November 18, 2024, 9:41 am

Latest Post:
হযরত উমর (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ হযরত আবু উবায়দা বিন জাররাহ্ (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণের বাকী অংশ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত আবু উবায়দা বিন জাররাহ্ (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত বিলাল (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণের ধারাবাহিকতা মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবী হযরত বিলাল (রা.)-এর পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যকার মতভেদের মীমাংসায় যুগ ইমাম আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে দু’টি ভার্চুয়াল সভার সম্মান লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ হল্যান্ড মহানবী (সা.)-এর বদরী সাহাবীদের (রা.) ধারাবাহিক পবিত্রময় স্মৃতিচারণ
আহমদীয়াতের বিরোধিতা: সত্যতার এক অসাধারণ নিদর্শন

আহমদীয়াতের বিরোধিতা: সত্যতার এক অসাধারণ নিদর্শন

[লন্ডনের মর্ডেনস্থ বায়তুল ফুতুহ্ মসজিদে প্রদত্ত সৈয়্যদনা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.)-এর ০৭ এপ্রিল, ২০১৭ মোতাবেক ০৭ শাহাদাত, ১৩৯৬ হিজরী শামসী’র জুমুআর খুতবার অংশ বিশেষ]

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বিরোধিতা তো সেই যুগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল, যখন জামা’ত যাথারীতি প্রতিষ্ঠাও লাভ করে নি এবং তিনি (আ.) বয়আত নেয়াও আরম্ভ করেন নি। মুসলমান ও অমুসলমান সবাই তার বিরোধিতায় পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করেছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।বর্তমানে বিরোধিতার ক্ষেত্রে মুসলমানরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা তাঁর জামা’তকে ক্রমশ উন্নতি দিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ্ তা’লার কৃপায় জামা’ত এখন বিশ্বের ২০৯ টি দেশে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। যেভাবে আমি বলেছি, বিশেষভাবে মুসলমান দেশগুলোরযেখানেই মানুষ জামা’তের প্রতি বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করে, সেখানেই যাথারীতি ষড়যন্ত্র মাধ্যমে জামা’তের বিরোধিতা আরম্ভ হয়ে যায়। কতিপয় রাজনীতিবিদ ওলামা এবং তাদের দ্বারা প্রভাবিত সরকারী কিছু কর্মকর্তা, বরং যেমনটি আমি পূর্বেও বলেছি, আদালতের বিচারকগণও এই বিরোধিতার অংশে পরিণত হয়। বিগত কয়েকটি খুতবায় যেভাবে আমি বলেছি, বর্তমানে আলজেরিয়ার আহমদীদেরকে নিপীড়ন ও নির্যাতনের লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। বিচারকগণ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ কথাই বলে যে, তোমরা যদি বল, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-এর মসীহ্ মওউদ হওয়ার দাবি মিথ্যা এবং তিনি মসীহ্ মওউদ নন, বরং নাউযূবিল্লাহ্, তিনি ইসলাম বিরোধী শক্তির এজেন্ট এবং তিনি ইসলাম বিরোধী শক্তি ও পাশ্চাত্যের ছত্রছায়ায় রয়েছেন আর তাদের পক্ষ থেকেই তাকে দাঁড় করানো হয়েছে, বিশেষভাবে ইংরেজদের পক্ষ থেকে, তাহলে আমরা তোমাদেরকে নির্দোষ বলে মুক্ত করে দেব। অন্যথায় জেল-জরিমানার শাস্তি ভোগের জন্য তোমরা প্রস্তুত হয়ে যাও। এরপর যারা প্রস্তাবকে অস্বীকৃতি জানায় এবংযারা ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে এবং অনেক মোটা অংকের জরিমানাও করা হচ্ছে, যা পরিশোধ করা সম্ভবত এ সব দরিদ্র লোকের পক্ষে সম্ভবই হচ্ছে না। কেননা, অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র আর তাদের হয়তোসামর্থ্যও নেই। যাহোক, এ সব নিষ্পাপ এবং নির্যাতিত মানুষের কথা আমাদের ব্যক্তিগত দোয়ার মাঝে স্মরণ রাখা উচিত। আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে অবিচলতা ও দৃঢ়তা দান করুন এবং এ সব নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করুন। অনুরূপভাবে, পাকিস্তানী আহমদীদের কথাও আপনাদের দোয়ায় স্মরণ রাখবেন, সেখানে বিশেষ করে পাঞ্জাবে ইদানিং যথারীতি ষড়যন্ত্র করে নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মুসলমান দেশগুলো নিজেদের দেশের অভ্যন্তরে নৈরাজ্যের যে চিত্র এবং এক দেশের সাথে অপর দেশের পারস্পারিক সম্পর্কের যে অবস্থা প্রদর্শন করছে, তা বিচক্ষণ বা বুদ্ধিমান মানুষদের এ কথা চিন্তার জন্য যথেষ্ট এবং যথেষ্ট হওয়া উচিত যে, এমন অবস্থায় উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সংশোধনের নিমিত্তে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর স্বীয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে যাকে প্রেরণ করার ছিলেন আর মহানবী (সা.) তাঁর যে নিষ্ঠাবান প্রেমিকের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাকে যেন তারা সন্ধান করে। কেননা,হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর আগমন সম্পর্কিত আল্লাহ্ তা’লা এবং মহানবী (সা.) বর্ণিত নিদর্শনাবলীও পূর্ণতা পেয়েছে এবং পাচ্ছে আর এটিই একমাত্র পথ, যা মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) এক স্থানে বলেন, “নিশ্চিত স্মরণ রেখো! খোদার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতভাবে সত্য, তিনি