November 15, 2024, 4:17 pm
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ভবিষ্যদ্বাবাণী করেছিলেন যে প্রতিশ্রুত মাহদী (আঃ)-এর ঔরসে এক পূত-পবিত্র, ধর্মপরায়ণ এবং আধ্যাত্মিক প্রতিশ্রুত পুত্র জন্ম গ্রহণ করবেন যখন ইসলাম ক্ষীয়মান এবং নিষ্প্রভ অবস্থায় উপনীত হয়ে যাবে। তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাবাণী করেছিলেন যে, তিনি ইসলামের পুনর্জাগরণ এবং ইসলামী শিক্ষার পুনরূদ্ধারের জন্য আগমন করবেন এবং তাঁর দ্বারা পৃথিবী পৃষ্ঠে ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
মহানবী (সাঃ) এই পূত-পবিত্র আধ্যাত্মিক পুত্রকে ‘মুসলেহ’(সংস্কারক) এবং ‘মাওউদ’ (প্রতিশ্রুত ব্যক্তি) বলেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে বলেছেনঃ
“ইয়াতা যভ্ভাজু ওয়া ইউলাদূ লাহু”
অর্থাৎ, প্রতিশ্রুত মসীহ্ বিয়ে করবেন এবং তার সন্তান হবে।
এটি এই দিকে ইঙ্গিত বহন করে যে, সেই বিবাহ একটি বিশেষ বিবাহ হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহতা’লা তাঁকে এমন সন্তান প্রদান করবেন যে তাঁর মিশন এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাঁর সহকারী এবং সহযোগী হবে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রসঙ্গে তাঁর কিছু বিশিষ্ট অনুসারীও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, প্রতিশ্রুত মসীহের মেয়াদকাল অতিক্রমের পর, তাঁর সন্তানদের একজনকে অনন্যসাধারণ প্রতাপ ও মহিমা প্রদান করা হবে এবং তিনি খেলাফতের মসনদে সমাসীন হবেন।
হযরত নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওয়ালী, একজন বিশিষ্ট মুসলিম সাধুব্যক্তি, তাঁর বিখ্যাত কাসীদায় (আরবি কবিতা) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ভবিষ্যতে আগত ব্যক্তি হলেন প্রতিশ্রুত মাহ্দী এবং প্রতিশ্রুত মসীহ্। তিনি আরও উল্ল্যেখ করেন যে, এই প্রতিশ্রুত জনের নাম হবে ‘আহ্মদ’ এবং যখন তাঁর কার্যকাল সমাপ্ত হবে তখন তাঁরই এক পুত্র তাঁর প্রকৃত আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হবেন এবং তাঁর মিশনের দায়িত্ব বহন করবেন।
ইহুদীদের প্রামাণ্য পুস্তক ‘তালমুদ’এ দু’জন মসীহের আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে পরবর্তীতে আগমনকারী পূর্ববর্তীর চেয়ে বড় হবেন এবং তাঁর পর তাঁরই পুত্র এবং পৌত্ররা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
আর তাই, যখন প্রতিশ্রুত মসীহ্’র সময় এলো এবং তাঁর প্রতিশ্রুত পুত্রের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে এলো, আল্লাহ্তা’লা ভবিষ্যদ্বাণীর আরও বিস্তারিত দিক প্রতিশ্রুত মসীহের নিকট প্রকাশ করলেন যার সাথে তাঁর উত্থান, অগ্রগতি এবং কৃতিত্বের সুসংবাদ সন্নিবেশিত ছিল।
হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রাঃ) জেলাবোর্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে তালীমুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় চালু হলে সেখান থেকে তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করেন। যাহোক, শিক্ষাজীবনে তিনি কখনও ধরাবাঁধা পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন না এবং তিনি স্কুল সমাপনী সরকারী এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করতে পারেননি। এটাই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ছিল যা কেবল এক ঘটনাচক্র নয় বরং ঐশী নিয়তির এক মহান অলোকসামান্য কার্যের সূচনামাত্র ছিল।
পরবর্তীকালের ঘটনাবলী প্রমাণ করে যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্তা’লা স্বয়ং তাঁর শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন।
