November 15, 2024, 5:16 am
হযরত খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রা.)-এর তফসীরে কবীরের আলোকে
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেন:
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّـهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّـهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থ: যারা সুদ খায় তারা সেভাবে দাঁড়ায় যেভাবে ঐ ব্যক্তি দাঁড়ায় যাকে শয়তান সংস্পর্শে নিয়ে জ্ঞান-বুদ্ধি হারা করে ফেলে। এর কারণ হল, তারা বলে, ‘ক্রয়-বিক্রয়ও সুদেরই মত’; অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ হতে কোন উপদেশ আসে এবং সে বিরত হয় তাহলে অতীতে যা কিছু হয়েছে তা তারই এবং তার ব্যাপার আল্লাহ্র হাতে ন্যস্ত। আর যারা পুনরায় এটি করবে তারা নিশ্চয় অগ্নিবাসী হবে। সেখানে তারা দীর্ঘকাল থাকবে। (সূরা বাকারা: ২৭৬) আল্লাহ্ তা’লা এই আয়াতে সুদখোর মানুষ এবং সুদখোর জাতির অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্টের বা অপকারিতার উল্লেখ করেছেন। যার ফলে, কেবল ধনী-গরীবের মাঝে বিশাল ব্যবধানইসৃষ্টি হয় না বরং বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিনষ্ট হয়। এই বিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত,এ স্থলে ‘রিবা’ শব্দের মাঝে সব ধরনের সুদ অন্তর্ভুক্ত। এতে ব্যাংক-কে পৃথক রাখা হয় নি। অতএব, ব্যাংক থেকেই সুদ নেয়া হোক বা ডাকবিভাগ ও সমবায় সমিতি কিংবা কোন ব্যক্তির কাছ থেকেই সুদ নেয়া হোক না কেন সব ক্ষেত্রেই এই সুদ ভোগ করা অবৈধ বা হারাম। কিন্তু পরিতাপ, এযুগে মুসলমানরা ইউরোপিয়ান দেশগুলোর ভয়ে ভিত হয়ে সুদের অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা আরম্ভ করে দিয়েছে। কিছু লোক বলে, একশ’ টাকা দিয়ে দুইশত টাকা নেয়া- এ ধরণের সুদ ইসলামে নিষেধ। তবে, সামান্য সুদ গ্রহণ বা ভোগ করা নিষেধ নয় কেননা, এটি সুদ নয় বরং মুনাফা বা লভ্যাংশ। এ ধরনের লোকদের উদাহরণ সেই কাশমিরী ব্যক্তির ন্যায়, যাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার কি কোন পুত্র-সন্তান আছে? সে উত্তরে বলল, কোন সন্তান নেই। কিন্তু যখন সে দাঁড়ালতখন চার-চারটি পুত্র-সন্তান তার লম্বা জুব্বার নিচ থেকে বেরিয়ে এল। প্রশ্নকারী তাকে এদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি না বলেছিলে, তোমার কোন পুত্র নেই, তাহলে এই চার সন্তান কার? সে উত্তরে বলল, চার-পাঁচটি সন্তানকে আবার সন্তান বলে নাকি? (অর্থাৎ দেড়-দু’ডজনের কম সন্তানকে তারা সন্তানই মনে করে না-অনুবাদক) ঠিক একইভাবে এসব লোকেরাও বলে যে, পাঁচ শতাংশ বা সাত শতাংশ সুদ কোন সুদ হল নাকি! একশ’ শতাংশ সুদ হলে পরেই সেটিকে সুদ বলা যায়। অমুসলিমদের কাছ থেকে সুদ নেয়া বৈধ- এই ফতোয়া দিয়ে অপর কিছু লোক সুদ বৈধকরণের পথ বের করে নিয়েছে। অনেকে আবার এই ফতোয়াও দিয়েছে, অমুসলিম রাষ্ট্রের অধীন বসবাসরত মুসলমানদের কাছ থেকেও সুদ গ্রহণ করা বৈধ। এমনকি এটিও বলাহয়েছে, অনেক বড় অংকের সুদকেই মূলত সুদ বলে কিন্তু এই অংকটি আসলে কত তা নির্দিষ্ট করা হয় নি। একথায়, সুদ গ্রহণে কারো জন্যই এমতাবস্থায় আর কোন বাধা রইল না। সবার জন্য সুদ গ্রহণ বৈধ হয়ে গেল। অথচ মহানবী (সা.) সুদকে এমন লানত আখ্যা দিয়েছেন যে, একবার তিনি (সা.) বলেছেন, সুদগ্রহীতা, সুদদাতা এবং এর স্বাক্ষ্যদানকারী সবাই জাহান্নামে যাবে। আসলে, সুদ নিষিদ্ধকরণ ইসলামের অতুলনীয় শিক্ষাসমূহের অন্যতম। কেবল কতিপয় ব্যক্তির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হবে আর অন্যরা অভুক্ত মারা যাবে- ইসলাম এটি চায় না। বরং ইসলাম চায়, উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভের প্রতিযোগিতায় সবাই যেন সমভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় এবং সমাজ যেন সঠিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এজন্য সব ধরনের সুদভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা আবশ্যক। কেননা, সুদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি বা অপকারিতা হল, সম্পদশালী এর মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে ক্রমশ সব ধরনের ব্যবসা, শিল্প-কারখানা নিজ করায়ত্বে নিয়ে নেয় আর অন্যরা তাদের করুনা ও দয়ার পাত্র হয়ে যায়। অতএব, এযুগে সুদ-ই হল সেই ব্যবস্থাপনা যা গুটিকতক মানুষের হাতে সকল সম্পদ কুক্ষিগত করে দিয়েছে। ফলে, ধনী-দরিদ্রের মাঝে এক বিস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হয়ে গেছে।
সুদের প্রকারভেদ:
বস্তুতপক্ষে, গভীরভাবে দেখলে বুঝা যায়, সুদ মুলত দু’ ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমতঃ যে সম্পদশালী ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অন্যান্য ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে মূলধন নিয়ে তাদেরকে সুদ প্রদান করে। যেমনটি পেশাগত ব্যবসায়ী বা ব্যাংকগুলো করে থাকে। দ্বিতীয়তঃ সেই সুদ যা একজন দরিদ্র ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে কোন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এর বিপরীতে প্রদান করে। ইসলাম এই উভয় সুদকেনিষিদ্ধ করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সম্পত্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সম্পদশালীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তাদেরকে যে সুদ প্রদান করা হয় এবং দরিদ্র ব্যক্তি নিজের দারিদ্রে অতিষ্ঠ হয়ে কোন সামর্থ্যবান ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পর তাকে যে সুদ প্রদান করে- ইসলাম এই উভয় ক্ষেত্রেই সুদকে নিষিদ্ধকরেছে। ইসলাম এমন সুদ প্রদান করাকেই কেবল অবৈধ আখ্যা দেয় নি বরং সুদ গ্রহণ করতেও বারণ করেছে। আর কেবল সুদ গ্রহণ করাকেই বারণ করে নি, বরং এর সাক্ষ্যদাতা ও এই চুক্তিপত্র প্রস্তুতকারীকেও অপরাধী আখ্যা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুদ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতে পারে, ধরুন, তার কাছে দশ হাজার টাকা আছে আর এটি বৃদ্ধি করে সে এর দ্বারা দশ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারে। সে যদি বিভিন্ন ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এটিকে বৃদ্ধি না করে তাহলে কী করবে? এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সহজেই তাকে বলতে পারি, সে ধৈর্যধারণ করবে, দশ হাজার টাকাই