November 19, 2024, 11:21 am
নিখিলবিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের খলীফা সৈয়্যদানা হযরত আমীরুল মুমিনীন খলীফাতুল মসীহ্ আল-খামেস (আই.) গত ২৮ আগস্ট ২০২০ ইসলামাবাদ, টিলফোর্ডের মসজিদে মোবারক থেকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় মুহররম মাসের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর প্রেরিত ন্যায়বিচারক ও সঠিক মীমাংসাকারী ইমাম মাহদী (আ.) কিভাবে খুলাফায়ে রাশেদীন ও আহলে বাইতকে কেন্দ্র করে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যকার মতভেদের মীমাংসা করেছেন তা তুলে ধরেন।
হুযূর (আই.) তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর বলেন, এই যুগে আল্লাহ্ তা’লা নিজ প্রতিশ্রুতি অনুসারে মহানবী (সা.)-এর দাসত্বে যুগের ইমাম প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী (আ.)-কে হাকাম ও আদাল অর্থাৎ ন্যায়বিচারক ও সঠিক মীমাংসাকারীরূপে প্রেরণ করেছেন, যেমনটি আল্লাহ্ তা’লা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং মহানবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি এসে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার আলোকে সব মুসলমানদের এক উম্মতে পরিণত করার কথা; বিভিন্ন দল ও ফির্কার মধ্যে প্রচলিত অপব্যাখ্যা ও বিভেদ দূর করার কথা। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের প্রত্যেক ফির্কা থেকেই যারা বিভিন্ন ফির্কার মধ্যকার বিভেদ ও অনৈক্য দেখে ব্যথিত ছিল, তারা যুক্তি, বুদ্ধি ও দোয়ার মাধ্যমে যাচাই করে সত্য জামাত চিনতে পেরেছে ও আহমদীয়াত গ্রহণ করেছে।
আহমদীয়া জামা’ত কোন ফির্কার মতবাদ বা বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত জামা’ত নয়, বরং এই জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) তো বিভিন্ন ফির্কার মধ্যকার মতভেদ দূর করে মুসলমানদেরকে ‘উম্মতে ওয়াহেদা’-তে পরিণত করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন; আল্লাহ্ তা’লা ইলহামের মাধ্যমে তাকে এই নির্দেশই প্রদান করেছেন। আর আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় বিগত ১৩০ বছর ধরে আহমদীয়া জামাত এই কাজটিই পালন করে আসছে; ইমাম মাহদী (আ.)-এর তিরোধানের পর প্রতিষ্ঠিত খিলাফতও বিগত ১১২ বছর ধরে এই কাজ সম্পাদন করে আসছে; আর শুধু মুসলমানদেরই নয়, বরং অমুসলিমদের সামনেও ইসলামের অনিন্দ্য-সুন্দর শিক্ষা তুলে ধরে তাদেরকে ইসলামের পতাকাতলে একত্রিত করার চেষ্টায় ব্যাপৃত রয়েছে।
তা সত্ত্বেও আহমদীয়াত অন্য মুসলমানদের পক্ষ থেকে চরম বিরোধিতা, নির্যাতন ও অকথ্য গালিগালাজের শিকার হয়; কিন্তু তবুও আমরা সবসময় শান্তি, সম্প্রীতি ও দোয়ার বার্তাই দিয়ে এসেছি, কখনোই আমাদের পক্ষ থেকে লড়াই-ঝগড়া বা গালিগালাজ করা হয় নি। যত বিরোধিতাই হোক, আমরা তো যুগ-ইমামের বাণী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে পৌঁছে যাবই; কিন্তু সাধারণ সত্যসন্ধানী মুসলমানরা, যারা ইসলামের জন্য দরদ রাখেন এবং বিভেদ-বিশৃঙ্খলা দূর করতে চান তাদের এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হওয়া দরকার। হুযূর বলেন, এখন আমরা মুহররম মাস অতিবাহিত করছি যা হিজরি সনের প্রথম মাস। ইংরেজি নববর্ষে সবাই একে অপরকে শুভেচ্ছা ও শান্তির বার্তা দেয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল ইসলাম শান্তির ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও মুহররম মাসে অনেক মুসলিম-প্রধান দেশে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়; নেপথ্যে সেই ফির্কাগত বিভেদ!
