November 15, 2024, 7:47 pm
দুনিয়াবি লোভ লালসা ও অহংকার আখেরী যামানায় ধর্ম ব্যবসায়ী আলেম উলামাগণের মনে এই ধারণা জন্ম নিয়েছে যে তারা ছাড়া আর কেহই কুরআন বুঝবে না এবং তাফসির করার ও হক বা অধিকার রাখে না। তারা কুরআন বুঝায় জন্য – সিয়াসিত্তার হাদীস, আরবি গ্রামার, ফিকাহ্’বিদ, তাহ্’কিক, মোফাসসির, মোহাদ্দীস, এবং তাদের দেওয়া মাদ্রাসার সার্টিফিকেট ধারী আলেম বা আল্লামা হতে হবে জ্ঞান করে। অথচ কুরআনের দাবী ইহা সেই কামেল ও পরিপূর্ণ কিতাব যা হেদায়াত করবে শুধুমাত্র মুত্তাকিগণকে এবং এই মুত্তকিগণই একমাত্র কুরআন বুঝবে। জাগতিক শিক্ষা বা জ্ঞান কুরআন বুঝার কোন দলিল নয়। যেমন, জাগতিক জ্ঞানের মহারাজা আবুল হাকাম জ্ঞানের অহংকারের কারণে মুত্তাকি না হওয়ায় কুরআন বুঝেনি এমনকি সমসাময়িক ইহুদী মৌলভী ও খৃষ্টান পাদরীগণ কিতাবের অনুসারি হওয়ার পরও কেবল মাত্র ধর্ম ও তাদের কিতাবকে ব্যবসার পাথেয় হিসাবে বানিয়ে নেওয়ার কারণে কুরআন বুঝেনি। তেমনি বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞানের পরম উৎকর্ষ যারা অর্জন করেছে ইহুদী ও খৃষ্টান বৈজ্ঞানিক গণ তারাও ইহজাগতিক শক্তি ও প্রভাব বিস্তারের লোভ তাদেরকে কুরআন বুঝতে সরায়তা করছে না। আজ ইসলামের নাম ব্যবহারকারী ধর্ম ব্যবসায়ী আলেম ও পীর মাশায়েকগণ এমনকি জাগতিক জ্ঞাণী পন্ডিত মুসলমানগণ একই কারণে কুরআনের জ্ঞান হতে বঞ্চিত।
কুরআন একটি জীবন্ত গ্রন্থ। সুতরাং যে মানুষগুলির মধ্যে জীবন্ত খোদার সংস্পর্শ আছে এবং ওহী ও ইলহামে বিশ্বাস স্থাপন কারী মুত্তাকি কেবল মাত্র তারাই তাদের এই বিশ্বাস এবং একিনের কারণে মহান আল্লাহ্’র পরম করুণা ও আশির্বাদে মোমেন হওয়ায় কুরআন বুঝতে সক্ষম হবে। বাকিদের লেবাসের মধ্য যতই কুরআন প্রেম বা ইসলাম ভক্তি থাখুক না কেন ধর্মের প্রতি তাদের অন্ধ বিশ্বাস, খোদার নেয়ামত আল্লাহ্ মানুষের কথা শুনেন এবং উত্তর দেন – তা অস্বীকার করার কারণে তাদের কে খোদার জ্যোতি হতে বহিস্কার করে আরো অন্ধকারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন –
وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِى سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
“এবং তোমাদের প্রতিপালক বলিতেছেন – ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে
সারা দিব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয়
লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”
( আল মো’মেন -৬১ )
আল্লাহ’র প্রতিশ্রুতি তিনি ডাকলে উত্তর দেন, যা ওহীর মাধ্যমে ছাড়া সম্ভব নয়। আজ যারা ওহীর দরজা বন্ধ করতে চান এটি তাদের অহংকার, তাদের দাবী আমরাই আল্লাহ্’র বান্দা হিসাবে যতেষ্ট, যারা ইসলামকে হেফাজত করতে সক্ষম। আর এই বিশ্বাস জন্য আল্লাহ্’র সতর্ক বাণী, তাহারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হইয়া জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তা ছাড়া আল্লাহ্ তাঁর রসূল (স:) কে নির্দেশ দিয়েছেন –
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لِى وَلْيُؤْمِنُوا۟ بِى لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
অর্থ-” যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন(বল),’আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনার উত্তর দিই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার উপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।” (বাকারা, ১৮৭)
মহান আল্লাহ্তা’লা আমাদের পবিত্র করণের উদ্দেশে বলছেন, আমি প্রার্থনাকারীর
উত্তর দেই (ওহী করি)। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার উপর ঈমান
আনে(আমার ওহীর উপর) যেন তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।
ইহুদী ও খিৃষটান জাতি
‘গায়রীল মাগযুবী আলাইহীম” ও “ওয়ালাদ দোয়াল্লীন” পথভ্রষ্ট ও গোমড়া হওয়ার
কারণে তাদের নিকট ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তাই সূরা ফাতেহায় আমাদেরকে এই