তার জন্য যথেষ্ট, এটি দিয়েই তাকে জীবনযাপন করে যেতে হবে। কিন্তু যখন প্রশ্ন ওঠে দরিদ্র ব্যক্তির, সে না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তার ফসলও হয় নি, কোন শস্য তার ঘরে ওঠে নি, বৃষ্টিও যথাসময়ে হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে সে তার জমির জন্য অর্থ চেয়েও সুদ ছাড়া সে কারও টাকাওপাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সেকী করবে? এখন সে যদি গরু না কিনে তাহলে কৃষিকাজ কীভাবে করবে? অথবা, উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ না করলে সে এবং তার স্ত্রী-সন্তানরাই বা কী খাবে? তাই, একটিই উপায় আছে তা হল, অর্থ ঋণ নেয়া। কিন্তু সমস্যা হল, মানুষ যদি তাকে সুদ ছাড়া ঋণ না দেয় তাহলে সে কী করবে? যখন এমন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, তখন এর উত্তর দেয়া কিছুটা দুষ্কর হয়ে পড়ে আর মূলত এই সুদের প্রশ্নে-ই,এমন অবস্থা ও বর্ণনা শুনার পর তাকে কী উত্তর দিবে মানুষ তা ভেবে পায় না। ধনী ব্যক্তিকে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিতে পারি, সে সুদে টাকা দিবে না। তোমার কাছে যদি দশ হাজার টাকা থাকে তাহলে তা দিয়েই জীবনযাপন কর। কিন্তু একজন হতদরিদ্র ব্যক্তিকে ‘তুমি এ অবস্থাতেই সন্তুষ্ট থাক’- একথা আমরা কীভাবে বলতে পারি? তাকে কেবল একটিই উত্তর দেয়া যেতে পারে তাহল, অভুক্ত থেকে মৃত্যুকে বরণ করে নাও।কিন্তু এই উত্তর আমাদের হৃদয় প্রশান্ত করার মত কোন যুক্তিসঙ্গতউত্তর নয়, প্রশ্নকারীকে আশ^স্ত করার মতও নয়। তাই, আমাদের দেখা উচিত, ইসলাম এর কী সমাধান দিয়েছে? এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যদি ইসলামের শিক্ষায় গভীরভাবে অভিনিবেশ করি তাহলে আমরা বুঝতে পারব, একশ্রেণীর দরিদ্র মানুষ আছে যাদের কাছে নগদ টাকা থাকে না ঠিকই, কিন্তু তার সহায়-সম্পত্তি বিদ্যমান। এহেন পরিস্থিতিতে তার সম্পত্তি বন্ধক রেখে অর্থ তথা মূলধন গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এমন দরিদ্র শ্রেণীও আছে যার কাছে বন্ধক দেয়ার মত সম্পদও নেই বা যদি থেকেও থাকে তা এমন, যদি সে এই সম্পদ বন্ধক রাখে তাহলে তার সকল ব্যবসা-বাণিজ্যই বন্ধ হয়ে যাবে। ধরুন, একজন কৃষক যদি তার কৃষিজমি বন্ধক রাখে তাহলে সে কৃষিকাজ কোথায় করবে? নিজ বাড়ির ছাদ বা উঠানে সে তা করতে পারবে না। ইসলাম এর যে সমাধান উপস্থাপন করে তা হল, একদিকে ইসলাম ধনীদের সম্পদে কর আরোপ করে যার মাধ্যমে গরীবদের সাহায্য করা যাবে এবং অপরদিকে ইসলামের শিক্ষা হল, যদি করের মাধ্যমেও গরীবের প্রয়োজন মেটানো না যায় তাহলে সেই ব্যক্তির বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশী তাকে কারযায়ে হাসানা বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবে এবং ফা-নাযেরাতুন ইলা মায়সারাহ্ বিধান অনুযায়ী আর্থিক স্বচ্ছলতা না হওয়া পর্যন্ত তাকে ঋণ ফেরত দেয়ার সময়-সুযোগ দিবে যেন গরীব ব্যক্তি প্রশান্তচিত্তে নিজের অবস্থা শুধরে নিতে পারে। এটি এমন একটি পন্থা যাতে কারো কাছ থেকে তার সুদে টাকা নেয়ার প্রয়োজন পড়ছে না আর তার চাহিদাও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানযুগে সুদ ছাড়া চলা কি সম্ভব ?