এভাবে পৃথিবী সাক্ষ্য দিয়েছে যে তিনি কেবল স্বকীয় এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানেই পরিপূর্ণ ছিলেন না বরং মৌলিক প্রাজ্ঞতায় তাঁর অর্ন্তদৃষ্টি এতই ব্যাপক ও গভীর ছিল যে, যতই বিদ্বান পণ্ডিত, কিংবা যতই পার্থিব জ্ঞানে সমৃদ্ধ কোন ব্যক্তি যখনই ইসলামের উপর কোন আক্রমণ চালিয়াছে, তাঁর মোকাবেলায় সে কেবল নিজেকে আনাড়ি পেয়েছে।
এভাবে ঐশী ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা প্রকাশ পেয়েছেঃ
“তাঁকে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা হবে”।
প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর জীবদ্দশাতেই তাঁর মাঝে ধর্মের সেবার প্রতি গভীর অনুরাগের জন্ম হয়, এত্থেকে যখন হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ) তাঁর জীবেনর শেষ দিনগুলোতে যুবকদের ইসলামের সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান, হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রাঃ) নিজেকে সোপর্দ করেন এবং শীঘ্রই ‘আঞ্জুমানে তাশহিযুল আযহান’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর তত্ত্বাবধানে একই নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে ইসলামের তবলীগের কাজ করা হতো। প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর, সেই সময়েও, তাঁর মহামহিম লেখনী থেকে সকল সমালোচনার দৃঢ প্রত্যয়ী ও মুখ বন্ধকারী জবাব নিঃসৃত হচ্ছিল।
১৯০৮ সালের ২৬শে মে হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ) লাহোরে ইন্তেকাল করেন। সেই সময় এই প্রতিশ্রুত পুত্র তাঁর মৃত্যুশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে এই শপথ করেনঃ
“যদি সকল লোকজনও আপনাকে পরিত্যাগ করে এবং আমাকে একা ছেড়ে দেওয়া হয়, আমি আপানার পাশে থাকবো এবং সকল বিরোধিতার মোকাবিলা করবো এবং ক্ষিপ্ততার সাথে আপনার মিশনকে এগিয়ে নিয়া যাবো”।
তিনি অত্যন্ত সুচারুরূপে তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন এবং তাঁর সারা জীবন ব্যাপী, কখনও কারো শত্রুতা কিংবা বিরোধিতার পরোয়া করেননি। সর্বদা ইসলাম এবং আহ্মদীয়াতের উন্নতির লক্ষ্যে কার্যকর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
১৯১১ সালের প্রারম্ভে, হযরত আলহাজ্ব হাকীম মাওলানা নূরুদ্দীন (রাঃ) খলিফাতুল মসীহ্ আউয়াল এর অনুমতিক্রমে, তিনি ‘আঞ্জুমানে আনসারুল্লাহ্’ প্রতিষ্ঠা করেন, যার সদস্যদের ধর্মের সেবার জন্য নিজেদের কিছু সময় প্রদান করতে হতো; ইসলাম এবং আহ্মদীয়াতের প্রচার এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য, প্রীতি ও সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করাই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। এই পদক্ষেপ মিশনারী এবং সংস্কার কার্যক্রমে উৎসাহ এবং আগ্রহোদ্দীপনা সৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে সফল প্রমাণিত হলো।
১৯১২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি মিসর ভ্রমণ করেন এবং সেখান থেকে মক্কা যান এবং হজ্জ্ব পালন করেন এবং তাঁর ভ্রমণকালীন সময়ে ইসলাম ও আহ্মদীয়াতের প্রচারে সক্রিয় থাকেন।
১৯১৩ সালের জুন মাসে তিনি ‘আল্- ফজল’ প্রকাশ শুরু করেন, জামাতের একটি খবরের কাগজ, যাতে জাতীয় খবরাখবর ছাড়াও শিক্ষামুলক, তথ্যমূলক, ঐতিহাসিক, তবলীগি এবং সংস্কারমূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে থাকে। খুব স্বল্প সময়ে এই পত্রিকা কেবল নিজেদের মধ্যে নয় বরং অন্যদের মাঝেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