স্বীয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে পৃথিবীতে এক সতর্ককারী প্রেরণ করেছেন। বিশ্ববাসী তাকে গ্রহণ করে নি, কিন্তু খোদা তা’লা তাকে অবশ্যই গ্রহণ করবেন। আর প্রবল আক্রমণসমূহ দ্বারা তার সত্যতা প্রকাশ করে দিবেন। তিনি (আ.) বলেন, আমি তোমাদেরকে সত্য সত্যই বলছি, আমি খোদার প্রতিশ্রুতি অনুসারে মসীহ্ মওউদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। চাইলে গ্রহণ কর বা অস্বীকার কর। কিন্তু তোমাদের অস্বীকার করায় কিছুই যায়-আসে না। খোদা তা’লা যা সংকল্প করেছেন, তার বাস্তবায়ন হবেই হবে।” পুনরায় তিনি (আ.) বলেন, “এটি সুস্পষ্ট বিষয় যে, খোদা তা’লা আমাকে মা’মুর বা প্রত্যাদিষ্ট এবং মসীহ্ মওউদ নাম দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যারা আমার বিরোধিতা করে, তারা আমার নয়, বরং খোদা তা’লার বিরোধিতা করে।” অতএব, জামা’তের বিরুদ্ধে যে সব বিরোধিতা হচ্ছে, তা যারা করছে, তারা আল্লাহ্ তা’লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলছে আর এভাবে তারা আল্লাহ্ তা’লারই বিরোধিতা করছে। আর এ সব বিরোধিতা ইতিপূর্বেও কোন ক্ষতি করতে পারে নি আর ভবিষ্যতেও পারবে না, ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য চিরকালই হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথে ছিল এবং সর্বদা আমরা দেখেছি, শত্রু ব্যর্থ ও লাঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে আর ভবিষ্যতেও হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ্। এরা এক স্থানে বিরোধিতা করলে আল্লাহ্ তা’লা একশত স্থানে তবলীগের নিত্যনতুন পথ উন্মুক্ত করে দেন। আলজেরিয়াতেই যারা নিজেদের ধারণ অনুসারে আহমদীদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে এবং পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা বা চর্চা করছে, জামা’ত বিরোধী সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। বরং পত্র-পত্রিকাও বিরোধিতার ক্ষেত্রে তাদের পরিপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জামা’তের বিরোধিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এ কাজই জামা’তের তবলীগের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আলজেরিয়ার জামা’ত কোন পুরোনো জামা’ত নয়, কিন্তুএই বিরোধিতার মাধ্যমেই আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে ঈমানী ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দান করছে আর একই সাথে তাদের জন্য তবলীগের পথও খুলে দিচ্ছেন। সেখানকার আহমদীরা লিখেছেন, আমরা আমাদের দেশে কীভাবে তবলীগ করব?- এ বিষয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। এই হচ্ছে তাদের আবেগ, অনুভূতি ও উচ্ছ্বাস। এই বিরোধিতার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা স্বয়ং তবলীগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তারা বলেন, কিছু লোক নেতিবাচক প্রভাব গ্রহণ করলেও তাদের অধিকাংশই নামধারী আলেমদের পদাঙ্ক অনুসারী। কিন্তু এমনও মানুষ আছেন আর অনেক মানুষই এমন আছেন, যারা জামা’ত এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর দাবির সাথে পরিচিত হয়েছেন। আর তারা বুঝতে পেরেছেন যে, জামা’তের বিরুদ্ধে যা কিছুই হচ্ছে, তা অন্যায় করা হচ্ছে। তারা নিজে থেকেই জামা’ত সম্পর্কে তথ্য-উপাত্য সংগ্রহ করছে। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)ও এ কথাই বলেছেন যে, বিরোধিতায়রচিত পুস্তক-পুস্তিকা এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত পুস্তক-পুস্তিকা লিখা হয়েছে, তা মানুষকে আমাদের পুস্তকাদি পাঠের প্রতি অনুপ্রাণীত করে আর এর প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। অনুরূপভাবে, তিনি এ কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, তাঁর আগমেনর জন্য এটিই নির্ধারিত সময় ছিল আর আল্লাহ্ তা’লার নিয়তি অনুসারেই তিনি এসেছেন। যাতে করেইসলামের ডুবুডুবু নৌকাকে তিনি ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সত্য নবী রসূল এবং মুজাদ্দেদের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হল, তারা নির্ধারিত সময়ে এবং প্রয়োজনীয়মহূর্তে আবির্ভূত হন। তিনি অ-আহমদীদের সম্বোধন করে বলেন, মানুষ কসম খেয়ে বলুক যে, এটি কি সেই সময় নয়, যখন আকাশে বা ঊর্ধ্বলোকে কোন প্রস্তুতি গৃহীত হবে? কিন্তু এটি তারাও জানে যে, মুসলমানদের এই অবস্থাই দাবি করে যে, কোন একজন সংস্কারক আসুক। পত্র-পত্রিকায়ও তাদের নিজেদের বিবৃতি আসে এবং তারা তাদের বক্তৃতাতেও উল্লেখ করে আর এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, উম্মতে মুসলেমাকে সামাল দেয়ার জন্যকারো আসা উচিত। কিন্তু এ কথার পাশাপাশি এ কথাও বলে যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছাড়া অন্য কাউকে আসতে হবে। যাহোক, যিনি খোদা তা’লার পক্ষ থেকে আবির্ভূত হওয়ার দাবি করছেন, তাকে এরা মানে না। বরং নামধারী এ সব আলেম তাঁকে অস্বীকার করছে এবং তাঁর সাথে শত্রুতা পোষণ করছে আর এরা সর্বত্র তেমনই করে যাচ্ছে, যেমনটি আমি বলেছি, বিশেষ করে মুসলমান দেশগুলোতে। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা এটিও দেখতে পাই যে, আল্লাহ্ তা’লা পৃথিবীতে তাঁর বাণী পৌঁছাতে চান এবং মানুষকে তা গ্রহণও করাতে চান। তাঁর নিয়তিও এ ক্ষেত্রে কাজ করছে আর এই বিরোধিতা সত্ত্বেও লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ প্রতি বছর আহমদীয়াত গ্রহণ করেন। আর এটি এ কথার প্রমাণ যে, আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ও সমর্থন আহমদীয়া জামা’ত এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথে রয়েছে। এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা নিজেদের ঘটনা লিখে পাঠান যে, তারা কীভাবে আহমদীয়াত গ্রহণ করেছেন। আর তাদের ঘটনাগুলো শুনে বিস্মিত হতে হয় যে, কীভাবে আল্লাহ্ তা’লা সৎ প্রকৃতির মানুষের জন্য ঈমান আনার ব্যবস্থা করছেন। আমি এখন সেগুলোর কতিপয় ঘটনা বর্ণনা করছি। প্রথম যে ঘটনাটি আমি উপস্থাপন করব তা হল, আলজেরিয়ারই একটি ঘটনা, যেভাবে আমি বলেছি, সেখানে আজকাল চরম বিরোধিতা হচ্ছে। লেখক বন্ধু বলেন, আহমদীয়াতের সাথে পরিচিত হওয়ার অনেক পূর্বেই আমি এক রাতে স্বপ্নে দেখি, আমি একটি উঁচু ছাদ বিশিষ্ট প্রশস্ত ও বড় হলরুমে অনেকগুলো মানুষের সাথে একটি লাইনের দাঁড়িয়ে আছি, যার এক মাথায় দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, আমাদের লাইন হতে প্রত্যেকে নিজের পালা এলে সেই দুই ব্যক্তির মধ্য হতে ডান দিকে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাথে পরম ভক্তি ও আন্তরিকতার সাথে করমর্দন করে হলরুমের দরজার দিকে চলে যায়, যেন এই লম্বা লাইন সেই দুজনের মধ্য হতে একজনের সাথে করমর্দন করার জন্যই বিশেষভাবে বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে বলি, মানুষ দুজনের পরিবর্তে শুধু একজনের সাথে কেন এত ভক্তিসহকারে করমর্দন করছে? আর দুজনের সঙ্গেই কেন করছে না? কাছাকাছি পৌঁছার পর আমি দেখতে পাই, তাদের মাঝে একজন শুভ্র দাড়ি বিশিষ্টআর তার ডান দিকে দাঁড়ানো ব্যক্তি মধ্যম গড়ন ও গোধুম বর্ণের অধিকারী, যার মাথার চুল ও দাড়ি কালো রং-এর। তিনি বলেন, এরপর যখন আমার পালা আসে, তখন আমি শ্বেত শুভ্র দাড়ির অধিকারী ব্যক্তির প্রতি আমার হাত বাড়িয়ে দেই, কিন্তু তিনি আমাকে কালো দাড়ি এবং গোধুম বর্ণের ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তাকে সালাম কর। আর আমিও অত্যন্ত ভক্তির সাথে তার সাথে করমর্দন করি। তিনি বলেন, এর সাথে সাথেই আমার হৃদয় সেই ব্যক্তির ভালোবাসায় বিভোর হয়ে যায়। তিনি আমাকে দেখে হাসেন, তার সেই হাসিতে এমন এক জাদু ছিল যে, আমি আজ পর্যন্ত সেই হাসি ভুলতে পারি না। এরপর তিনি বলেন, যখন আহমদী জামা’তের সাথে পরিচিত হই এবং এম.টি.এ. দেখতে আরম্ভ করি, তখন সেই প্রাথমিক দিনগুলোতে একদিন হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর ছবি আমাকে দেখানো হয়। (হুযূর বলছেন,)কিছুক্ষণ পর আমার খুতবা দেখানো হচ্ছিল, আমার ছবি যখন টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে, তখন তিনি বলেন, এ দুজনকে দেখে আমার স্বপ্নের কথা মনে পড়ে। স্বপ্নে দেখানো শুভ্র দাড়ির অধিকারী যে ব্যক্তি ছিলেন, তিনি আমার সম্পর্কে বলেন যে, তিনি আপনি ছিলেন। আর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) ছিলেন কালো দাড়ির অধিকারী, যার সাথে সবাই করমর্দন করছিল, আমিও ইঙ্গিত করছিলাম যে, তাঁর সাথে করমর্দন কর। তিনি বলেন, এরপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে আহমদীদের সাথে যোগাযোগ করি এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করি, যার উত্তর পাওয়ার পর আমি বয়আত গ্রহণ করি। এরপর আরেক বন্ধু, যার ঘটনা শুনে মনে হয় যে, আল্লাহ্ তা’লা যেন তাকে পরিবেষ্টন করে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর হাতে বায়আত করাতে চেয়েছেন। তার কোন সৎকর্ম আল্লাহ্ তা’লা পছন্দ করেছেন। এই বন্ধু মিশর নিবাসী, তার নাম আব্দুল হাদী। তিনি বলেন, এম.টি.এ. আল আরাবিয়ার মাধ্যমে আমি আহমদীয়াতের সাথে পরিচিত হই। যে অনুষ্ঠানটি দেখানো হচ্ছিল, তা খুবই ভালো একটি অনুষ্ঠান, তা তার খুবই পছন্দ হতো কিন্তু তিনি বলেন, জামা’তে আহমদীয়ার প্রতিষ্ঠাতার নবুয়্যত এবং ওহী ও এলহাম লাভ করার বিষয়টি আমি বুঝতে পারছিলাম না। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) সম্পর্কে এ বিষয়টি তার কাছে সন্দেহপূর্ণ মনে হতো। তিনি বলেন, আমি বার বার ‘আল হেভারুল মুবাশের’ অনুষ্ঠানে ফোন করার চেষ্টা করি কিন্তু প্রত্যেক বারই আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাদের সাথে কোন ভাবেই সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয় নি আর যোগাযোগও হয় নি। এই অনুষ্ঠানের ফোন করার উদ্দেশ্য ছিল একটি মাত্র প্রশ্ন করা আর সেটির উত্তর আমি হা অথবা না-তে চাচ্ছিলাম। প্রশ্নটি ছিল যে, আহমদীয়া জামা’তের প্রতিষ্ঠাতা অন্যান্য নবীদের মতই নিষ্পাপ কি-না? আর তিনি ওহী এবং এলহাম লাভের অধিকারী কি-না? বা এলহাম ও ওহী লাভ করার দাবি করেন কি-না? যদি এর উত্তর আমাকে ইতিবাচক দেয়া হতো, তাহলে সে দিনই আমি আমার চ্যানেলের তালিকা থেকে এই চ্যানেলের নাম মুছে দিতাম। কেননা, তখন আমার মাঝে এই বিশ্বাসই ছিল যে, মহাবনী (সা.)-এর পর ওহীর ধারা বন্ধ হয়ে গেছে এবং যে ব্যক্তি ওহী লাভের দাবি করবে, সে মিথ্যাবাদী। কিন্তু খোদা তা’লার বিশেষ কৃপায় এমনটি হয়েছে যে, যে আমি কখনোই অনুষ্ঠানে ফোন করার ক্ষেত্রে সফল হই নি। এর ফলাফল যা দাঁড়ায় তা হল আমি নিয়মিত এমটিএ দেখতে থাকি। আর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি খতমে নবুওয়তের বিষয়টিও আমার সামনে আসে। এমনকি আমার সামনে যুগ ইমাম মসীহ্ মওউদ ও ইমাম মাহদী (আ.)