November 19, 2024, 8:13 pm
নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের চতুর্থ ইমাম হযরত মির্যা তাহের আহমদ (রাহেঃ) প্রদত্ত বানী :
বাংলাদেশ সম্বন্ধে আমি কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। বাংলাদেশের প্রতি আমার গভীর ভালবাসা আছে। আমি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে গিয়েছি। আমি বাংলাদেশের সব এলাকা দেখেছি। আল্লাহ আপনাদেরকে খুবই সুন্দর একটি দেশ দিয়েছেন। এমন দেশ যা খুবই প্রিয়, খুবই সুন্দর। দেশের মানুষগুলােও খুবই সুন্দর। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে খুব দ্রুত আহমদীয়াতের বিস্তৃতি হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিরুদ্ধবাদী আলেমদের হুমকি সাধারণ ও নিরীহ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। তারা তাদের হুমকিতে ভীত হয়ে পড়েন। আপনারা কেবলমাত্র আল্লাহকে ভয় করুন। মানুষের ভয়ে ভীত হবেন না। কাউকে গ্রাহ্য করবেন না। আল্লাহর ভয়, হিকমত ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে এমন কথা বলুন, যা মানুষের হৃদয়ে স্থান লাভ করে, রেখাপাত করে। ভাল কথা বলুন। শত্রুকে ভয় করবেন না। মনে রাখবেন, শত্রুর প্রােপাগান্ডা ও অপপ্রচারের ফলে মানুষ প্রভাবান্বিত হয়ে যায়। অতএব, আপনাদের জন্য জরুরী বিষয় এই যে, আপনারা আপামর জনতার কাছেই (দাওয়াত) পৌঁছাবেন। আমার ধারণা এই যে, আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেমের মন স্বচ্ছ। তারা সত্যিই ধর্মকে ভালবাসেন। তারা পাঞ্জাবী আলেমদের মত কট্টর ও দুষ্ট নন। এর প্রমাণ হলাে এই যে, পাঞ্জাবেই হযরত ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হয়েছেন। যদি হিন্দুস্থানের পাঞ্জাবের আলেমরা আসলেই কট্টর না হতেন তাহলে সেখানে ইমাম মাহদী (আ.) আসতেন না। সবচে’ খারাপ লােক যেখানে থাকে আল্লাহ তাআলা সে স্থানকেই তাদের সংশােধনের জন্য সতর্ককারী পাঠাবার স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। আল্লাহ তাআলা এই পাঞ্জাবেই হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-কে হযরত রাসূল করীম (সা.)-এর প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন। আমি যেসব কথা বলছি তা কুরআন এবং হাদীসের উপর ভিত্তি করেই বলছি। বাংলাদেশের আলেমগণ কখনাে দুষ্টামিতে পাঞ্জাবী আলেমদের সাথে পারবেন না। কোনক্রমে পাঞ্জাবীদের সাথে দুষ্টামিতে পাল্লা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। প্রয়ােজনে যতটা ইচ্ছা প্রতিযােগিতা করে দেখতে পারেন। যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে যুক্তিসঙ্গত কথা বলা হয় তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে উগ্র প্রকৃতির মৌলভীও নমনীয়-কমনীয় হয়ে যায়। হ্যাঁ, যাদের ভাগ্যে সংশােধন নেই এমন লােক সর্বত্রই কিছু না কিছু পাওয়া যাবে। যারা কথার মাঝে শােরগােল করে উঠে তাদেরকে পরিহার করুন। কিন্তু স্মরণ রাখবেন, অধিকাংশ আলেমের নিকট যাওয়া আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের সাথে যুক্তি-প্রমাণ ও আন্তরিকতার সাথে কথা বলুন। বুঝাতে চেষ্টা করুন যে, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালানাে হচ্ছে। দেখবেন কত বিপুল সংখ্যক আলেম আমাদের সমর্থনে এসে যান। এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। জনসাধারণের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় তাদের নিকট গিয়েও বলুন যা উলামাকে বলেছেন। ফলশ্রুতিতে এমন অনেক শ্রেণী আপনাদের সমর্থনে এসে যাবেন। আর তখন আহমদীরা নির্ভয়ে আহমদীয়াতের প্রচার করার সুযােগ পাবেন। প্রথমে আলেমগণের হৃদয় জয় করুন। জনপ্রতিনিধিদের মন জয় করুন, তারপর জনসাধারণের মন জয় করুন। এইরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রচারকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিন। এমন হলে বাংলাদেশ এমন একটি বিরাট কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে যেখানে খাটি ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবে। মৌলভীরা ইসলামের নামে সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। তারা মানুষকে ইসলামের কোন দিক-নির্দেশনা দেয় না। তারা মানুষের প্রতি সহানুভূতি সমবেদনা রাখে না। মানুষ অনাহারে মরলেও এদের কোন চিন্তা নেই, নেই কোন মাথা ব্যথা। ইসলামী রাষ্ট্র তাে এমন হবে যেখানে মানুষের দারিদ্রকে দূর করা হবে। কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক খােরাকেরই চিন্তা করা হবে না বরং দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক খােরাকেরও ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমার ভালবাসা ও সমবেদনা আমাকে বলতে বাধ্য করেছে, তাই আমি আপনাদেরকে বলছি যে, আজ আপনাদের সকল প্রকার অভাব দূরীকরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে আহমদীয়াত। দেশের দরিদ্র ও নৈতিক অধ:পতন, সামাজিক আপত্তি, যুলুম-অত্যাচার এই সব কিছুর হাত থেকে কেবলমাত্র আহমদীয়াতই আপনাদেরকে নিষ্কৃতি দিতে পারে-উদ্ধার করতে পারে। আমি আশা করি আপনারা আমার এই বার্তাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিবেন। খুব ভাল করে হৃদয়ঙ্গম করে নিন যা আমি বলছি। যে ব্যবস্থাপত্র আমি দিয়েছি ইহাই সঠিক ব্যবস্থাপত্র। এছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থাপত্র আপনারা কোথাও খুঁজে পাবেন না।
আমি বাংলাদেশের মন জয় করতে চাই। যতশীঘ্র সম্ভব এই মহা বিপ্লব সাধন করতে হবে। পাকিস্তানের মৌলভীরা বার বার বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করছে যেন এদেশও পাকিস্তানের মত হয়। এমনিতেই আপনরা অনেক কষ্টে আছেন। আপনারা পাকিস্তানের মতই যদি হতে চান তাহলে কেন আপনারা এথেকে পৃথক হয়েছেন? পাকিস্তানের কথা ছেড়ে দিন। পাকিস্তানে যে নােংরা আবর্জনা ছেয়ে আছে তা আপনারা কিছুতেই গ্রহণ করবেন না। আপনাদের বড় বড় বুদ্ধিজীবী, পত্রিকার প্রতিনিধি, বড় বড় মিডিয়ার প্রতিনিধি এবং বড় বড় সম্মানিত জ্ঞানীজন রয়েছেন। আমি জানি তাদের হৃদয় সাক্ষ্য দেবে যে, আমি সত্য বলছি। অতএব আমার আবেদন এই যে, আমার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আপনারা আমার কথার সমর্থন করুন। আমার এই বাণীটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আপনাদের সাথী হউন।
(হযরত আমীরুল মুমিনীন খলীফাতুল মসীহ রাবে (রাহে.)-এর ১৪-২-১৯৯৮ তারিখের পয়গাম থেকে সংকলিত)
Leave a Reply