May 9, 2025, 12:12 am
হযরত মসীহ মাওউদ ও ইমাম মাহদী(আ.)-এর জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর জীবনের শেষ পত্রে বলেছেন, তিনি স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নবুওতের দাবী নয় বরং কুরআন শরীফের অধীনে খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ(সা.)-এর আনুগত্যে উম্মতী নবুওতের দাবী করেছেন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর লিখিত পত্র ‘আখবারে আম’ পত্রিকার সম্পাদকের কাছে প্রেরিত। পত্র লেখার তারিখ ২৩ শে মে ১৯০৮, পত্র প্রকাশের তারিখ ২৬শে মে,১৯০৮॥ “আমি সব সময় নিজের প্রকাশনার মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে এসেছি আর এখনও জানাচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে এই বলে যে অভিযোগ আরোপ করা হয়, আমি নাকি এমন এক নবুওতের দাবী করেছি যার দরুন ইসলামের সাথে আমার আর কোন সম্পর্কই থাকে না এবং যার অর্থ হল, আমি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজেকে একজন এমন নবী মনে করি যার ফলশ্রুতিতে আমার পক্ষে কুরআন শরীফকে অনুসরণ করার আর কোন প্রয়োজন থাকে না এবং আমি নিজের একটি পৃথক কলেমা বা পৃথক কিবলা বানিয়েছি অথবা ইসলামী শরীয়তকে একটি অচল বিষয় বলে ঘোষণা করেছি এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণ পরিত্যাগ করেছি-এই অভিযোগ সঠিক নয় বরং আমার সব পুস্তকে এ ধরণের নবুওত দাবী করি নি বলে আমি সব সময় লিখে এসেছি। এটি আমার বিরুদ্ধে এক স্পষ্ট অপবাদ।
পক্ষান্তরে যেভাবে আমি নিজেকে নবী বলে থাকি এর ভিত্তি হচ্ছে, আমি মহান আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করার মর্যাদা পেয়েছি। তিনি আমার সাথে ঘন ঘন কথা বলেন এবং বাক্য বিনিময় করে থাকেন আর আমার নিবেদনের উত্তর প্রদান করেন এবং অদৃশ্য বিষযের অনেক কথা আমার কাছে প্রাকাশ করেন আর ভবিষ্যতে ঘটিতব্য এমন অনেক রহস্য উন্মোচন করেন যেগুলো বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও কাছে তিনি প্রকাশ করেন না। এসব বিষযের আধিক্যের কারণে তিনি আমাকে নবী বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব আমি খোদার আদেশে একজন নবী। একথা অস্বীকার করলে আমার পাপ হবে। আর যেক্ষেত্রে খোদা তা’লা আমার নাম নবী রেখেছেন সেক্ষেত্রে আমি কীভাবে তা অস্বীকার করতে পারি! আমি একথায় দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত আছি আর জগত থেকে বিদায় না নেয়া পর্যন্ত এতে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবো। কিন্তু নিজেকে ইসলাম ধর্মের আওতামুক্ত করে অথবা ইসলাম ধর্মের কোন আদেশকে অচল ঘোষণা করে আমি নবী নই।
আমার ঘাড়ে কুরআন পরিবেশিত শরীয়তের জোয়াল বিদ্যমান। আর কুরআন শরীফের এক বিন্দু বা কণা পরিমাণ রহিত করার মত সাধ্য কারও নাই। অথএব আমার নবী হিসেবে আখ্যায়িত হবার একমাত্র কারণ হল, আরবী ও হিব্রু ভাষায় খোদার পক্ষ থেকে ইলহাম লাভ করে অধিক সংখ্যায় ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণাকারীকে ‘নবী’ বলা হয়। আধিক্য ছাড়া এই অর্থ সাব্যস্ত হতে পারে না, যেমন এক পয়সার অধিকারী ব্যক্তি ‘ধনী’ হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না। খোদা তা’লা তাঁর নিজ বাণীর মাধ্যমে