিয়া সফরের একটি ঘটনার উল্লেখ করেন যে মাত্র দু’ঘন্টার সাক্ষাতের জন্য কীভাবে ৩০ হাজার নারী-পুরুষ একত্রিত হন, আর ফেরত আসার সময় তারা কীরূপ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আর যে খলীফাকে তারা কখনও চোখেও দেখেন নি তাঁর প্রতি তাদের ভালােবাসা কীভাবে আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হুযুর ঘানায় ২০০৮-এর জলসার উল্লেখ করেন। যে কীভাবে অসংখ্য আহমদী নারী-পুরুষ থাকা-খাওয়ার সমস্যা সত্ত্বেও কোনরূপ অভিযােগ-অনুযােগ না করে জলসার আধ্যাত্মিকতার স্বাদ আস্বাদনের চেষ্টা করেছেন। বুর্কিনাফসাে থেকে ৩০০জন সাইকেলারােহী ঘানার জলসায় অংশগ্রহণের জন্য ভাঙাচোরা সাইকেলে করে সাত দিনে ষােলশ’ কিলােমিটার পথ পাড়ি দেন।

শুধু আফ্রিকা-ই নয়, বরং আমেরিকা, ইউরােপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য তথা পৃথিবীর সর্বত্রই আহমদীরা খিলাফতের প্রতি তাদের আনুগত্য ও ভালােবাসার এসব দৃশ্য প্রদর্শন করে চলেছেন; এমনকি ৩/৪ বছরের শিশুদের মধ্যেও খিলাফতের প্রতি আশ্চর্যজনক ভালােবাসা দেখা যায় যা অত্যন্ত ঈর্ষণীয়। এসব ঘটনা উল্লেখের পর হুযূর বলেন, এই কয়েকটি উদাহরণ আমি এজন্য দিলাম যেন একথা স্পষ্ট হয় মানুষের মনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা আল্লাহ্ তা’লা সৃষ্টি করেন, কোন পার্থিব শক্তি এটিকে ছিনিয়ে নিতে পারে না! হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছিলেন, “তােমরা আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হতে দেখবে’; আল্লাহ্ করুন, আমাদের অধিকাংশই যেন এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হতে দেখার সৌভাগ্য লাভ করে। (আমীন)

(গত ২৯শে মে, ২০২০ তারিখে প্রদত্ত জুমুআর খুতবা থেকে নেওয়া অংশবিশেষ)

পুরো খুতবা শুনতে ক্লিক করুন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




This site is not the official site of Ahmadiyya Muslim Jamat. This site has been created by a follower of Hazrat Imam Mahdi (PBUH) only for share the message of Mahdi(pbuh)
আহমদীয়া মুসলিম জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Alislam.org