-এর হাতে বয়আত করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর ছিল না। সুতরাং আমি বয়আত ফর্ম পূরণ করে পাঠিয়ে দেই। বয়আত করার পর আমি চাচ্ছিলাম এই সংবাদ যেন অন্যদের কাছেও পৌঁছে। সুতরাং এজন্য আমি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নির্বাচন করি যার সম্পর্কে আমার খুবই সুধারণা ছিল যে সে আমার কথায় কর্ণপাত করবে। আমি তার কাছে আহমদীয়াতের বাণী পৌঁছাই। সে আমার ধারণার বিপরীতে গিয়ে প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর মর্যাদা পরিপন্থী কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করে। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে আমি তাকে ছেড়ে অত্যন্ত বেদনাঘন হৃদয় নিয়ে, অস্থির ও উদ্বিগ্নচিত্তে, শ্লথ গতিতে নিজের বাড়িতে ফির আসি এবং অভ্যাস অনুযায়ী যখন টেলিভিশন অন করি, তখন এমটিএ-তে সূরা আলে ইমরানের এই আয়াত পাঠ করা হচ্ছিল যে,فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ অতএব যদি তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে স্মরণ রেখ, তোমার পূর্বেও রসূলদেরকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, যারা সুস্পষ্ট নিদর্শন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ পুস্তকসমূহ এবং উজ্জ্বল গ্রন্থ নিয়ে আগমন করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এই আয়াত আমার হৃদয়ের প্রশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং আমি নিশ্চিত বিশ^াসে উপনীত হই যে এটি কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং খোদা তা’লার পক্ষ থেকে আমার জন্য বাণী যে রসূলদের মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করা এবং তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ইতিপূর্বেও হয়েছে, এরপর যদি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাথেও এমনটি করা হয় তাহলে এটি কোন নতুন বিষয় নয়। কিন্তু নবীদের এরূপ অবস্থা সত্ত্বেও খোদা তা’লার সাহায্য এবং সমর্থনে তাদের বিজয়ী হওয়া বিশ^বাসীর জন্য খোদা তা’লার অস্তিত্বের এক মহা প্রমাণ এবং খোদা তা’লার মা’মূরদের সত্যতার এক অকাট্য প্রমাণ। তিনি বলেন, একথা চিন্তা করে আমার পূর্বের অবস্থা পাল্টে যায় এবং খোদা তা’লার এই নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে তিনি আমাকে যুগ ইমামের হাতে বয়আত করার তৌফিক দিয়েছেন এবং তাঁর অস্বীকারকারী হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।’ দেখুন, এক সদাত্মাকে আল্লাহ্ তা’লা এভাবে রক্ষা করেছেন। কিন্তু অন্যজন, তার হৃদয়ের অবস্থা যেহেতু এমনটি ছিল না, তাই তার প্রতি আল্লাহ্ তা’লার কৃপা বর্ষিত হয় নি। আর শুধুমাত্র প্রভাব যে পড়ে নি তা-ই নয়, বরং দুর্ভাগ্যের কারণে সে অপরাধও করে বসেছে, অন্যায় কাজ করেছে। আর যে বয়আত করেছে তার আত্মিক প্রশান্তির জন্য আল্লাহ্ তা’লা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা করেছেন, আর শুধু প্রশান্তিই দেন নি, বরং তার যে কষ্ট হয়েছিল সেই কষ্ট ও বেদনাও দূর করে দিয়েছেন। এরপর আরেকজন মহিলার ঘটনা যাকে আল্লাহ্ তা’লা তার সদাত্মা ও পুণ্যবতী হওয়ার কারণে বয়আত গ্রহণ করার তৌফিক দিয়েছেন। তিনি মুসলমানদের ব্যাপারে সামগ্রিকভাবে সন্ত্রাসের যে ধারণা রয়েছে, আমাদের ব্যাপারেও সেই আশংকাগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু তারপরও আল্লাহ্ তা’লা এমন ব্যবস্থা করেছেন। আফ্রিকানিবাসী এক মহিলা যিনি গ্রামে বসবাস করেন, যিনি গিনির একটি বড় শহর বোকের নিকটবর্তী গ্রামে বাস করেন, তার নাম হচ্ছে হাজা হামী ফাদী। তিনি বলেন, একদিন তার কাছে জামা’তে আহমদীয়ার একজন মোয়াল্লেম এবং জামা’তের তবলীগ করেন এবং জলসা সালানায় যোগদানের দাওয়াত দেন। সেই দিনগুলোতে সেখানে জলসা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘পয়গাম বাহ্যত খুব ভাল ছিল। প্রথমে আমি জলসায় যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিই, গাড়িতে পেট্রোল ইত্যাদিও ভরে নিই।’ এই মহিলা স্বচ্ছল পরিবারের ছিলেন, কিন্তু গ্রামেই বসবাস করতেন। বলেন, ‘সেই দিনগুলোতে ইসলামী সংগঠনের বরাতে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ঘটনার কারণে আমি চিন্তা করছিলাম পাছে এই জামা’ত আবার এমন না হয়! তাই জলসায় যাওয়ার সংকল্প পরিত্যাগ করি যে জানি না সেখানে গেলে কী হবে। কিন্তু মনে মনে এই দোয়া করতে থাকি যে ‘হে খোদা! যদি এরা সত্য হয় তাহলে তারা যেন পুনরায় আমাদের গ্রামে তবলীগের উদ্দেশ্যে আসে।’ খোদা তা’লা এমনটিই করেন।” এই মহিলা লিখেন যে কিছুদিন পর আমাদের তবলীগি টিম কোন প্রোগ্রাম ছাড়াই সেই গ্রামে পৌঁছে যায়। যখন সেই মহিলা আমাদের দেখেন তখন আনন্দে তার চোখ দিয়ে অশ্রু বইতে আরম্ভ করে। তিনি বলেন যে ‘আল্লাহ্ তা’লা আমার দোয়া শুনেছেন!’ এভাবে পুরো পরিবার বয়আত করে আহমদীয়া জামা’তভুক্ত হন। অনেক মানুষের প্রতি আল্লাহ্ তা’লা প্রসন্ন হন এবং তাদেরকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যমেও ঈমানে উন্নতি দান করেন এবং নিজ মনোনীত ব্যক্তিকে গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। কিন্তু এটি কোন শর্ত নয়। অনেকে লিখেন যে অমুক ব্যক্তি আমাকে বলে যে ‘যদি এই দিক থেকে আমরা লাভবান হই, আমার এই কাজ যদি হয়ে যায় তাহলে আমি আহমদীয়াত গ্রহণ করব’। আহমদীয়াত গ্রহণ করা আল্লাহ্ তা’লার উপরও কোন অনুগ্রহ নয়, আর হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর উপরও কোন অনুগ্রহ নয়। নিজেদের ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করতে হলে আল্লাহ্ তা’লার এই বাণী শোনা, বোঝা এবং তা গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক এবং অপরিহার্য। যাহোক একটি ঘটনা রয়েছে; আল্লাহ্ তা’লা অনেক সময় কারও প্রতি যদি কৃপা করতে চান তাহলে সেই শর্তও গ্রহণ করেন যার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তাকে দেখিয়েও দেন। গাম্বিয়ার আমীর সাহেব বলেন, ‘নায়াবিনি জেলার একটি গ্রামের একজন মহিলা, সুনতা সাহেবা, জামা’তের ঘোর বিরোধী ছিলেন। যখনই তার সামনে জামা’তের নাম উচ্চারণ করা হতো তিনি প্রচন্ড রাগান্বিত হতেন এবং জামা’তের বিরুদ্ধে অত্যন্ত রূঢ় ও কটুবাক্য ব্যবহার করতেন এবং তিনি বলতেন ‘আহমদীরা কাফের; এরা নিজেরা তো দোযখে যাবেই, কিন্তু যারা তাদের সাথে যোাগাযোগ রাখবে তারাও দোযখে যাবে।’ এই মহিলা কৃষিকাজ করতেন, তার কৃষিকাজ ছিল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে তার ফসল নষ্ট হচ্ছিল। কখনো ফসলে পোকামাকড় আক্রমণ করতো, কখনো অন্যান্য জীবজন্তু এসে তার ফসল নষ্ট করতো। তিনি বুঝতে পারছিলেন না এর কারণ বা হেতু কী। তিনি বলেন, আমাদের এক আহমদী বোন তাকে বলেন যে ‘দেখ, যখন থেকে তুমি জামা’তের এই বিরোধিতা করছ তখন থেকে তোমার ফসল নষ্ট হচ্ছে। এজন্য তুমি জামা’তের বিরোধিতা পরিত্যাগ করে জামা’তভুক্ত হয়ে যাও, তাহলে আল্লাহ্ তা’লা তোমার প্রতি কৃপা করবেন।’ সুতরাং ঐ মহিল তখনই বিষয়টি বুঝতে পারেন, কেননা তিনি অনেক অভিজ্ঞতা রাখতেন। তিনি তার পরিবারের আটজন সদস্যসহ জামা’তভুক্ত হন। জামা’তভুক্ত হবার পর তিনি দেখেছেন যে আল্লাহ্ তা’লা তার প্রতি অনেক কৃপা করেছেন। শুধুমাত্র তার ফসলের উৎপাদনই যে বেড়ে গেছে তা-ই নয়, বরং তার এক যুবক পুত্র, যার সাথে গত কয়েক বছর ধরে যোগাযোগ ছিল না, তার সংগে যোগাযোগ বহাল হয়, যিনি ইটালিতে বসবাস করছিলেন। এখন এই মহিলা সবাইকে একথা বলে বেড়াচ্ছে যে ‘জামা’তে আহমদীয়া গ্রহণ কর, কেননা এতেই তোমাদের নাজাত নিহিত’। বেনিনের মোবাল্লেগ সিলসিলাহ লিখেন, এ বছর বর্ষাকালে বাসিলা শহরে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয় যে কারণে মিশন হাউসের একটি দেয়াল ধ্বসে পড়ে। পুরো রাত ধরে বৃষ্টি পড়তে থাকে। আশংকা হচ্ছিল অন্য দেয়ালটিও না ধ্বসে পড়ে। তিনি বলেন, “জামা’তের মিশন হাউসের ক্ষতি হচ্ছিল, তাই আমি চিন্তিত ও উৎকন্ঠিত ছিলাম। আমি এই দোয়া করি এবং আমার ধারণা জন্মাল (হুযুর বলছেন, এমন ধারণা আমাদের মোবল্লেগদেরই হওয়া সম্ভব) যে ‘হে আল্লাহ্! এই ক্ষতি তুমি বয়আতের মাধ্যমে পূর্ণ করে দাও এবং জামা’তের উন্নতিতে তুমি বরকত দান কর।” তিনি বলেন, “আমি দোয়া তখনও শেষ করি নি, ফোনের রিং বাজতে আরম্ভ করে। তখন রাত বারটা বাজছিল। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বজ্রপাত হচ্ছিল। আমি যখন ফোন রিসিভ করি তখন এক ব্যক্তি, যার নাম ছিল মোহাম্মদ, তিনি বুচা নামক একটি গ্রাম থেকে কথা বলছিলেন, তিনি বলেন যে গ্রামবাসীরা বয়আত করতে চান। মিশন হাউস থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ছিল একশত দশ কিলোমিটার। যাহোক, পরের দিন/কিছুদিন পর আমি তাদের কাছে সেই গ্রামে যাই। সেখানে ১৯৮ জন বয়আত করে জামা’তভুক্ত হয়ে যান এবং সব ধরনের বিরোধিতা সত্ত্বেও (সেখানে চরম বিরোধিতাও রয়েছে) তারা অবিচল রয়েছেন, সত্যের উপর ও ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।” জার্মানি থেকে এক মোবাল্লেগ সাহেব লিখেন, প্রায় এক বছর ধরে এক সিরিয়ান পরিবারের তাদের সাথে যোগাযোগ ছিল। গত বছর জার্মানির জলসায়ও তারা যোগদান করেছিলেন। জলসার পরিবেশ দেখে খুবই প্রভাবান্বিত হন। কিন্তু তারা তখনো বয়আত করেন নি। সেই সিরিয়ান পরিবার বলেন, “আমরা যেহেতু ইটালির পথ ধরে জার্মানি এসেছিলাম, সেজন্য আমাদের উকিল বলেছিলেন যে ‘আপনাদের কেস অত্যন্ত দুর্বল এবং হতে পারে যে আপনাদের পুনরায় ইটালি ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে’। সুতরাং জলসার পর আমরা এই অপেক্ষাতেই ছিলাম যে চিঠি এসে যাবে যে ‘তোমরা ফিরে যাও’। কিন্তু যখন আমরা ঘরে পৌঁছি তখন কোর্টের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসে ছিল যাতে তারা লিখেছে যে তারা জানে যে আমরা ইটালির পথ বেয়ে জার্মানিতে এসেছি। কিন্তু এর সাথে জাজের পক্ষ থেকে মন্তব্যও ছিল, ‘যেহেতু তারা সিরিয়ান, তাই তাদেরকে জার্মানি থেকে অন্য কোথাও পাঠানোর প্রয়োজন নেই’।” তিনি বলেন, “এই বিষয়টি আমার জন্য অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ছিল, মোজেযা ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হল, জলসায় যোগদানের কল্যাণেই এমনটি হয়েছে। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম যে ‘খোদা তা’লা আমাদেরকে জলসায় যোগদানের কল্যাণে এই নিদর্শন দেখিয়েছেন’।” অতএব এরপর তাদের হৃদয়ে একথা গেঁথে যায় যে জামা’তের কল্যাণে যেহেতু এটি হয়েছে তাই তারা তাৎক্ষণিকভাবে বয়আতের সিদ্ধান্ত করেন এবং জামা’তভুক্ত হয়ে যান। হেদায়াত দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’লারও অবাক করা রীতি রয়েছে। যদিও এমন অনেক ঘটনা রয়েছে আর আমি আপনাদের বলেছিও যে আফ্রিকাতে তবলীগ করা কোন সহজ কাজ নয়, অনেক কঠিন কাজ; কিন্তু অনেকে মনে করে যে এরা অশিক্ষিত, দরিদ্র- তাই এরা সহজেই আহমদীয়াত গ্রহণ করবে। কিন্তু এটি একেবারেই ভুল কথা। অশিক্ষিতদেরকে যেসব আলেম-ওলামা রয়েছে, তারা নিজেদের রুটি-রুজির ও ব্যক্তিগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আশ্চর্যজনক রসম-রেওয়াজ ও বিদআতে লিপ্ত করে রেখেছে। আর সেসব ওলামার পদাংক অনুসরণকারীরা তাদের থেকে পৃথক হতে চায় না, এবং এদের কারণেই জামা’তের বিরোধিতা হয়। আমি যে দুইটি ঘটনা বললাম যে আফ্রিকাতেও বিরোধিতাকারী রয়েছে। যাহোক, সেখানেও আহমদীয়াত গ্রহণ করা কোন সহজ কাজ নয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা এরপরও মানুষের পথনির্দেশনা লাভের ব্যবস্থা করেন এবং আমাদের মোবাল্লেগ ও মোয়াল্লেমদের জন্য তবলীগের পথ খুলে দেন। আইভোরি কোস্টের মোবাল্লেগ একটি ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, সান পেদ্রো অঞ্চলের স্থানীয় মোয়াল্লেম একটি গ্রামে তবলীগের উদ্দেশ্যে যান যার ফলে সেই গ্রামের ইমামসহ ১৫ জন ব্যক্তি আহমদীয়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ইমাম আইভোরি কোস্টের ন্যাশনাল সালানা জলসায় যোগদান করেন যেন জামা’তের সদস্যদের নিকট থেকে দেখার সুযোগ ঘটে। তিনি জলসা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হন। মসজিদের জন্য নিজের একটি জমিও জামা’তকে দান করেন। কিন্তু এরা সবাই শহরের এক বড় ইমামের অধীনস্থ ছিলেন। যদিও সেখানে ইমাম ছিল, কিন্তু এর আগে গ্রামে জুমুআর নামায পড়া হতো না। আর এর কারণ যা বলা হতো তা হলÑ শহর থেকে বড় ইমামকে ডেকে কোন গরু বা ছাগল জবাই করে তাকে দাওয়াত করা হবে, তারপর সেখানে জুমুআ পড়া যেতে পারে নতুবা জুমুআ পড়া যেতে পারে না, এর অনুমতি নেই। এই ছিল তাদের আশ্চর্যজনক বিদআত যা তারা প্রচলন করে রেখেছে। আর বড় মৌলবী সাহেব বিভিন্ন জায়গায় দাওয়াত খাওয়ার পর যখন সুযোগ পেতেন, তখন সেখানে গিয়ে দাওয়াত খেতেন ও জুমুআ পড়াতেন। আর এ কারণে জুমুআ পড়ার মত মৌলিক আবশ্যকীয় দায়িত্ব যা মুমিনের জন্য আবশ্যক, সেই আবশ্যক দায়িত্ব থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছিল। হাদীসে তো আছে, যে ব্যক্তি ক্রমাগত তিন জুমুআ পরিত্যাগ করে তার হৃদয়ে দাগ পড়ে যায়। যাহোক, এই মৌলবী সাহেবদের নিজস্ব শরীয়ত ছিল। সেই ছোট গ্রামের ইমাম সাহেবকে যখন বলা হয় যে জুমুআর নামায পড়ার জন্য এ ধরনের বিষয়ের আবশ্যকতা নেই, তখন তিনি গ্রামে গিয়ে লোকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে আমরা জুমুআর নামায পড়তে পারি এবং এক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এটি আবশ্যক নয় যে কেবল বড় মৌলবীকে দাওয়াত করলেই জুমুআর নামায পড়া যাবে। তখন গ্রামের অন্যান্য লোকেরা, যারা তখনো আহমদী হয় নি, তারা বিরোধিতা আরম্ভ করে এবং ইমামকে তাদের মসজিদে জুমুআ পড়াতে অনুমতি দেয় নি। তখন ইমাম সাহেব একটি সাময়িক ছাপড়া বানিয়ে কয়েকজন আহমদীকে নিয়ে জুমুআর নামায পড়েন। তখন এই অনিষ্টকারী বা বিশৃঙ্খলাকারীরা সেই ছাপড়া ভেঙে দেয়। তিনি বলেন, “এরপর আমি স্থানীয় মোয়াল্লেম ও স্থানীয় কয়েকজন আহমদী সদস্যকে নিয়ে গ্রাম্য প্রধান বা গ্রামের চিফের কাছে যাই এবং পুরো ঘটনা তার কাছে খুলে বলি। সেই চিফ সিদ্ধান্ত দেনÑ ‘মসজিদের যারা কর্মকর্তা, তারা যেহেতু আপনাদের মসজিদে নামায পড়তে দিচ্ছে না, তাই আপনারা অন্য কোথাও গিয়ে নামায পড়–ন। যখন দু’জায়গায় নামায হবে তখন মানুষ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিবে যে তারা কোন জায়গায় গিয়ে নামায পড়বে’।” তিনি বলেন, “যাহোক, আল্লাহ্ তা’লার ফযলে সেই গ্রামে আহমদীয়াতের কল্যাণে এখন নিয়মিত জুমুআর নামায পড়া হচ্ছে, এবং বিরোধিতা সত্ত্বেও জামা’তের সদস্যরা অত্যন্ত অবিচলতার সাথে নিজেদের ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং নিয়মিত জুমুআর নামায পড়ছেন।” স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্ তা’লা পথনির্দেশনা দিয়ে থাকেন, বিশ্বের সব জায়গাতেই আল্লাহ্ তা’লা এরূপ পথনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ভারতের মোবাল্লেগ-ইন-চার্জ কেরালা, কেরালার একজন নবাগত আহমদীর আহমদীয়াত গ্রহণের ঘটনা লিখেন। সেই নবাগত আহমদী বয়আত গ্রহণ করার পূর্বে অনেক অস্থির থাকতেন। এতে কেউ তাকে বলে যে ‘আপনার অস্থিরতা দূর করার মাধ্যম হচ্ছে অধিক হারে দরূদ শরীফ পাঠ করা, আপনি অনেক বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করুন’। অতঃপর এই বন্ধু দরূদ শরীফ পড়তে আরম্ভ করেন। একদিন তিনি স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর রওযা মোবারক বা সমাধি দেখেন এবং একটি খালি কবরও দেখতে পান। সেখানে এক ব্যক্তি আসেন এবং তিনি বলেন যে ‘হযরত মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, অচিরেই আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে’।