মহানবী (সা.) মুসলমানদের মধ্যে এই বিভেদের বিষয়ে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছেন, তেমনি এই বিভেদ দূর করার জন্য ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত’-এরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আগমনের পর পূর্ণ হয়েছে। সাধারণ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে হুযূর বলেন, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সবগুলো লক্ষ্মণ যেখানে পূর্ণ হয়েছে বা হচ্ছে, তবে কেন আমরা সেই ‘হাকাম’ ও ‘আদাল’কে সন্ধান করছি না যিনি শিয়া-সুন্নীসহ সকল ফির্কার বিভেদ দূর করে উম্মতকে এক উম্মতে পরিণত করবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে? আমরা আহমদীরা দাবীর সাথে বলছি, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-ই আল্লাহর প্রেরিত সেই প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও মাহদী এবং তার মাধ্যমেই ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করার ও উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু হয়েছে ও চলমান রয়েছে। যে খিলাফতকে কেন্দ্র করে মুহররম মাসের শোকাবহ ঘটনা ঘটেছিল ও উম্মতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল, আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুত সেই খিলাফতের মাধ্যমেই ইসলাম পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হবে।
তাই এই মাসটিকে কেবল শোক এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ ও ঘৃণার উপলক্ষ্য বানানোর পরিবর্তে পারস্পরিক শান্তি, সম্প্রীতি ও ভালবাসার উপলক্ষ্য বানানো উচিত। এই মাসে আমাদের বেশি করে সঠিক ইসলামী শিক্ষা পালন করা উচিত এবং সেই হাকাম ও আদালের অনুসরণ করা উচিত, যিনি ইসলামের পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। হুযূর (আই.) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন যা তিনি একজন আলেমের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন এবং তার অবস্থান যে আর দশজন আলেমের মত নয়, বরং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করার ও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার ঐশী দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত সেটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি (আ.) জোরের সাথে একথা বলেছেন, শতধা-বিভক্ত ও দলাদলিতে মত্ত উম্মত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে গ্রহণ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন ও মুসলমান হতে পারে না, যতক্ষণ না হযরত আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)-এর আদর্শ নিজের মধ্যে ধারণ করেন; হুযূর (আই.) বলেন, এটা হল আহমদীয়া জামাতের বিশ্বাস তারা সকলেই আমাদের জন্য আদর্শ।
এমতাবস্থায় আহমদীয়া জামাত-ই কি সেই অনন্য জামাত নয়, যারা সবার মধ্যকার বিদ্বেষ দূর করে তাদেরকে ঐক্যের সুতোয় বাঁধতে পারে?
হুযূর (আই.) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর পুস্তক ‘সিররুল খিলাফা’ থেকে বেশ কিছু উদ্ধৃতি উপস্থাপন করেন এবং শিয়াদের পক্ষ থেকে যে হযরত আবু বকর সিদ্দীকসহ প্রথম তিনজন খলীফার অমর্যাদা ও তাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শিত হয়, তার প্রত্যুত্তরে খুলাফায়ে রাশেদীনদের যে অত্যুচ্চ ও অতুলনীয় মর্যাদা তিনি (আ.) বর্ণনা করেছেন তা তুলে ধরেন। তিনি (আ.) হযরত আবু বকর (রা.) সম্পর্কে লিখেছেন যে তিনি সর্বদা মহানবী (সা.)-এর ছায়ায় চলেছেন ও থেকেছেন; তিনি ইসলামের জন্য দ্বিতীয় আদমস্বরূপ ছিলেন। তিনি (আ.) আরও বলেছেন, যদি মহানবী (সা.)-এর তিরোধানকালে হযরত আবু বকর না থাকতেন, তবে ইসলামও হয়তো হারিয়ে যেতো; কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার অপার কৃপা যে তিনি হযরত আবু বকরকে সেই কঠিন সময়ে দাঁড় করিয়েছেন এবং তার মাধ্যমে পতনোন্মুখ ইসলামকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন ও শত্রুদেরকে পরাভূত করেছেন। আর আয়াতে ইস্তেখলাফে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিতে আল্লাহ্র প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের মাধ্যমে যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা তার সুস্পষ্ট প্রমাণ হল হযরত সিদ্দীকের খিলাফত।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) হযরত উমর ফারুক (রা.) ও যুন্নুরাঈন হযরত উসমান (রা.)-এর অতুলনীয় মর্যাদা, ইসলাম-সেবা ও ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের কথাও এই পুস্তকে তুলে ধরেছেন, যার অংশবিশেষ হুযূর (আই.) উদ্ধৃত করেন। তিনি (আ.) হযরত আলী (রা.)-এর অতুলনীয় মর্যাদা ও ইসলাম-সেবার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে হযরত আলী (রা.) আল্লাহর সিংহ ছিলেন; বীরত্বের সাথে বিনয়ের এক আশ্চর্য মিশ্রণ ছিলেন তিনি। তিনি (আ.) শিয়াদের কথার খণ্ডন করতে গিয়ে বলেছেন, নিঃসন্দেহে হযরত আলী (রা.) অতুলনীয় আদর্শ ছিলেন, কিন্তু তার খিলাফতকালে বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, বিভেদের সৃষ্টি হয়েছিল।
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) হযরত আলী সম্পর্কে যা বলেছেন, তাত্থেকে এই বিষয়টি একেবারে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় অবশ্যই আলী (রা.) সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, কিন্তু এটিও সত্য যে প্রথম তিন খলীফাও অবশ্যই সত্য খলীফা ছিলেন।
হুযূর (আই.) বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) আমাদেরকে তাদের যে মর্যাদা শিখিয়েছেন, সেটি প্রদান করলেই আমরা খাঁটি মুসলমান হতে পারব, নতুবা নয়। আর যদি তা না করি, তবে উম্মতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে; আর এই বিভেদের ফলে ইসলামের তো কোন লাভ হবে না, তবে ইসলামের শত্রুদের অবশ্যই লাভ হবে এবং তা হচ্ছেও!
হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) সিররুল খিলাফা পুস্তকে তার একটি জাগ্রত অবস্থার দিব্যদর্শনের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন, যাতে তিনি মহানবী (সা.), হযরত আলী, ইমাম হাসান ও হুসায়ন (রা.) এবং হযরত ফাতেমা (রা.)-এর সাথে সাক্ষাতের উল্লেখ করেছেন। হযরত আলী (রা.) তাকে নিজের একটি তফসীর উপহার দেন এবং হযরত ফাতেমা (রা.) মমতাময়ী মায়ের মত তার প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করেন; হযরত হাসান ও হুসায়ন (রা.)-ও তার প্রতি ভ্রাতৃসুলভ ভালবাসা প্রদর্শন করেন। এভাবে আহলে বাইতের প্রতি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। তবে এই ভালবাসা কেবল তার লেখনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং কার্যতঃ আহলে বাইতের প্রতি তার গভীর ভালবাসা বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। একবার আশুরার দিন তিনি (আ.) বাগানে বসে তার স্নেহের পুত্র-কন্যা সাহেবযাদি মোবারকা বেগম সাহেবা ও সাহেবযাদা মির্যা মোবারক আহমদ সাহেবকে ডেকে মুহররমের ঘটনাবলী শোনান। ইমাম হুসায়নের শাহাদাতের করুণ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছিল।
তিনি (আ.) ইয়াযিদ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন যে সে এক নোংরা-হৃদয় ব্যক্তি ছিল। এছাড়া একবার যখন তিনি (আ.) জানতে পারেন যে কোন এক শিয়ার উদ্ধত বাক্যের বিপরীতে একজন আহমদী না জেনে-বুঝে ইমাম হুসায়ন সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে যে হুসায়ন (রা.) কার্যতঃ খলীফার বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন তখন অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং খুব কঠোর ভাষায় এই ভ্রান্তির অপনোদন করেন। শিয়া এবং সুন্নীরা যেখানে যেখানে সীমালঙ্ঘন করেছে, তিনি (আ.) তাদের সংশোধন করতে বলেছেন; আর এটিই ন্যায়বিচারকের কাজ। হাকাম ও আদাল হিসেবে আল্লাহ্ প্রদত্ত দায়িত্ব তিনি যথার্থরূপে পালন করেছেন।
খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) বলেন, আমাদের উচিত মুহররম মাস উপলক্ষ্যেও এবং পাকিস্তান ও আরও বিভিন্ন স্থানে আহমদীয়াতের বিরোধিতা যে তীব্র আকার ধারণ করেছে সেটিকেও দৃষ্টিপটে রেখে অনেক বেশি দোয়া করা এবং অধিক হারে দরূদ শরীফ পাঠ করা। আমরা যতই আল্লাহ্র দরবারে বিনত হব, আল্লাহ্ তা’লা তত দ্রুত আমাদেরকে বিজয় দান করবেন, সাফল্যম-িত করবেন।
হুযূর আরও বলেন, এই দিনগুলোতে অ-আহমদী মুসলমানদের জন্যও বিশেষভাবে দোয়া করুন, কিছু মুসলমান ফির্কা অন্য ফির্কার মুসলমানদের হত্যা করতে উৎসুক হয়ে থাকে এবং মুহররম মাসে বিভিন্ন স্থানে শিয়াদের তাজিয়া মিছিল ইত্যাদিতে আক্রমণ হয়, ইসলামের দোহাই দিয়েই এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে শহীদ করে; আল্লাহ্ তা’লা মুসলমানদের বিবেক-বুদ্ধি দিন এবং অন্ততপক্ষে এই বছর যেন এমন কোন দুঃসংবাদ না পাওয়া যায়। আর মুসলমানরা যেন এই সত্যটি উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয় যে আল্লাহ্ তা’লা ইসলামের বিজয় হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মাধ্যমেই নির্ধারণ করে রেখেছেন, তাই তাঁর হাতে বয়আত করার মধ্যেই সফলতা নিহিত। আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে সেই সৌভাগ্যও দান করুন। (আমীন)
[ হুযূরের খুতবা সরাসরি ও সম্পূর্ণ শোনার কখনোই কোন বিকল্প নেই ]
আপনার পছন্দের ভাষায় খুতবা শুনতে:▶️ mta.tv/live এ-
অথবা- বাংলায় সরাসরি খুতবা দেখতে MuslimTv Bangla
Leave a Reply