আমাকে অদৃশ্য বিষয়ে অনেক জ্ঞান দান করেছেন আর আমার মাধ্যমে হাজার হাজার নিদর্শন প্রকাশ করেছেন এবং করছেন। আমি আত্মপ্রসাদে লিপ্ত না হয়ে কেবল খোদার অনুগ্রহ ও তাঁর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ঘোষণা করছি, সমস্ত বিশ্ববাসীকে যদি একদিকে দাঁড় করানো হয় আর অপরদিকে যদি আমাকে একা দাঁড় করানো হয় আর এমন কোন বিষয় যদি উপস্থাপিত হয় যা দ্বারা খোদার বান্দারা পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে, খোদা আমার সপক্ষে থাকবেন আর প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাকে বিজয় দান করবেন।
অতএব খোদা তা’লা কেবল এ কারণেই আমাকে নবী নামে স্বম্বোধন করেছেন কেননা এ যুগে আল্লাহর সাথে কথোপকথন ও বাক্যালাপের আধিক্য এবং অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞানের প্রাচুর্য্য একমাত্র আমাকেই দান করা হয়েছে। যেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষও (সত্য) স্বপ্ন দেখে থাকে আর কেউ কেউ ইলহামও পায় এবং কিছু সংমিশ্রণসহ অদৃশ্য বিষয়ে সংবাদও লাভ করে থাকে যদিও সেই ইলহাম সংখ্যায় নিতান্ত অল্প আর অদৃশ্য বিষয়ে তাদের প্রাপ্ত সংবাদের পরিমাণও কম হয়ে থাকে। এই স্বল্পতার পাশাপাশি তা সন্দেহযুক্ত এবং কলুষিত আর প্রবৃত্তির চিন্তা-চেতনার মিশ্রণযুক্ত হয়ে থাকে- সেক্ষেত্রে নির্মল বিবেকের দাবী হল, যে ব্যক্তির ওহীর ও অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান এসব কলুষ এবং দুর্বলতামুক্ত তাঁকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের সাথে এক করে না ফেলে তাঁকে যেন একটা বিশেষ নামে অভিহিত করা হয়। যাতে তাঁর সাথে অন্যান্যদের তারতম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই আল্লাহ তা’লা কেবল বিশেষ মর্যাদা প্রদানের জন্য আমাকে নবী নাম দিয়েছেন। আর এটা আমাকে একটি সম্মানসূচক উপাধী দান করা হয়েছে যেন তাদের সাথে আমার তফাতটা প্রকাশিত হয়। এই অর্থে আমি একজন নবী আবার একজন উন্মতীও বটে, যেন আমাদের সম্মানিত নেতা ও প্রেমাষ্পদ(সা.)-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয় যাতে বলা আছে, আগমনকারী মসীহ উম্মতীও হবেন আবার নবীও হবেন। তা না হলে হযরত ঈসা(আ.), যাঁর দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধে মানুষ এক মিথ্যা আশা ও কল্পিত ধারণা পোষণ করে আসছে তিনি উন্মতী হবেন কীভাবে? তিনি আকাশ থেকে নেমে কি নতুন করে মুসলমান হবেন? সে সময়ে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম কি আর খাতামুল আম্বীয়া থাকবেন না? ওয়াসসালামু আলা মানিততাবা আলহুদা, যারা হেদায়েতের পথ অনুসরণ করে চলে তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। লেখক মহাপ্রশংসিত আল্লাহ ধন্য ওলী ও আল্লাহর মার্জনা প্রত্যাশী অধম গোলাম আহমদ ২৩শে মে ১৯০৮ নিরপেক্ষ পাঠকদের বিষয়টি বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। এতে মির্যা সাহেব সারা জীবন নিজের জন্য কী ধরনের নবুওয়তের কথা বলেছেন, দাবী করেছেন এবং এই দাবী আদৌ নবী করীম(সা.)-এর খতমে নবুয়তের পরিপন্থি কি না সকল প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায়। তবে শর্ত হল, হৃদয়ে তাকওয়া থাকতে হবে।
মাওলানা সোলায়মান সুমন
Leave a Reply