দুই জাতির পথ হইতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ তাদের পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর
কারণেই তাদের নিকট ওহীর দরজা বন্ধ হয়। আজ যারা আল্লাহ্ ওহী মাধ্যমে
আল্লাহ্’র সহিত সম্পর্ক স্থাপন অস্বীকার করে, ডাক দিলে স্বয়ং আল্লাহ্ উত্তর
দেন, ইহা যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকে গোমড়া ও পথভ্রষ্ট করা হয়েছে।
[ প্রাথমিক যুগে অস্বীকার কারী ]
___________________________
পূর্ববর্তী জাতি বনিইসরাঈলী গণ তাদের কিতাব হতে সরে গিয়ে ধর্মকে ব্যবসার বা রোজি রোজগারের উপকরণ বানিয়ে ফেলে। যেমন –
وَآمِنُوا بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
‘এবং তোমরা উহার উপর ঈমান আন যা আমি নাযেল
করেছি, যা তসদীক্ করে উহা যা তোমাদের তোমাদের নিকট রয়েছ, এবং তোমরা তার
সর্বপ্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহকে অল্পমূল্য বিক্রী কর
না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।’
(আল বাকারা – ৪২ )
কিন্তু এই বনি ইসরাঈল জাতি আল্লাহ্’র নিষেধ অমান্য করে ধর্ম ব্যবসায় লিপ্ত হয় –
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
‘আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ
করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে
প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল আর তার কেনা-বেচা করল সামান্য মূল্যের
বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা।’
( আল ইমরান – ১৮৮ )
কিন্তু এই বনি ইসরাঈল জাতি ধর্ম ব্যবসায় এমন ভাবে লিপ্ত হয় যে তারা ৭২ দল
বিভক্ত হয়ে পরে। যার কারণে এতটুক নষ্ট হয় নবীর পিতা হওয়ার যোগ্য কোন লোক
বনি ইসরাঈলীদের মধ্যে পাওয়া যায় নি। ফলে আল্লাহ্ তাদের একত্রিত করার জন্য
বিনা পিতায় হযরত ঈসাকে (আ:) জন্ম দেন, যেন তিঁনি আহলে কিতাবের ঈমানদার
লোকদিগকে একত্রিত করে এক ঐশি ছাতার তলে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্ত তারা এত
নীচে নেমে যায় যে, তারা ঈসাকে হত্যা করতে শূলে চড়িয়ে দেয় – ফলে সেই জাতির
নিকট হতে নবুওয়ত এবং ওহী- ইলহামের ব্যবস্থারনা কেড়ে নেওয়া হয়।
ফলে সেই দুটি জাতি আজ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ এবং
وَلَا الضَّالِّين এ পরিণত হয়। মুসলমানগণ সেই একই পথের যাত্রী হয়েছে নিন্মে তা আলোচনা করা হল।
[ মুসলমানদের জন্য কুরআনের সতর্কবাণী ]
______________________________________
পূরবর্তী জাতি হতে শিক্ষা লাভ করে মুসলমান যেন সংশোধনের পথে চলে, আল্লাহ্ বলেন –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا
لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি
তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা
তাঁরই বন্দেগী কর।’
( আল বাকারা – ১৭৩)
সুতারাং যারা আল্লাহ্’র বন্দেগি করে তারা পবিত্র রুযী হতে আহার করবে – আর যারা মানুষের এবাদত করবে তারাই কেবল তা পরিত্যাগ করবে। এদের সম্পর্কে রসূল (স:) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেন –
وَمَا أَنتَ بِهَادِي الْعُمْيِ عَن ضَلَالَتِهِمْ
‘আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না।’
(আন নমল – ৮২)
আর এই পথ ভ্রষ্টগণই যুগে যুগে আল্লাহ্’র আয়াতকে বিক্রির উপকরণ হিসাবে বেঁচে নেয়। তাদের সম্পর্কে বলা হয় –
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ
وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَـٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي
بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘নিশ্চয়
যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প
মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ
কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ
তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।’
( বাকারা – ১৭৫ )
إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَـٰئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং
প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। আর তাদের
সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও
দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
( আল ইমরান – ৭৮ )
অতপর যারা নিজেদের পীর মাশায়েক বা বড় আলেম মনে করে তারাই কুরআনের আয়াত বিক্রির ব্যবসা শুরু করে এবং তাদের অনুসারিদের এমন ভাবে আব্রিত করে রাখে তারা কোন মতেই সেই জাগা হতে বেডিয়ে আসতে পারে না। মৌলভীগণ ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে দান খয়রাত বা মানুষের দয়াকরে উপর নির্ভরশীল করে তুলে। ফলে এই শিক্ষা ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এতিম বাচ্চাদের শিক্ষাদান ব্যবস্থায় পরিণত হয় – যার দরুন এই শিক্ষা হতে রোজি রোজগার একটি পেশা বা আমলে পরিনত হয় – যা থেকে মৌলভী বা পীর এবং তাদের সাগরেদ বা শিষ্যগণ কেহই বেড়িয়ে আসতে পারে না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন –
اشْتَرَوْا بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَصَدُّوا عَن سَبِيلِهِ ۚ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
তারা আল্লাহর আয়াত সমূহ নগন্য মুল্যে বিক্রয় করে, অতঃপর লোকদের নিবৃত
রাখে তাঁর (আল্লাহ্’র) পথ থেকে, তারা যা করে চলছে, তা অতি নিকৃষ্ট।
( আত তওবাহ্ – ৯ )
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব।
(বাকারা ১৭৬)
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতগুলি সুস্পষ্ট করে দেয় মুসলমানগণ যেন আহলে কিতাব ও কাফেরদের পথ অনুস্বরণ না করে এবং তাদের মত কুরআনের আয়াতকে ও সল্প মূল্যে বিক্রি না করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ‘চুরা না শুনে ধর্মের কাহিনী’ – আজ মুসলমান নামীয় আলেমগণ সেই কাজই অতি গর্বের সহিত করছে। এবং প্রকৃত পক্ষে যারা কুরআনের অনুসারি তাদের সহিত এদের কার্যকলাপ ধর্মীয় অনুশাসন মিল না থাকায় তারা কাফের ফতোয়া সহ নানাবিদ জাহেলী যুগের আচরণের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।এর বিনিময়ে তারা আল্ল্র্’র আযাব ক্রয় করছে।
[ কুরআনের আয়াত যারা বিক্রি করে তারা কাফের ]
___________________________________________
মহান আল্লাহ্’তালা আমাদেরকে পূর্ববর্তী জাতী সমূহ অর্থাৎ আহলে কিতাবদের উদাহরণ দিয়ে এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে তারা তাদের নিকট অবতীর্ণ তওরাতে হেদায়াত ও পথ নির্দেশনা থাকার পরও তারা তা হতে বিচ্যুত হয়। এবং তাদের আলেম ও পন্ডিত গণ তার বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করতে আরম্ভ করে ফলে তাদের মধ্য হইতে হেদায়াত উঠে যায় যার ফলে তারা কাফের জাতীতে পরিণত হয়। আজ মুসমানরা যেন তাদের পথ অনুস্বরণ না করে আল্লাহ্’কে ভয় করে।যদি মুসলমানগণ তাদের পথ অনুস্বরণ করে তবে তারাও কাফেরে পরিণত হবে। যেমন আল্লাহ্ বলেন –
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
‘আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ
পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা,
তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা
এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং
আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না,
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই
কাফের।’
( আল মায়িদাহ্ – ৪৫ )
অতপর আল্লাহ্ রসূলে করিম (স:) কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আমি আপনাকে যে কিতাব দিয়েছি তা বিশ্বাসীরাই মেনে চলবে কেবল মাত্র কাফেরগণ ছাড়া। তিঁনি বলেন –
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَا
إِلَيْكَ الْكِتَابَ ۚ فَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يُؤْمِنُونَ
بِهِ ۖ وَمِنْ هَـٰؤُلَاءِ مَن يُؤْمِنُ بِهِ ۚ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا
إِلَّا
الْكَافِرُونَ
‘এভাবেই আমি আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীণ
করেছি। অতঃপর যাদের কে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা একে মেনে চলে এবং এদেরও
