November 21, 2024, 7:45 am
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর সাক্ষাত লাভের সুযোগ পেলেন মজলিস আতফালুল আহমদীয়া কানাডার ২২০ এর অধিক সদস্য ১৫ অগাস্ট ২০২০ আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হল। মজলিস আতফালুল আহমদীয়া কানাডার ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী ২২০ এর অধিক সদস্যের সাথে প্রথম বারের মত এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা করলেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান পঞ্চম খলীফা হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।
এভাবে, আহমদী মুসলমানদের জন্য তাদের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নেতার সাথে সাক্ষাত লাভ এবং তাঁর পথ নির্দেশনা ও দোয়া চাওয়ার এক নতুন পথের অভ্যুদয় হলো। মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার সদস্যদের এ বছর হযূর আকদাসের সাথে সাক্ষাতের জন্য যুক্তরাজ্য সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু, কোভিড-১৯ এর কারণে সফর বাতিল হয়ে যায়। হুযূর আকদাস এমতাবস্থায় এর স্থলে এক অনলাইন বৈঠকের অনুমতি প্রদান করেন।হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে তাঁর কার্যালয় থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন, আর মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার সদস্যরা ক্যানাডার পীস ভিলেজের বায়তুল ইসলাম মসজিদ কমপ্লেক্সে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত স্থানীয় নির্দেশাবলী অনুসরণ করে তাদের আসন গ্রহণ করে।পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত ও এর অনুবাদের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়, যার পর একটি নযম (ধর্মীয় কবিতা) পাঠ করা হয়।
এরপরে কানাডার মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার ন্যাশনাল সেক্রেটারি একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি অবহিত করেন কীভাবে কোভিড-১৯ লকডাউন চলাকালীন আহমদীয়া মুসলিম যুব সংঘ কানাডা (মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া কানাডা)-র ব্যবস্থাপনা আহমদী যুবকদের বিভিন্ন অনলাইন উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছে।অগ্রগতির স্বীকৃতি প্রদান ও প্রশংসা করার পাশাপাশি হুযূর আকদাস বলেন যে, যা অগ্রগতি হয়েছে তা ধরে রাখা এবং তার উপর আরো অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি তাদের নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেন যে, আহমদী যুবকদের ধারাবাহিক ধর্মীয় বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করা আবশ্যক।
এরপর, এক ঘন্টার বৈঠকের বাকি অংশে, মজলিস আতফালুল আহমদীয়ার সদস্যরা তাদের বিশ্বাস এবং ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ পায়।বিশ্ব কোভিড-১৯ এর ক্ষতিকারক প্রভাব এবং ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়ে গেলে হুযূর আকদাস ক্যানাডা সফর করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:“আপনাদের এবং বিশ্বজুড়ে আহমদীদের দায়িত্ব এ দোয়া করা যে, বিশ্ব যেন শীঘ্র কোভিড-১৯ এর কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। আমাদের সকলকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া ভিক্ষা করতে হবে। এ সময়টি শেষ হয়ে গেলে, আমি ইনশাআল্লাহ আমার সফর ও যাত্রাসমূহ আবার শুরু করবো, যেন আমি বিভিন্ন দেশের আহমদী মুসলমানদের সাথে সাক্ষাত করতে পারি। তবে, এই সভাটিতে আমার মনে হচ্ছে যে, আমি ক্যানাডাতেই রয়েছি। আপনাদের মসজিদ এবং কানাডার একজন সাংবাদিক যেখানে আমার যেখানে সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন সেই জায়গাটি যেন আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছি। আপনারা যেখানে বসে আছেন সেই হলটি আমি দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন আমি আপনাদের সাথেই আছি!”শিশুরা হুযূর আকদাসকে আরো বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ পায়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন জিজ্ঞাসা করে, শিশুরা কীভাবে আল্লাহ তাআলার সাথে তাদের সম্পর্ক ও বন্ধনকে গড়ে তুলতে পারে। অন্যান্যরা মৃত্যু পরবর্তী জীবন, অঙ্গ দান এবং অন্য গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন করে।সর্বোপরি উপস্থিত সকলেই হুযূর আকদাসের সান্নিধ্য লাভের এবং এমন সুযোগ লাভকারী প্রথম দলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে আনন্দ-উচ্ছাস অনুভব করে।বৈঠকের পরে কানাডার দলটির পক্ষে আহমদীয়া মুসলিম যুব সংঘ কানাডার সভাপতি যুবায়ের আফজাল বলেন:“এই মহামারী চলাকালীন সময়ে এটি আমাদের জন্য সত্যিকারের ঈমানোদ্দীপক ও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ছিল, যা আমাদের আতফাল এবং পুরো খোদ্দামুল আহমদীয়া কানাডাকে এক আলোকবর্তিকার ন্যায় আলোকিত করেছে।
হুযূর আকদাস আমাদের আতফালের সাথে কথা বলার জন্য, আমাদের সান্নিধ্য দানের জন্য এতটা সময় দিয়েছেন, তা আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। সকল আতফালই আনন্দে উদ্ভাসিত ছিল। মানুষের জীবনে বার বার আসে না এমন এ সুযোগটি আমাদের আতফালের জন্য কতটা মূল্যবান ছিল, তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তারা সকলেই বলেছে যে, মনে হচ্ছিল যেন হুযূর আকদাস আমাদের সামনেই বসে আছেন এবং আমাদের মাঝেই অবস্থান করছেন।
বিশ্বের বর্তমান অবস্থায় এবং বিশেষত ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের প্রেক্ষাপটে, এটি আরও বেশি তাৎপর্যবহ হয়ে উঠেছিল এবং এই সভার আনন্দকে আরও উদ্বেলিত করে তুলেছে। এই ঐশী অনুগ্রহের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আদায়ের ভাষা আমাদের নেই। আর খিলাফতের ঐশী নেয়ামতের জন্য আমরা আল্লাহ আল্লাহ তাআলার যতই কৃতজ্ঞতা আদায় করি তা কখনও যথেষ্ট হবে না।”
Leave a Reply