হযরত খলিফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর এই পত্রিকা জামাতের একটি কেন্দ্রীয় অঙ্গে পরিণত হয়।
২৭শে মে ১৯০৮ সালে, প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর ইন্তেকালের পর যখন হযরত মাওলানা হাকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) জামাতের প্রথম খলীফা নির্বাচিত হন, হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রাঃ) ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহণ করেন। হযরত খলিফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রাঃ) তাঁর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাঁকে স্নেহ ও শ্রদ্ধার সাথে দেখতেন। তাঁর অসুস্থ্যতার সময় সর্বদা তাঁকে ‘ইমামুস সালাত’ (নামাযে ইমামতি করার জন্য) নিযুক্ত করতেন এবং প্রায়শঃই তাঁর প্রকাশ্য বক্তৃতায় এবং খুতবায় তাঁর আনুগত্যের প্রেরণা, ধর্মীয় সেবা এবং বুদ্ধিবৃত্তির প্রখরতার প্রশংসা করতেন। সময় সময় প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিতেন যে তাঁর পর, তিনিই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
১৯১৪ সালের ১৩ই মার্চ শুক্রবার, হযরত খলিফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রাঃ) ইন্তেকাল করেন এবং ১৪ই মার্চ ১৯১৪ সালে, কাদিয়ানের মসজিদে নূরে আসরের নামাযের সময় আহ্মদীরা জমায়েত হন, যেখানে হযরত নওয়াব মোহাম্মদ আলী খান, যিনি একজন সাহাবী এবং প্রতিশ্রুত মসিহ্ (আঃ)-এর জামাতা ছিলেন, হযরত খলিফাতুল মসীহ্ আউয়াল(রাঃ)-এর ‘ওসীয়্যত’ পড়ে শুনান এবং লোকজনদের সেই অনুসারে অগ্রসর হওয়ার এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কাউকে নির্বাচন করার অনুরোধ করেন। এই কথার উপর, মাওলানা সৈয়দ আহসান আমরোহী হযরত সাহেবজাদা মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রাঃ)-এর নাম প্রস্তাব করেন। তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং প্রথমে প্রত্যাখান করেন, কিন্তু জনগনের ঐকান্তিক পীড়াপীড়িতে, তিনি বুঝতে পারেন যে এটা আল্লাহতা’লার রায় আর তাই তিনি আহ্মদীদের বয়’আত গ্রহণ করেন এবং এভাবে প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর দ্বিতীয় খলীফা নির্বাচিত হন।
১৪ই মার্চ ১৯১৪ থেকে ৭ই নভেম্বর ১৯৬৫, বায়ান্ন বছরের এক দীর্ঘ সময়কাল, তিনি জামা’তকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাতে বিরাট পদক্ষেপ সমূহ গৃহীত হয়েছে, যার কিছু ঝলক নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃ
তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের একটি হলো দেশের ভিতরে এবং বাইরে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের একটি শক্তিশালী কার্যপদ্ধতির প্রতিষ্ঠা। খিলাফতের মসনদে সমাসীন হওয়ার পরপরই তিনি ঘোষণা করেন যে, তাঁর প্রথম কাজ হবে ইসলামের প্রচার। তাঁর আদেশ অনুসারে ১৯১৪ সালের ১২ই এপ্রিল সারাদেশ থেকে প্রতিনিধিদের এক মজলিসে শুরায় আহ্বান করা হয় যেন তাতে ইসলামের তবলীগের বিষয়ে আলোচনা করা যায়। সেখানে তিনি তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন যে, জামাতের সদস্যদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতে হবে যারা বিভিন্ন ভাষা জানবেন, যেন তারা সহজে দুনিয়াব্যাপী ইসলামের তবলীগ করতে পারেন।
তিনি গুরূত্বারূপ করেনঃ
“আমি দেখতে চাই যে আহ্মদীয়াতের সত্যতার আলো বিশ্বের দূর-দূরান্ত ব্যাপী দ্বীপ্তিমান হচ্ছে। এটি আমাদের প্রভূর পক্ষে বাস্তবায়ন করা মোটেই কঠিন কোন কাজ নয়”।