যখন তিনি অ-আহমদী মৌলভীকে এই স্বপ্ন শুনান তখন তিনি বলেন যে, এটি অত্যন্ত আশিসপূর্ণ স্বপ্ন। আপনি এক উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। এই স্বপ্নের কয়েক দিন পর এক সফরকালে কোন আহমদীর সাথে তার স্বাক্ষাৎ হয়, সেই আহমদী বন্ধু তাকে বলেন যে, আপনি কেন্নোর শহরে যে ‘নূর মসজিদ’ আছে সেখানে আপনি যান। তারপর তিনি জামা’তের নূর মসজিদে এক দিন যান এবং জুমুআর নামায পড়েন। সেখানে জামা’তের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং নিয়মিত জামা’তের বই পুস্তক পড়ার পর তিনি বয়আত করে জামা’তভুক্ত হোন। তিনি বলেন, এভাবে বিষয়টি আমার সামনে সুস্পষ্ট হয় যে, মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে অচিরেই স্বাক্ষাতের অর্থ হচ্ছে আহমদীয়া জামা’তভুক্ত হওয়া বা আহমদীয়া জামা’তে যোগদান করা। এরপর বেনীনের মুবাল্লেগ সাহেব বলেন, আমাদের মোয়াল্লেম হামদী জিব্রীল সাহেব একটি স্থানীয় রেডিওতে তবলীগি প্রোগ্রাম করতেন। একদিন তার অনুষ্ঠানে একজন মহিলা ফোন করেন, আর তিরি বলেন, আমার জন্য এটি এটি আশ্চর্যের বিষয় যে, মসীহ্র দ্বিতীয় আবির্ভাব হয়েগেছে আর আমরা জানিই না। আমি মুসলমান আর আমার পুরো পরিবার হচ্ছে খ্রিষ্টান এবং তারা আমাকে এই ক্ষেত্রে এসে নির্বাক করে দেয় যে, মুসলমানরা নিজেরাই বলে যে, তাদের হেদায়াতের জন্য মসীহ্ পুনরায় আবির্ভুত হবেন এবং তখন তারা হেদায়াত পাবেন। তিনি বলেন, আপনি আমাদের গ্রামে আসুন এবং আমার পরিবারের লোকদেরকে তবলীগ করুন। সুতরাং সেই গ্রামে কয়েকটি তবলীগি অধিবেশন করার পর সেই গ্রামে দুইশত সাতাশ জন মানুষ বয়আত গ্রহণ করে আহমদীয়া জামা’ত গ্রহণ করেন। যেখানে মৌলভীদের শক্তি খাঁটে সেখানে তারা ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে মানুষকে আহমদীয়াত থেকে দূর করার চেষ্টাও করে। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা এইসব মৌলভীদের এই অপকর্মের কারণে মানুষকে আহমদীয়াত গ্রহণ করার তৌফিকও দিচ্ছেন। অনেক এমন ঘটনা রয়েছে, একটি ঘটনার উল্লেখ করছি, গাম্বিয়ার উত্তর প্রদেশের একটি শহর যার নাম পরকোসো, এ সম্পর্কে সেখানকার মুবাল্লেগ লিখেন যে, গত বছর এখানে জামা’ত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেখানে মৌলভীরা একটি মিটিং বা অধিবেশন ডাকে। অনেক পুরোনো মুসলমান সেখানে বসবাস করেন। বিভিন্ন লোকদের সেখানে আমন্ত্রণ জানান। আহমদ সাঈদ সাহেব একজন ছিলেন সেখানে, যার আমাদের জামা’তের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কিন্তু তিনি আহমদী হোন নি। মিটিং চলাকালিন সময় মৌলভী বলতে থাকে যে, আমরা কাদিয়ানীদের কোনভাবেই উন্নতি করতে দেখতে পারি না, এর জন্য আমরা সিদ্ধান্ত করেছি, যেখানেই এরা যাবে, আমরা তাদের পিছু ধাওয়া করব এবং তাদের ভয় দেখাব। আর ধমক দিব, যদি মানুষ জামা’ত থেকে পিছু সরে না যায়, তাহলে আমাদেরকে যদি তাদের প্রাণেও মারতে হয় তাহলেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করব না। এই মৌলভীরা সাঈদ সাহেবকে বলে যে, আপনিও আহমদীদের সঙ্গে কোন রূপ সম্পর্ক রাখবেন না। কেননা, তারা জানত তার জামাতে আহমদীয়ার সাথে সম্পর্ক আছে। তারা বলে, তুমি জামা’তে আহমদীয়ার সাথে যদি সম্পর্ক ছিন্ন না কর, তাহলে তোমার সাথে যে কোন ব্যবহার করতে পারি। ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, মোহাম্মদ সাঈদ সাহেব মৌলভীদের এই মিটিং-এর পর তার পুরো পরিবারসহ আহমদীয়া জামা’তভুক্ত হোন। তিনি বলেন যে, ঠিক আছে তোমরা আমাকে হুমকি-ধামকি যা ইচ্ছে দাও আমি বয়আত করছি। এছাড়াও এই মিটিং এর পর শহরের প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি জামা’তভুক্ত হোন। ভয় দেখানোর ফলাফল যা দাঁড়িয়েছে, তা হচ্ছে, তাদের সামনে সত্য সুস্পষ্ট হয়েগেছে। আরও অধিক মানুষ পূর্বে যারা আহমদী ছিলেন তাদের সংখ্যা আরো বেড়ে গেছে, জামা’তের ক্রোড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে। এই অবস্থাই আজ আলজেরিয়াতে হচ্ছে, যেমনটি আমি বলেছি। আহমদীয়াতের সংখ্যা বাড়ছে। আহমদীয়াতের পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে আর সেখানকার স্থানীয় লোকদের ধারণা যে, ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ এখানেও এক সময় বয়আত গ্রহণ করবেন আহমদীয়াভুক্ত হবেন, ইনশাআল্লাহ্। এরপর আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে তাঞ্জানিয়ার আমীর সাহেব, লিখেন ল্যাঙ্গামাড়াতে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের জামা’ত প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেখানে শুধুমাত্র একটি দু’টি পরিবার আহমদী ছিল, এবছর অর্থাৎ ২০১৬ সনে স্থানীয় জামা’তের সদস্যদের সহযোগিতায় সেখানে যথারীতি তবলীগি অধিবেশন করা হয়, যাতে উপস্থিত লোকদেরকে খিলাফতের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। সুতরাং মানুষের মাঝে খলীফায়ে ওয়াক্তকে দেখার আগ্রহ জন্মে। অ-আহমদীদের কাছে যে ডিস ছিল তাদেরকে অনুরোধ করা হয় যে, আপনারা এই টিভিতে বা চ্যানেলে এম.টি.এ লাগান। তারা এম.টি.