যারা বলে, বর্তমান যুগে সুদ ছাড়া উন্নতি করা সম্ভব নয় তারা মিথ্যা বলে। সাহাবীদের যুগে যখন একেকজনের কাছে দুই দুই কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন তখন কি তাদের মাঝে সুদ-ভিত্তিক ব্যবসা প্রচলিত ছিল?না, তারা সুদকে নির্ঘাত হারাম জ্ঞান করতেন। তাই, সুদ ছাড়া অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে না- একথা একেবারে ভুল। ইসলাম একদিকে যেমন সুদকে হারাম আখ্যা দিয়েছে, অপরদিকে যাকাত এবং উত্তরাধিকার বণ্টন-রীতিও প্রবর্তন করেছে। এর ফলে সম্পদ কোন বিশেষ পরিবারে কুক্ষিগত থাকে না বরং যে পরিশ্রম করবে সে-ই সম্পদশালী হতে পারবে। আর এর ফলে দরিদ্রদের উন্নতির পথে কোন প্রতিবন্ধতা থাকে না। মোটকথা, সুদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি গভীর প্রজ্ঞাপূর্ণ একটি বিষয় আর ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ এতই অপছন্দনীয় যার কারণে, ইসলাম কোন ব্যক্তির সুদ গ্রহণ করাকে আল্লাহ তা’লার সাথে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর আখ্যা দেয়। বলতে গেলে, এটিকে বিদ্রোহ করার মত একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য করে। একইভাবে, সুদগ্রহীতাদের বিষয়ে ইসলাম বলে, তোমরা যদি এ থেকে বিরত না হও তাহলে আল্লাহ তা’লার সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। কেননা, তোমরা তার অবাধ্যতা করেছ।
সুদের প্রয়োজন ও ইসলামী সমাধান :
প্রশ্ন করা হয়, সুদ যদি হারামই হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান যুগে ইসলামের এ শিক্ষায় কীভাবে আমল করা সম্ভব? স্মরণ রাখা উচিত, ধর্ম একটি ব্যবস্থাপনার নাম। আর যেকোন ব্যবস্থাপনা তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন তা পূর্ণরূপে বলবৎ ও কার্যকর করা হয়।এর অসম্পূর্ণ প্রয়োগ পূর্ণাঙ্গীন ফলাফল বয়ে আনে না। যেমন, বর্তমান যুগে কাউকে সুদের ব্যাপারে বলা হলে সে বলে, সুদ ছাড়া তো চলাই সম্ভব নয়। তার একথার অর্থ এই নয় যে, বর্তমান যুগে সমাজ এতটাই নষ্ট হয়ে গেছে যার কারণে মানুষ সুদ গ্রহণে বাধ্য। বরং তার কথার অর্থ হল, সুদই বিপদের বন্ধু। অথচ, প্রকৃত বাস্তবতা হল, সুদ মানুষের বিপদের বন্ধু নয় বরং এটি একটি ব্যাধি যা মানুষ নিজেই সৃষ্টি করেছে। তবে, ইসলামে এই ব্যাধির চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু এই চিকিৎসা একটি ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ব্যবস্থাপনা পূর্ণরূপে বলবৎ না হবে ততক্ষণ এটিপূর্ণাঙ্গীন ফলাফল বয়ে আনবে না। যেমন, কোন ঘরের চতুষ্পার্শের প্রাচীর, ছাদ এবং দরজা-জানালা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পন্ন না হবে সেই ঘর নিরাপত্তা প্রদান করতেপারে না। ইসলামের সকল শিক্ষা বাস্তবায়িত হলে সুদের আর প্রয়োজনই থাকে না আর সুদের অনিষ্ট বা অপকারিতা থেকে পৃথিবী নিষ্কৃতি লাভ করে। নিম্ন বর্ণিত পরিস্থিতিতে সুদের প্রয়োজন দেখা দেয়:
১. দরিদ্র মানুষ নিজের জীবনধারণের জন্য ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
২. ব্যবসায়ী, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বা কৃষক নিজ নিজ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বিস্তারের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে।
৩. বিপদগ্রস্ত কোন সম্পদের মালিক যার কাছে নগদ অর্থ নেই, অনাকাক্সিক্ষত কোন বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ঋণ নিয়ে থাকে।
