December 25, 2024, 8:47 am
শনিবার ২২ অগাস্ট ২০২০ এবং রবিবার ২৩ অগাস্ট ২০২০ লাজনা ইমাইল্লাহ হল্যান্ড (আহমদীয়া মুসলিম মহিলা অঙ্গ সংগঠন)-এর সদস্যাদের সাথে দু’টি পৃথক সভা করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান পঞ্চম খলীফা হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।
শনিবার লাজনা ইমাইল্লাহ্ হল্যান্ডের ন্যাশনাল আমেলার (কার্যনির্বাহী কমিটির) সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসের সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করেন। আর রবিবার ৩০ জনের অধিক লাজনা ইমাইল্লাহ্ ছাত্রী ও আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে নতুন যোগদানকারী সদস্যা হুযূর আকদাসের সাথে সাক্ষাতের, তাঁকে প্রশ্ন করার এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সমসাময়িক বিষয়ে তাঁর দিকনির্দেশনা চাওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে তাঁর কার্যালয় থেকে উভয় সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা ইমাইল্লাহ্র সদস্যাবৃন্দ হল্যান্ডের নুনস্পীটে অবস্থিত বায়তুন নূর মসজিদের লাজনা হল থেকে যোগদান করেন।
লাজনা ইমাইল্লাহ্ হল্যান্ডের ন্যাশনাল আমেলার সাথে সভায় লাজনা প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ বিভাগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রিপোর্ট ও ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব পেশ করার সুযোগ লাভ করেন।
হুযূর আকদাস আহমদীদের নৈতিক ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
হিজাব প্রসঙ্গে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“লাজনার সদস্যাদের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা আবশ্যক যে, হিজাব এমন একটি বিষয় নয় যার প্রচলন আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত করেছে, বরং এটি পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে লিখিত একটি আদেশ এবং মহানবী (সা.)-এর এক নির্দেশনা। … সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির উপর জোর দেয়া উচিত, তা এই যে, মহানবী (সা.) এ শিক্ষা দান করেছেন যে, মুসলমান হিসেবে শালীনতা আমাদের ঈমানের এক মৌলিক অঙ্গ।”
হুযূর আকদাস লাজনা ইমাইল্লাহ্র সেই সকল সদস্যা যাদের লেখালেখির বিষয়ে আগ্রহ বা দক্ষতা রয়েছে তাদেরকে ইসলামের শিক্ষাসমূহের সপক্ষের দলিলসমূহ ও এর কল্যাণরাজি তুলে ধরে এবং ইসলামের উপর সাধারণভাবে উত্থাপিত, এবং বিশেষ করে নারী অধিকার প্রসঙ্গে আলোচিত আপত্তিসমূহ খণ্ডন করে প্রবন্ধ রচনা করতে উৎসাহিত করেন।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“কেবল এক ব্যক্তির পক্ষেও সমাজে এমন পরিবর্তন আনা সম্ভব, যা সমাজকে আমূলভাবে ভালোর দিকে বদলে দিবে। তাই যদি শুরুতে ইসলামের সপক্ষে লেখার জন্য আপনাদের মাত্র কয়েকজন সদস্যাও থাকেন, তবে বিচলিত হবেন না। যদি আপনাদের টীম আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে কাজ করে যায়, তবে আপনারা দেখবেন যে, ইসলামের প্রকৃত ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাবলীর পক্ষে কথা বলার এ প্রয়াসে যোগদান করতে আপনাদের এ নিষ্ঠা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।”
এছাড়াও, হুযূর আকদাস লাজনা ইমাইল্লাহ্ হল্যান্ডকে মানবতার সেবায় অগ্রসর হওয়ার এবং আফ্রিকার সুবিধাবঞ্চিত গ্রামগুলোতে বিভিন্ন মানবসেবামূলক প্রকল্পের অর্থায়নে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করেন । উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে পানির পাম্প স্থাপনের বা সংস্কারের মাধ্যমে পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে গৃহিত কিছু প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন করা উচিত বলে তিনি পরামর্শ দেন। হুযূর আকদাস বলেন যে, অন্যদের এবং বিশেষত যাদের সহায়তার প্রয়োজন তাদের সেবা করাটা ইসলামী শিক্ষার এক মৌলিক অংশ।
উপরন্তু, হুযূর আকদাস লাজনা ইমাইল্লাহ্র সদস্যাদের হাজার হাজার মাস্ক তৈরি করতে উৎসাহিত করেন যেগুলো করোনাভাইরাস মহামারীকালে জনসাধারণের সেবায় নিযুক্ত স্থানীয় সেবামূলক সংস্থাকে দেয়া যায়।
সভার শেষ প্রান্তে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“সকল সময়ে সচেষ্ট থাকবেন, আপনারা যেন আপনাদের দায়িত্বের প্রতি সুবিচার করতে পারেন এবং আপনাদের ধর্মকে সমুদয় পার্থিব বিষয়াদির উপর প্রাধান্য দানের যে অঙ্গীকার আপনারা করেছেন তা পূরণ করতে পারেন। যদি আপনারা পরকালে বিশ্বাস রাখেন এবং একথা বিবেচনা করেন যে খোদাতা’লা আপনাদের উপরে সকল সময় দৃষ্টি রাখছেন তাহলে আপনারা যথাযথ প্রেরণা ও আবেগ নিয়ে কাজ করবেন। আল্লাহতা’লা আপনাদেরকে এমন করার তৌফিক দান করুন।”
নবাগত আহমদী ও ছাত্রীদের সাথে সভায়, হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করা হয়, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রতি যারা গালমন্দ ও কটু বাক্য ব্যবহারে বিরত হয় না, তাদের সাথে আহমদীদের তবলীগের (ধর্ম প্রচারের) প্রয়াস জারি রাখা উচিত কিনা।
এতে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“এমন মানুষের কাছে ধর্ম প্রচার করে যাওয়ায় কোন লাভ নেই, যারা কেবল বিতর্কই করে যায়, আর কেবল তর্কের খাতিরে তর্ক করে, বা যারা আমাদের ধর্ম বিশ্বাসকে বিদ্রূপ করে। এমন মানুষের সাথে বারবার সম্পর্ক স্থাপন করাটা সময়ের এক অপচয়মাত্র। বরং আমাদের তবলীগী প্রয়াস তাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হওয়া উচিত, যারা সভ্য ও শালীনভাবে আলোচনায় যুক্ত হন এবং যাদের মনে সত্যিকারের প্রশ্নসমূহ রয়েছে। এমন অনেক ভদ্র মানুষ রয়েছেন, আর তাই নিজেদের সময় ও শ্রমকে তাদের পিছনে বিনষ্ট করবেন না যারা আমাদের ধর্মবিশ্বাসকে বিদ্রূপ করতে চায় বা যারা প্রকৃতিগতভাবে বিদ্বেষপরায়ণ।”
হিজড়া শ্রেণীর মানুষদের অধিকার প্রসঙ্গে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“সমাজের পক্ষে নবীনদেরকে তাদের জীবতাত্ত্বিক লিঙ্গ পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করা কখনোই নৈতিকভাবে শুদ্ধ হতে পারে না। এটি ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তথাপি, এমন কিছু মানুষ আছেন যারা উভলিঙ্গ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে থাকেন। তাদেরকে সমাজের সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করা উচিত, যেন তারা যতটুকু সম্ভব সুন্দরভাবে তাদের জীবন যাপন করতে পারেন। তাদেরকে বৈষম্য এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারের হরণ থেকে রক্ষা করা উচিত।”
Leave a Reply