এ চ্যানেল লাগায় এবং মানুষ টেলিভিশনে খলীফাতুল মসীহ্কে দেখার সুযোগ পায়। এভাবে জামা’তের জন্য তবলীগের নতুন পথ উন্মুক্ত হয়। তিনি বলেন যে, সেই বছর (যে বছরের উল্লেখ করা হচ্ছে, ২০১৬ সনের কথা) আমাদের একটি প্রতিনিধি দল পরের মাসে পুনরায় তবলীগের উদ্দেশ্যে সেই গ্রামে যায়, তখন এক মৌলভী অনুষ্ঠানের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং আমাদের মনে হল এই অনুষ্ঠান সফল হবে না। কিন্তু খোদা তা’লা এভাবে সাহায্য করেছেন যে, তবলীগি অনুষ্ঠান এবং প্রশ্নোত্তর অধিবেশনের পর স্থানীয় লোকদের মধ্য হতে যারা তখনও বয়আত করেন নি তারা সেই মৌলভীকে বলতে আরম্ভ করেন, যদি আহমদীয়া জামা’ত কাফের হয় তাহলে আমরাও আহমদী, তুমি এই গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাও কিন্তু আহমদীরা এই গ্রাম থেকে বের না। সুতরাং এই মৌলভীর বিরোধিতার কারণে মানুষের জামা’তের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সব মিলিয়ে ৩৮জন ব্যক্তি আহমদীয়াত গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। আর নতুন বয়আতকারীদের মধ্য হতে একজন নিজের একটুকরো জমিও জামা’তকে দেন মসজিদের জন্য এবং একজন নবাগত আহমদী বলেন, যেহেতু আমার ঘর অনেক বড় এবং অন্যান্য আহমদী বন্ধুরা আমার ঘরের নিকটে বাস করেন, তাই যত দিন মসজিদ নির্মিত না হয় ততদিন আমার বাড়িতেই আপনারা বাজামাত নামায পড়–ন। সুতরাং প্রতিদিন সেখানে জামা’তের বন্ধুরা সমবেত হয়ে নামায পড়েন। এই ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে মুখালেফাতের কারণে, বিরোধিতার কারণে, আহমদীয়াত থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে অথবা লোভ-লালসা দেখিয়ে আহমদীয়াত থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু এটি আল্লাহ্ তা’লার কাজ। যেমনটি পূর্বেই হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বলেছেন যে, প্রতিদিন জামা’ত উন্নতি করছে, অনেক জায়গায় মানুষ নিজের আগ্রহে জামা’তের পরিচিতি লাভ করে এবং জামা’তের কাছে আসে এবং আমরা এগুলো দেখে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এই কথাও পূর্ণ হতে দেখি। তিনি বলেন, স্মরণ রেখ! আল্লাহ্ তা’লা সব কিছু স্বয়ং করে থাকেন। পুনরায় তিনি (আ.) বলেন, শীতল বায়ু বয়তে আরম্ভ করেছে। খোদা তা’লার কাজ ধীরে ধীরে হয়ে থাকে এবং হবে আর অবশ্যই হবে, এবং আস্তে আস্তে হয় আর হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ তা’লা। মুসলমানদের হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বিরোধিতা করার পরিবর্তে এই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত যে, তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, স্মরণ রেখ! যদি আমাদের কাছে কোন দলিল প্রমাণ না থাকত তাহলে যুগের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করে মুসলমানদের জন্য আবশ্যক ছিল তারা উন্মাদের ন্যায় ঘুরে বেড়াত আর সন্ধান করত মসীহ্ এখনও কেন আসলেন না? কেননা, মসীহ্ এখন পর্যন্ত কেন ক্রুশীয় মতবাদ ধ্বংস করার জন্য এলেন না। এখন তাঁর বিরোধিতা করার পরিবর্তে তাদের সন্ধান করা উচিত ছিল, যুগ এ বিষয়ের দাবি করছিল যে, তোমরা সন্ধান কর। তিনি বলেন, যদি মোল্লাদের মানব জাতির কল্যাণ এবং হিত দৃষ্টপটে থাকত, তাহলে তারা কখনই এমনটি করত না, যেমনটি তারা আমার সঙ্গে করছে। তাদের চিন্তা করা উচিত ছিল যে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ফতওয়া লিখে কী করতে পেরেছ? খোদা তা’লা যাকে হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় যে, হয়ে যাও, তাকে কে বলতে পারে যে, হয়ো না। তিনি বলেন, এরা যারা আমাদের বিরুদ্ধবাদী, এরাও আমাদের চাকর-ভৃত্য, বিরুদ্ধবাদীরাও আমাদের ভৃত্য, কোন না কোনভাবে তারা আমাদের কথা প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আমি যে, কতক ঘটনা বললাম, আলজেরিয়ার মানুষ এবং পাকিস্তানের লোকেরাও এই কথাই বলে যে, বিরোধিতার কারণে আহমদীয়াতের পরিচিতি আরো বৃৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব, আমাদের বিরোধিতার বিষয়ে কোন চিন্তা নেই। তা আলজেরিয়াতে হোক বা পাকিস্তানে হোক না কেন। অথবা অন্য যে কোন মুসলমান দেশই হোক না কেন। আমাদের তবলীগ এইসব বিরুদ্ধবাদীদের মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জামা’তের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ছে। বিরুদ্ধবাদী উলামা, যারা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বিরোধিতা করে, তাদের হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর এই কথার প্রতি প্রণিধান করা উচিত। তিনি (আ.) বলেন, স্মরণ রেখ! যদি আমাকে গ্রহণ না কর, তাহলে তোমরা কখনই সমাগত মওউদ বা প্রতিশ্রুত মহাপুরুষকে পাবেন না। পুনরায় বলেন, আমার উপদেশ হল, তাকওয়াকে হাত ছাড়া কর না আর খোদাভীতির সাথে এসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ কর এবং নিবৃত্তে চিন্তা কর আর অবশেষে আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর। কেননা, তিনি দোয়া শুনেন, যদি সৎ সংকল্প নিয়ে দোয়া করতে থাক, তাহলে তিনি দোয়া শুনবেন আর পথ প্রদর্শন করবেন। অতএব, আল্লাহ্ তা’লা করুন এরা যেন এতটা যোগ্য হয় যে, আল্লাহ্ তা’লার কাছ থেকে পথ নির্দেশনা লাভ করে আর আল্লাহ্ তা’লা তাদের বক্ষ উন্মুক্ত করে দিন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




This site is not the official site of Ahmadiyya Muslim Jamat. This site has been created by a follower of Hazrat Imam Mahdi (PBUH) only for share the message of Mahdi(pbuh)
আহমদীয়া মুসলিম জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Alislam.org