(১) প্রথম পরিস্থিতিতে এটি স্পষ্ট, দরিদ্র মানুষ যে আট টাকা উপার্জন করতে পারে না সে সুদে ৮ টাকা নিয়ে ৯ টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে? কৃষকদের বর্তমান দুরবস্থা তাদের অজ্ঞতারই প্রমাণ বহন করছে। একজন মৃত ব্যক্তিকে পুনরায় মারা চরম অন্যায়। একজন এমনিতেই মৃতবৎ তার ওপর আরো বোঝা চাপানো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? অবশেষে, এই অন্যায়ের ফলে আরেকটি অন্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। অর্থাৎ যখন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে যায় তখন সে ঋণ গ্রহণের বিষয়টিকেই অস্বীকার করে বসে।
(২) দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে ব্যবাসায়ী বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক অথবা কৃষক নিজ নিজ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাড়ানোর জন্য ঋণ গ্রহণ করে থাকে। কৃষকের ক্ষেত্রে সম্পদের উন্নতির জন্য যদি ঋণ নিতে হয় তাহলে ইসলাম এক্ষেত্রে বন্ধক-ব্যবস্থাকে বৈধ রেখেছে। এর মাধ্যমে ইসলাম একদিকে মানুষকে নিজ সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে আর অপর দিকে বৈধ চাহিদা পূরণের পথও উন্মুক্ত রাখছে। একজন ব্যবসায়ী বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের ক্ষেত্রে ইসলাম অংশিদারিত্বের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের জন্য তাকে সুদের অনুমতি প্রদান করলে সে যদি নিজ ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যর্থ হয় তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, অন্যদের পূঁজি বিনষ্ট হল। অপরদিকেতার সাফল্যলাভের অর্থ দাঁড়াবে, অগাধ সম্পদ এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়া যা ন্যায্যতা ও সামাজিক ভারসাম্য উভয়েরই পরিপন্থী।
(৩) উপরোল্লিখিত তৃতীয় পরিস্থিতিতে সুদকেবাহ্যত কিছুটা বৈধ আখ্যা দেয়া যেতে পারে কেননা, প্রথমোক্ত পরিস্থিতিতে যে আপত্তি উত্থাপিত হত এক্ষেত্রে তার সুযোগ নেই অর্থাৎ সে কোথা থেকে অর্থ পরিশোধ করবে- এই আপত্তি ওঠে না। তেমনিভাবে দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে যে আপত্তি উত্থাপিত হয় তা-ও এক্ষেত্রে ওঠে না অর্থাৎ পুরো বিশে^র সকল সম্পদ নিজের বুদ্ধিমত্তার বলে নিজেরকুক্ষিগত করে ফেলারঅবৈধ চর্চার প্রশ্নও ওঠে না। কেননা, এক্ষেত্রে এমন এক ব্যক্তি ঋণ নিচ্ছে যার কাছে সম্পত্তি আছে বা উপার্জনের সক্ষমতা রয়েছে কিন্তু এক অনাকাক্সিক্ষত কারণে তাকে একসাথে এত অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে যা তার কাছে একত্রে সঞ্চিত নেই। বাহ্যত দৃষ্টিতে বিবেক বলে, এ ব্যক্তির সুদে ঋণ গ্রহণের অনুমতি থাকা উচিত।বাহ্যত দৃষ্টিতেতাকে সুদে টাকা ঋণ দেয়াও অন্যায় হবে না কারণ, এই ব্যক্তি সম্পদশালী এবং মানুষের টাকা নিয়ে সে খেলাও করবে না। কেননা, তার কাছে সম্পত্তি আছে অথবা সে চাকুরিজীবি তাই এটি তার ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নিশ্চয়তা বিধান করে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এমন ব্যক্তির জন্য সুদে টাকা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া বেশি ভাল নাকি এমন ব্যক্তির জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা করাভাল? এই ব্যক্তি যদি সুদের অনুমতি পেয়ে যায় সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে উপরোক্ত দুই শ্রেণীর লোক এই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে নিজের জন্য সুদ গ্রহণে বৈধতার ফতোয়া দিবে। আর এই অভিশাপ পৃথিবীতে আগের মতই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। নিশ্চয়ই এই তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিকল্প কোন পথ বের করাই শ্রেয় হবে।
সুদ-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার বিপরীতে ইসলামী নীতি :