তিনি এই কার্যসাধনের লক্ষ্যে ১৯১৯ সালে ‘নাযারতে দাওয়াত ও তবলীগ’ এবং ‘মাদ্রাসা আহ্মদীয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল এ কাজের মূল কেন্দ্র। তিনি এর অগ্রগতির নিমিত্তে প্রচেষ্টা চালান এবং একে একটি ধর্মীয় শিক্ষালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে উপনীত করেন এবং এসব উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল প্রশিক্ষিত ধর্মপ্রচারকের সংস্থান করা। তিনি ইসলামের প্রচারের জন্য বিদেশে অনেক মিশন খোলেন। তাঁর ইন্তেকালের সময় পর্যন্ত ৪৬টি ইসলামিক দেশে দৃঢ়ভাবে মিশন প্রতিষ্ঠত হয়েছিল এবং সেখানে আজ পর্যন্ত কর্মক্ষম বিশ্বস্ত জামা’ত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
আল্লাহ্তা’লা তাঁকে পবিত্র কুরআনের গভীর আভিধানিক অর্ন্তনিহিত আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও বুৎপত্তি প্রদান করেছিলেন।
আর এভাবে ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয় যে তাঁর মাধ্যমে ইসলামের গৌরব এবং কুরআনের মর্যাদা সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন,
“শত শত এমনকি হাজারো হাজারো কুরআনের এমন সত্যিকার বাস্তব রহস্য আল্লাহ্তা’লা বিশেষ অনুগ্রহে ওহী ও ইলহামের মাধ্যমে তাঁর নিকট প্রকাশ করেছেন”। (তফসীর এ কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৪৮৩)
তিনি এটিও ঘোষণাও করেন যে, তাঁকে পবিত্র কুরআনের এমন অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি, যত জ্ঞানের অধিকারীই হোক এবং যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, যদি পবিত্র কুরআনের সমালোচনা করে, তাহলে আল্লাহ্তা’লার ফযলে, যথাযথ যুক্তির মাধ্যমে তার মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে এবং তাকে কেবল কুরআনের দ্বারাই সন্তোষজনক জবাব দেয়া হবে।
তিনি বহুবার কুরআনের তত্ত্বজ্ঞানের তফসীর লেখার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করার জন্য চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। যদিও তিনি নবী ছিলেন না, তথাপি কেহ তাঁর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি হননি। তাঁর এটা দাবী ছিল যে, তিনি পবিত্র কুরআনের অভিনব প্রজ্ঞাপূর্ণ তফসীর করবেন যা অতুলনীয় হবে।
১৯৪৪ সালে দিল্লীতে এক প্রকাশ্য জনসভায় তিনি নিজেকে ‘মুসলেহ মাওউদ’ (প্রতিশ্রুত সংস্কারক) হওয়ার দাবী করেন এবং পবিত্র কুরআনের সত্যতা ও তত্ত্বজ্ঞানের তফসীরের বিষয়ে তাঁর চ্যালেঞ্জকে পুনরায় উল্ল্যেখ করে ঘোষণা করেনঃ
“আমি পুনরায় দাবীর সাথে বলছি যে, যদি হাজারো পণ্ডিত ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরআনের তফসীর করার ব্যাপারে আমার সাথে মোকাবিলা করে, তদাপি দুনিয়া এটা গ্রহণ ও স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে আমার তফসীরই গভীর ঐশী সত্যতার এবং প্রজ্ঞায় অনন্য।”
এ দাবীর সত্যতাই প্রমাণিত হয় যখন তফসীরে কবীর রচনার মধ্য দিয়ে ‘কুর’আনের জ্ঞান’-বিষয়টিই যেন নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হল। পবিত্র কুরআনের প্রাজ্ঞতার অভিনব সংজ্ঞার্থ যা ‘তাফসিরে কবীরে’ লিখিত রয়েছে, তা এক দূরদর্শীদাবীর সত্যতা এবং যথার্থতার এক অবিসংবাদিত সাক্ষ্য প্রমাণ বহন করছে। বর্তমান যুগ পবিত্র কুরআনের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে প্রত্যয়ী হয়েছে।
লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক জমিন্দার” পত্রিকার সম্পাদক, মৌলভী জাফর আলী খান, যিনি একজন প্রখ্যাত মুসলিম নেতা, লেখক এবং আহ্মদীয়াতের কট্টর বিরূদ্ধবাদী ছিলেন, তিনি অন্যান্য বিরোধীদের বলতে গিয়ে বলেনঃ