ইসলাম এ সমস্ত বিষয় দৃষ্টিপটে রেখে একটি সার্বজনিন শিক্ষা দিয়েছে। চারটি অনুচ্ছেদের আওতায় এ শিক্ষার সারাংশ টানা যায়-১। প্রত্যেকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা নিশ্চিত করা। ২। কোন এক ব্যক্তির হাতেঅগাধ সম্পদ কুক্ষিগত হতে না দেয়া। ৩। টাকা-পয়সা কারো কাছে সঞ্চিত থাকতে না দেয়া, বরং সবার কল্যাণার্থে এটি বিভিন্ন মানুষের হাতে (মূলধন হিসাবে) আবর্তিত করার ব্যবস্থা করা। ৪। যার ক্ষেত্রে বৈধ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তার চাহিদা পূর্ণ করাকে রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা। ইসলামী শিক্ষা ও সমাধান অনুচ্ছেদ-১:প্রথম অনুচ্ছেদের আওতায় ইসলাম রাষ্ট্রকে সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রভৃতি নিশ্চিত করার আদেশ প্রদান করে। আর এ জন্য যাকাত ও বিবিধ করের ব্যবস্থাপনা চালু করেছে এবং নিজ অনুসারীদের জন্য দান-খয়রাত আবশ্যক ঘোষণা করেছে।ইসলামী শিক্ষা ও সমাধান অনুচ্ছেদ-২:দ্বিতীয় অনুচ্ছেদেরআওতায় ইসলাম সুদ-ভিত্তিক ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করেছে। কেননা অগাধ সম্পদ কেবল সুদে টাকা নেয়ার কারণেইকুক্ষিগত হয়ে থাকে আর এভাবে মানুষ অন্যদের টাকা দিয়ে এক প্রকার জুয়া খেলে। সাফল্যলাভ করলে সে কোটিপতি বনে যায় আর ব্যর্থ হলে সে ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোন ক্ষতি হয় না বরং সে অন্যদের টাকার ভরাডুবি ঘটায়। এক্ষেত্রে পাওনাদাররা বেশির বেশি তাকে জেলে দিতে পারে(কিন্তু সম্পদ উদ্ধার করতে পারে না)।উক্ত অনুচ্ছেদের অপরাংশের আওতায় ইসলামপরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের আদেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদকে তার উত্তরাধিকারীদের মাঝে বন্টন করাকে আবশ্যক করা হয়েছে। কারও জন্য তার একক কোন সন্তানকে উত্তরাধিকারী বানানো বৈধ নয়। কেননা এর ফলে, তার অর্জিত সব সম্পদ বংশের একাংশের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়।ইসলামী শিক্ষা ও সমাধান অনুচ্ছেদ-৩:তৃতীয় অনুচ্ছেদেইসলামপরিত্যাক্ত সম্পদের বণ্টন ও যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে আর সুদকে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী শিক্ষা ও সমাধান অনুচ্ছেদ-৪:চতুর্থ অনুচ্ছেদের আওতায় ইসলাম যাকাত, দান-খয়রাতের ব্যবস্থাপনা এবং বন্ধক রেখে মূলধন সরবরাহ বাব্যবসায়িক অংশিদারিত্বের ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছে। মোটকথা, উপরোক্ত নীতির ভিত্তিতে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গীন ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব করেছে। এই পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা বিশ্বে সার্বজনিনভাবে প্রয়োগ করার পরও যদি কোন খুঁত থেকে যায় সেক্ষেত্রে ইসলামী বিধানেরবিষয়ে আপত্তি করা যেতে পারে। তা না হলে, একদিকে পশ্চিমা বিধিবিধান প্রচলিত রেখে ইসলাম সুদ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার বিপরীতে কী সমাধান দেয়- এ আপত্তি তোলা ভিত্তিহীন।
সুদের ভয়াবহ পরিণাম :
ইয়াতাখাব্বাতুহুশ শায়তানু মিনাল মাস- এখানে ‘মাস্’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, উন্মাদনা। আর উন্মাদনার ফলে মানুষের চালচলনে উদভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং সে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং এর অর্থ হল, তাদের (সুদখোরদের) কাজকর্মউন্মাদ উদভ্রান্ত লোকদের মত হয়ে থাকে। অর্থাৎ, তাদের মাঝে যেমন গাম্ভির্যের অভাব, তড়িঘড়ি করার প্রবণতা ও উদাসীন্য দেখা দেয়- একই অবস্থা সুদখোরদের বেলায়ও ঘটে। সুদখোরদের কাজকর্মেও অযথা তাড়াহুড়ো সৃষ্টি হয় এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও সতর্কতা থাকে না। সাধারণত দেখা যায়, সুদ ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা এমন এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ফেলে যার ফলে কোন্দলের সৃষ্টি হয় আর তাদের অর্থ রসাতলে যায়। কোন উন্মাদ যেমন পরিণাম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না তেমনিভাবে সুদ-ভিত্তিকব্যবসায় অর্থ লগ্নিকারীও ক্রমাগতভাবে সুদে অর্থ লগ্নি করতে থাকে কিন্তু এর পরিণাম কী হবে তা ভেবে দেখে না? তারা শুধু ওঁত পেতে থাকে, কখন নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে আর মানুষ আমাদের কাছ থেকে সুদে অর্থ ঋণ নিবে। আর এমন হলে আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। শুধু তাই নয়, সুদ-ব্যবস্থার কারণে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও নিজেদের সামর্থের উর্ধ্বে গিয়ে সুদে ঋণ নেয়ার সাহস পায়। পরিণাম ভুলে গিয়ে তারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মেতে ওঠে। অথচ, বাস্তবতা হল, এমন দীর্ঘ যুদ্ধবিগ্রহ জাতির পর জাতিকে পদদলিত করে বা ধ্বংস করে ফেলে। এতে লক্ষ লক্ষ নারী বিধবা এবং কোটি কোটি শিশু এতীম হয়ে যায়। এমন যুদ্ধ লক্ষ লক্ষসন্তান ও লক্ষ লক্ষ পিতাকে মৃত্যুপুরিতে পাঠিয়ে দেয়। কেবল সুদের মাধ্যমে তাদের আর্থিক মান বা অবস্থা বজায় থাকলেইএসব যুদ্ধঅব্যহত রাখা যেতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দৈনিক সাত কোটি টাকা কেবল ইংরেজ সরকারের ব্যয় হত আর এর সমপরিমাণ, বরং এর চেয়েও বেশি ব্যয় হত জার্মানির। যদি সুদের পথউন্মুক্ত না থাকত তাহলে জার্মানি এক বছরও এই ব্যয় নির্বাহ করতে পারত না। আর তার সব রসদ স্বল্পদিনের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যেত। জার্মানি কী করেছে? সুদের মাধ্যমে অর্থ যোগান নিয়ে কয়েক বছর পর্যন্ত যুদ্ধব্যয় নির্বাহ করেছে।বলতে গেলে লড়াইয়ের সূচনাও সুদের কারণেই হয়েছিল। জার্মানির বিপক্ষে জোটবদ্ধ রাষ্ট্রগুলো আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করেছে- একথা ঠিক, কিন্ত জার্মাানিকে যুদ্ধে অবতরণে কীসে সাহস যুগিয়েছে? এ সুদই সাহস যুগিয়েছে। জার্মানি জানত, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে আমি সুদের মাধ্যমে চাহিদানুযায়ী অর্থের যোগান পাবআর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারব। সুদের পথ যদি বন্ধ থাকত তাহলে এত বড় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চিন্তাও সে করতে পারত না। আর যদি জার্মান নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করা হত, তাহলে তারা এক বছরও যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সুযোগ পেত না। কিছুদিনের মধ্যেই দেশে হট্টগোল শুরু হয়ে যেত, আমরা এত বড় বোঝা বহন করতে পারব না। কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে মানুষের ওপর বাস্তব হিসেবে যে বোঝা চাপছিলসুদে অর্থ নিয়ে মানুষকে সেই বোঝার বিষয়ে উদাসীন রাখা হয়েছে।
অতএব, সুদ যুদ্ধের একটি বড় কারণ। এ কারণেই আল্লাহ্ তা’লা যুদ্ধের বিধিবিধানের পর কুরআন শরীফে সুদের উল্লেখ করেছেন, কেননা যুদ্ধের সাথে সুদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।