“তোমরা কান খুলে শুন, তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা কিয়ামত পর্যন্ত মির্যা মাহমুদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। মির্যা মাহমুদের সাথে কুরআন রয়েছে এবং তার আছে কুরআনের এক গভীর জ্ঞান; তোমাদের নিকট কি আছে? তোমরা স্বপ্নেও কুরআন পড়ো না”। (এক খউফনাক সা’যিশ, মৌলভী মাযহার আলী আযহার, পৃঃ ১৯৬)
তাঁর মৃত্যুতে, লৌক্ষ্ণূর ‘সিদ্ক –এ- জাদীদ’ এ প্রকাশিত এক শোকবাণীতে উল্ল্যেখ করা হয়ঃ
“আল্লাহতা’লা আহ্মদীয়া জামাতের ইমামের দুনিয়াব্যাপী পবিত্র কুরআনের প্রকাশনার প্রচেষ্টাকে, তাঁর প্রজ্ঞাকে এবং পৃথিবীর সকল প্রান্তে ইসলামের বিস্তারের জন্য পুরষ্কৃত করুন এবং এই বিষয়গুলো ছাড়া চলুন আমরা অন্যান্য কিছুকে উপেক্ষা করি। পরিশিলিত উপায়ে তিনি যে পবিত্র কুরআনের সত্যতা এবং প্রজ্ঞার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তা অনন্যসাধারণ। (‘সিদ্ক –এ- জাদীদ’, লৌক্ষ্ণু, ৫১তম খণ্ড, পৃঃ ১৮ই নভে, ১৯৬৫)
তাঁর মহৎ কৃতিত্ব সমুহের মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ এবং প্রকাশনা উল্লেখের দাবী রাখে। যারা আরবী জানেনা, পবিত্র কুরআনের ঐশী জ্ঞান ও মহিমা তাদের নিকট তাদের নিজ ভাষায় পৌঁছানোই এর উদ্দেশ্য। এই কাজ তৃতীয় এবং চতুর্থ খেলাফতের সময়েও অব্যাহত থাকে। সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করা হয় এবং এরপর তার তফসীর। তাঁর খিলাফত কালে ১৪টি ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ অগ্রসরমান ছিল।
আহ্মদীয়া জামাতের প্রধান লক্ষ্য ছিল মহানবী হযরত মহাম্মদ (সাঃ)-এর শিক্ষার প্রসার এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে মানবজাতিকে আধ্যাত্মিকতা এবং পবিত্রতার উচ্চ মার্গে উপনীত করা। এই লক্ষ্য অর্জনে, যেখানেই জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানেই মিশন এবং মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদ আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিক্ষার এবং প্রশিক্ষণেরও কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। তাঁর খিলাফতকালে বহির্বশ্বেও বহু মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
মিশনারী কার্যক্রমের সাথে সাথে তিনি জামাতের নৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালান। এক্ষেত্রে তাঁর কিছু সাফল্য নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
তিনি খেলাফতের ঐশী ব্যবস্থাকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ঘোষণা করেন,
“খিলাফত ঐশী আলোর উৎস এবং এক আলোকবর্তিকা সুতরাং খিলাফতকে আঁকড়ে থাক”
পুনরায় তিনি ঘোষণা করেনঃ
“বন্ধুরা, আমার শেষ উপদেশ এই যে, সকল অনুগ্রহ খেলাফতের মাঝে নিহিত। নবুয়ত হল একটি বীজ যার পর খিলাফত এর কল্যাণকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করে। আল্লাহ্তা’লা আপনাদের উপর অনুগ্রহ করুন এবং আপনাদের এই দুনিয়ায় এবং আখেরাতের কল্যাণ দান করুন”।
জামা’তের ভিত্তিকে দৃঢ় ও সুসংগঠিত করতে তিনি কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক আঞ্জুমান গঠন করেন এবং অধিকতর সুষ্ঠু কার্য সাধনের লক্ষ্যে সদর আঞ্জুমান আহ্মদীয়া কাদিয়ানের অধীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেনঃ
ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে সুযোগ্য করে গড়ে তুলার জন্যে জামাতের মাঝে পৃথক পৃথক অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়ঃ
এসব সংগঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নৈতিক এবং সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের সুদৃঢ় ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৪৭ সালে যখন দেশ বিভক্তি হয়, অন্যান্য মুসলমানদের সাথে আহ্মদীরাও পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে হিজরত করে। জামাতের একতা, অখণ্ডতা এবং সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত রাখার লক্ষ্যে ‘রাবওয়া’ নামক একটি বড় শহরের পত্তন করা হয়, যেখানে কার্যালয় সমূহ, স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন বিভাগের পুনস্থাপন এবং পুনর্গঠন করা হয়। জীবনধারণের সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদিও সহজলভ্য করা হয়। হযরত মুসলেহ মাওউদ (রাঃ) নিজে রাবোয়া সম্পর্কে বলেনঃ
“আমি আশ্চর্যান্বিত হই যে, কোন সেই শক্তি ছিল যে আপনাদের এখানে নিয়ে আসে এবং বসতি স্থাপন করায়, যেখানে সরকারও বসতি স্থাপনে অকৃতকার্য হয়। রাবওয়াকে দেখে সেই সময়ের কথা স্মরণ হয়, যখন আল্লাহতা’লা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ) এর দ্বারা পুনরায় মক্কার ভিত্তি রেখেছিলেন। (আল-ফযল, ২৬ নভেম্বর, ১৯৬১)
হযরত মুসলেহ মাওউদ (রাঃ) জামাতের অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনর্গঠন এবং সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন স্কীমের সূচনা করেন এবং অনুদান ও বাধ্যতামূলক চাঁদা প্রদানের আহ্বান জানান। তার কিছু নিম্নে বর্ণিত হলোঃ
এই গুরুত্বপূর্ণ স্কীমের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বহু আহ্মদীয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘মজলিস–এ-আহরার’ ১৯৩৪ সালে একটি সুদূরপ্রসারিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার কিছু সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীকে গোলযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্য একটি সম্মেলন করার জন্য কাদিয়ানে পাঠায় এবং প্রচন্ড তর্জন গর্জন এবং ডামাডোলের মাধ্যমে ঘোষণা করে যে তারা খোদ কাদিয়ানকে মাটিতে মিশিয়ে দিবে। দেশের অন্যান্য অংশের পরিবেশকেও জামাতের বিরূদ্ধে বিষিয়ে তোলা হয়। এমনকি সরকার ও এসব কুচক্রীদের সমর্থন যোগায়। মনে হচ্ছিল সমস্ত শক্তিসমূহ জামাতের বিরূদ্ধে একত্রিত হয়েছে।
কিন্তু, এ পবিত্র জামা’তের ভিত্তি আসমানের খোদা স্বয়ং রেখেছেন, বিরোধিতার তীব্র, অন্তর্ভেদী ঝড়ো হাওয়ার মুখে, যেন স্বয়ং খোদার হাতে আহ্মদীয়াতের দীন ও দুর্বল চারাগাছটির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
যখন ‘মজলিসে আহরার’ এর দূরভিসন্ধি প্রকাশিত হলো তখন আল্লাহতা’লা তাঁর মনোনীত সেবকের মাধ্যমে এক বিশ্ব জনীন স্কীম ‘তাহরীকে জাদীদ’ চালু করলেন। যা কেবল বিরোধীদের পরিকল্পনাকেই নস্যাত করলো না বরং খুবই অল্প সময়ে আহ্মদীয়াতের সত্যতা সুস্পষ্ট হলো এবং এর আধ্যাত্মিক বিজয়ের ঝাণ্ডা সুউচ্চে উন্নীত হলো এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হলো।
এই স্কীমটি ২৭ দফার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং এতে সমন্বিত ও সর্বজনগ্রাহ্য এমন অনুবিধির অন্তর্ভূক্তি ছিল যা জামাতের সকল সদস্যদের মাঝে এই প্রত্যয়ের জন্ম দেয় যে আল্লাহ্তা’লার একত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে এবং মহানবী (সাঃ)-এর মর্যাদাকে পুনরূদ্ধার করতে হলে এবং ইসলামের সত্যতাকে প্রমাণ করতে হলে এবং একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, আমাদেরকে সর্বপ্রথম নিজেদের জীবনে ও আচরণে একটি বোধগম্য এবং সুস্পষ্ট পরিবর্তন আনতে হবে।