এরপর বলেন, যালিকা বিআন্নাহুম কালু ইন্নামাল বায়উ মিসলুর রিবা- এদের সুদ খাওয়ার কারণ হল, তারা বলে, এটিও একটি ব্যবসা। আল্লাহ্ তা’লা এর খণ্ড করে বলেন, ওয়া আহাল্লাল্লাহুল বায়আ ওয়া হাররামার রিবা। তোমাদের চোখে এ দু’টিরমাঝে কোন পার্থক্য নেই কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা এ দু’টিকে অভিন্ন আখ্যায়িত করেননি বরং এর মাঝে ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ এবং সুদকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং এতদুভয়ের একটিকে বৈধ এবংঅন্যটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করা স্পষ্ট প্রতিয়মান করছে, এ দু’টি জিনিষ এক নয়। আর খোদা তা’লা যেহেতু একে নিষেধ করেছেন, নিঃসন্দেহেএতে কোন না কোন প্রজ্ঞা অবশ্যই থাকবে আর সেই প্রজ্ঞা তা-ই যা পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। প্রকৃত কথা হল, ইসলাম যে সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, মানুষের সাথে সদাচরণ এবং দরিদ্র শ্রেণীর উন্নতির ওপরসেই সমাজব্যবস্থার ভিত্তি রাখা হয়েছে। কিন্তু সুদ-ভিত্তিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা সদাচরণ ও সহমর্মিতা কী তা-ই জানেই না, তারা কেবল অর্থ বৃদ্ধি করতেই জানে আর এটিই তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে। এতে যদি কাউকে শ্বাসরুদ্ধ করতে হয় তাতেও কিছু যায় আসে না। সুতরাং যেহেতু এর মাধ্যমে অন্যের সাথে সদাচরণ করার এবং গরীবদের উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায় পক্ষান্তরে যুদ্ধের পথ উন্মুক্ত হয় এ কারণে ইসলাম সুদকে পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাসা-বাড়ী বা দোকান ভাড়া দেয়ার বিষয়টি ভিন্ন। ভাড়া এ কারণে নেয়া হয় কেননা ঘর বা দোকান ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর এর মেরামতের জন্য ঘরের মালিকের কাছে কিছু না কিছু টাকা থাকাও প্রয়োজন। তেমনিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিষ। কেননা ব্যবসায় এক ব্যক্তি নিজ অর্থের সাথে অন্যের অর্থের বিনিময় করে। অতএব, ক্রয়বিক্রয় এবং সুদকে একই বিষয় আখ্যা দেয়া বোকামী। এরপর বলেন, ফামান জাআহু মাওয়েযাতুম র্মি রাব্বিহি ফানতাহা ফা-লাহু মা সালাফা ওয়া আমরুহু ইলাল্লাহ যার কাছে তার প্রভুর পক্ষ থেকে কোন উপদেশবাণী পৌঁছানো হয় আর সে তা শুনে অবাধ্যতা থেকে বিরত হয় তখন আমাদের বিধান হল, তার পূর্বেকার ত্রুটি -বিচ্যুতি ও দুর্বলতা সম্পর্কে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব না। সুতরাং তোমরাও এমন লোকদের বিষয়টি খোদার হাতেন্যস্ত কর এবং তাদের তওবাকে গ্রহণ করে নিও। হ্যাঁ, কোন ব্যক্তি তওবা করার পর পুনরায় সেই কাজে লিপ্ত হলে এমন ব্যক্তি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য হবে। এখানে ‘উলাইকা আসহাবুন্ নার, হুম ফীহা খালেদূন’ বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মানুষ বলে বেড়ায় যে, সুদ ও ক্রয় বিক্রয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। কিন্তু তারা এটি দেখে না, এতদুভয়ের মাঝে কোন পার্থক্যই যদি না থাকত এবং দু’টি একই বিষয় হত তাহলে খোদা তা’লা এগুলোর মাঝে একটিকে হালাল এবং অন্যটিকে হারাম কেন আখ্যায়িত করেছেন? এরপর এ থেকে বিরত হলে কেন ক্ষমা করছেন? আর ক্ষমা লাভের পর যে পুনরায় সুদ নেয়া শুরু করবে তাকে শাস্তি কেন দিচ্ছেন? এ সব বিষয় সাব্যস্ত করছে, সুদ এবং ক্রয়বিক্রয় এক বিষয় নয়। সুদের পরিণাম নির্ঘাত আগুন; তা যুদ্ধের আকারেও প্রকাশিত হতে পারে কিংবা সামাজিক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার আকারেও প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু ক্রয়বিক্রয়ের পরিণাম তা নয়। এছাড়া সুদের এ ক্ষতি সাময়িক নয়, বরং যতক্ষণ পর্যন্ত এ অভিশাপ পৃথিবীতে বিরাজ করবে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার আগুনও ততদিনজ¦লতে থাকবে। হুম ফীহা খালিদুন এদিকেই ইঙ্গিত করছে।(সূত্র: তফসীরে কবীর)
Leave a Reply