হযরত মুসলেহ মাওউদ (রাঃ) প্রথমে জামা’ত থেকে ২৭,৫০০ রূপীর তাহরীক করলেন। জামা’ত মাত্র দেড় মাসে নগদ ২৯,৭১২ রূপী আদায় করে দিল এবং প্রথম বছরে ১,০৩,০০০ রূপী এবং দ্বিতীয় বছরে ১,৪০,০০০ রূপী প্রদান করা হয়।
শুরুতে এই স্কীমটি ঐচ্ছিক এবং তিন বছরের জন্য ছিল। পরবর্তীতে এটিকে সাত বছরে এবং পুনরায় দশ বছরে উন্নীত করা হয়। দশ বছর পূর্ণ হওয়ার পর হুযূর এই স্কীমকে ১৯ বছরের জন্য বর্ধিত করেন এবং ১৯৫৩ সালে ১৯ বছরের মেয়াদ পুর্ণ হলে হুযূর একে স্থায়ী স্কীমে পরিণত করেন।
এই স্কীমের অধীনে প্রচারের কাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে।
এমনি ভাবে ওয়াকফে জাদীদ স্কীমটি চালু করা হয়েছিল ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে উপমহাদেশে অবস্থিত প্রতিটি ছোট বড় শহরের এবং গ্রামের জামাতে তালীম, তরবীয়ত ও তবলীগের কাজকে প্রসারতা দান করার জন্য। ১৯৫৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর এই স্কীমের সূচনা করা হয়।
হযরত খলিফাতুল মসীহ্ সানী(রাঃ) তাঁর স্কন্ধে ন্যাস্ত খেলাফতের গুরু দায়িত্বভার সত্বেও দু’বার ইউরোপ সফর করেন।
প্রথম ১৯২৪ সালে, ওয়েম্বলী সম্মেলনে যোগদানের জন্য ১২ জন সাথী নিয়ে তিনি সফর করেন, পথিমধ্যে তিনি দামেষ্কে যাত্রা বিরতি করেন, অতঃপর প্যালেস্টাইন এবং মিসরে স্বল্পবিরতি নেন এবং পরিশেষে ইতালী ও ফ্রান্স হয়ে ইংল্যান্ড পৌঁছেন। ইতালীতে তিনি মুসোলিনি’র সাথে সাক্ষাত করেন। লন্ডন পৌঁছলে তাঁর সফর সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। অনেক সংবাদ মাধ্যম তাঁর ছবিও ছাপায় এবং ব্রিটিশরা হুযূরকে অসাধারণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে স্বাগত জানায়।
২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯২৪, হযরত চৌধুরী মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান সম্মেলনে হুযূরের সন্দর্ভ পাঠ করেন, যা ‘আহ্মদীয়াত সত্যিকারের ইসলাম’ শিরোনামে একটি পুস্তক আকারে ছাপা হয়।
প্রবন্ধ পাঠ সমাপ্ত হলে সম্মেলন হল তুমুল উল্লাস ও হর্ষ ধ্বনিতে আলোড়িত হয়। সম্মেলনের সভাপতি উচ্চকন্ঠে প্রবন্ধটির সফলতার প্রশংসা করেন।
ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে, তিনি ১৯শে অক্টোবর ১৯২৪ সালে তিনি আহ্মদীয়া মসজিদে ফযল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ উপলক্ষ্যে অভিজাত ব্রিটিশরা সহ, বিশিষ্ট নাগরিকগণ, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত এবং জাপান, সিরিয়া, চকোস্লাভিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, আমেরিকা, ইতালী, অষ্ট্রেলিয়া এবং হাংগেরীর কূটনৈতিক এবং অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাগণও অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বারের মতো হুযূর ১৯৫৫ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপ সফর করেন।
এই সফরে হুযূর দামেস্ক এবং লেবানের হয়ে যান এবং জেনেভা পরিদর্শন করেন, অতপর জুরিখ, হামবুর্গ এবং হেগ হয়ে লন্ডন পৌঁছেন।
হুযূরের এ সফর মূলতঃ সেই অসুস্থ্যতার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ছিল যাতে তিনি তাঁর প্রাণ হরণের লক্ষ্যে পরিচালনা করা আক্রমণের পর থেকে ভুগছিলেন। কিন্তু অসুস্থ্যতা সত্ত্বেও হুযূর ইউরোপে বহু মিশনের উদ্বোধন করেন। যেখানেই তিনি গিয়েছেন সেখানেই তিনি লোকজনের সাথে ব্যক্তিগত এবং সম্মিলিত ভাবে সাক্ষাত করেছেন। দামেষ্কে তিনি আরবীতে জুম’আর খুতবা দেন এবং ইউরোপিয়ান দেশসমূহে ইংরেজীতে।
লন্ডনে অবস্থানকালে হুযূর বহির্বিশ্বে কর্মরত সকল মিশনারীদের এক ঐতিহাসিক সম্মেলনে আহবান করেন।
এ সম্মেলন ২২, ২৩ ও ২৪শে জুলাই ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে হুযূর জরুরী তবলীগি, প্রকাশনা এবং পবিত্র কুরআনের অনুবাদের কর্মকান্ড প্রসার, মসজিদ নির্মাণ, নতুন মিশনারীদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন। হুযূর স্বয়ং সকল অধিবেশনে যোগদান করেন। এই সফর ছয় মাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
দীর্ঘ ৫২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত খিলাফতকালে তাঁর আরও অনেক কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন বিদ্যমান।
তিনি মুসলমানদের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দেন বিশেষত কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সময়, তিনি তফসিলি শ্রেণী এবং হরিজনদের প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং মালকানায় ‘শুদ্ধি’ অভিযানের মোকাবিলা করেন।
‘সাইমন কমিশন’ এবং ‘গোলটেবিল বৈঠকে’র সময় তিনি তাঁর লেখনী এবং বক্তৃতার মাধ্যমে জাতিকে দিকনির্দশনা দেন।
আন্তঃসামাজিক শান্তি, সমঝোতা এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি রীতিমত এবং সর্বদা পালনের জন্য ‘ধর্মপ্রবর্তক দিবস’ এর ভিত্তি রাখেন, যেখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বক্তাগন আমন্ত্রিত হয়ে একই মঞ্চ থেকে তাদের নিজেদের ধর্মের প্রবর্তক এবং তাঁর শিক্ষাবলীর উপর আলোকপাত করতে পারেন।
তাঁর খিলাফতের প্রথম বছর তিনি একটি পুস্তক লিখেন ‘হাকীকাতুল নবুয়ত’ যাতে তিনি বলেনঃ
“অজ্ঞরা আমাদের অপবাদ দেয় যে প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ) কে একজন নবী হিসেবে মান্য করে আমরা ইসলামের মহানবী (সাঃ) কে অবমাননা করেছি। তাঁরা কারও হৃদয়ের অবস্থা সম্পর্কে কিই বা জানে? তারা কিভাবে পরিমাপ করবে, মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি আমরা কত অগাধ ভালোবাসা, গভীর মমতা এবং তীক্ষ্ণ শ্রদ্ধা আমাদের হৃদয়ে ধারণ করি এবং তারা এটা কেমন করে উপলব্ধি করবে যে মহানবী (সাঃ) এর ভালোবাসা আমার হৃদয়ের কত গভীরে প্রোত্থিত। তিনি আমার জীবন, আমার হৃদপিন্ড, আমার স্পৃহা। তাঁর গোলামীতে আমার সম্মান নিহিত এবং তাঁর পাদুকা বহন করা আমার নিকট রাজসিংহাসনের অধিক আদরনীয়। তাঁর গৃহে ঝাড়ু দেওয়ার তুলনায় সাতটি মহাদেশ নিয়ন্ত্রণ করা কোনই গুরুত্ব রাখে না। তিনি মহা প্রতিপালকের প্রিয়তম- তাহলে কেনই বা তাঁকে আমি ভালোবাসবো না? তিনি আল্লাহতা’লার ঘনিষ্টতম – তাহলে কেন আমি তাঁর ঘনিষ্টতার অনুসন্ধানী হবো না? আমার মানসিক অবস্থা হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ)-এর পংক্তিতে উল্লেখিত মনোভাবের সাথে খাপ খায়ঃ
“আল্লাহ্র পরে মোহাম্মদের প্রেমে বিভোর আমি,
মিথ্যা হয় যদি এটি, আল্লাহ্র কসম সবচেয়ে বড় অবিশ্বাসী আমি।”
কেবল মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি ভালোবাসাই আমাকে এই বিশ্বাসকে খণ্ডন করেত বাধ্য করে যে নবুয়তের দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা মহানবী(সাঃ)-এর প্রতি অবমাননা এবং দোষারোপ”।
“আল্লাহতা’লা মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি অনুগ্রহবারি বর্ষণ করতে থাকেন এবং তাঁর ফিরিশ্তারা তাঁর জন্য দোয়া করতে থাকে। হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরাও তাঁর প্রতি আল্লাহ্তা’লার অনুগ্রহবারি বর্ষণের দোয়া করতে থাকো এবং তাঁর প্রতি শান্তির বাণীর দ্বারা শান্তি বার্তা প্রেরণ করতে থাকো”। (কুরআনঃ ৩৩:৫৭)
Leave a Reply