(মক্কাবাসীদেরও) কেউ কেউ এতে বিশ্বাস রাখে। কেবল কাফেররাই আমার আয়াতসমূহ
অস্বীকার করে।’
( আনকাবুত – ৪৮ )
এই আয়াতগুলি হতে ইহা স্পষ্ট
হয়ে যায় যে, আজ বড় মৌলভীরা সমাজে তাদের অবস্থান ও আধিপত্য হারানোর ভয় এবং
তুলনামূলক ছোট মৌলভীরা বড় মৌলভীদের অনুগ্রহ ও ফতোয়ার ভয়ে কুরআন বিক্রির মত
অপকর্ম হতে বেড়িয়ে আসতে পারছে না। অথচ তাদের এই ভয় ও পবিত্র আয়াত বিক্রির
অপরাধ তাদের কাফের করে দেয়।
এই উভয় দল সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন –
وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا أَفَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَاسْتَكْبَرْتُمْ وَكُنتُمْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
‘আর যারা কুফর করেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের কাছে কি
আয়াতসমূহ পঠিত হত না? কিন্তু তোমরা অহংকার করছিলে এবং তোমরা ছিলে এক
অপরাধী সম্প্রদায়।’
(আল জাসিয়া – ৩২)
[ মোমেনের ব্যবসা আল্লাহ্’র সহিত ]
_______________________________
মহান আল্লাহ্’তালা মোমেনদের উদ্দেশ্য করে বলেন –
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘নিশ্চয় আল্লাহ্ মোমেনদের
নিকট হতে তাদের জীবন এবং তাদের ধন-সম্পদ ক্রয় করে লন এই জন্য জন্য যে,
তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহ্’র পথে যুদ্ধ করে, অতপর তারা হত্যা
(শত্রুকে) করে এবং নিজেরাও নিহত হয় – ইহা এক প্রতিশ্রুতি যা নিজের উপর
অবধারিত করেছেন, যা তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে বর্ণিত আছে। এবং নিজ
প্রতিশ্রুতি পালনে আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিকতর বিশ্বস্থ আর কে আছে ? অতএব
তোমরা তোমাদের এই ব্যবসায় আনন্দিত হও, যা তোমরা তাঁর সহিত করছ, এবং উহা
হচ্ছে মহা সফলতা।’
( আত তওবাহ্ – ১১১ )
وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلَّهِ لَا يَشْتَرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۗ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
‘আর আহলে কিতাবদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও
রয়েছে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং যা কিছু তোমার উপর অবতীর্ণ হয় আর যা
কিছু তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর উপর, আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত থাকে
এবং আল্লার আয়াতসমুহকে স্বল্পমুল্যের বিনিময়ে সওদা করে না, তারাই হলো সে
লোক যাদের জন্য পারিশ্রমিক রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ
যথাশীঘ্র হিসাব চুকিয়ে দেন।’
( আল ইমরান – ২০০ )
এখানে স্পষ্টতই বুঝা যায় যারা মোমেন তাদের সওদা হয় জান মালের বিনিময়ে বেহস্থ ক্রয় করা, এরা কখনও স্বল্প মূলের অর্থাৎ জাগতিক কানাকড়ির বিনিময়ে আল্লাহ্’র আয়াত বিক্রি করে না, অপর পক্ষে সেই সমস্থ লোক যারা জাগতিক মূল্যের বিনিময়ে আল্লাহ্’র আয়াত বিক্রয় করে বা কুরআন খতম, ওয়াজ, নামাজ, মিলাদ, বা দোয়া করার জন্য মূল্য গ্রহন করে তারা আল্লাহ্’র দৃষ্টিতে কাফের – তাদের হিসাব তাদেরকে চুকিয়ে দেওয়া হবে জাহান্নামের বিনিময়ে।
[ শাস্তি ]
_______
যারা কুরআনের আয়াতে যা কিছু আছে, তা যারা গোপন করে এবং তার বিনিময় হতে
পয়সা গ্রহন করার মাধ্যমে তা অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি। তাদেরকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যেমন –
وَالَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَلِقَائِهِ أُولَـٰئِكَ يَئِسُوا مِن رَّحْمَتِي وَأُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘যারা আল্লাহর আয়াত সমূহ ও তাঁর সাক্ষাত অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত
থেকে নিরাশ হবে এবং তাদের জন্যেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’
( আল আনকাবুত – ২৪ )
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا ۚ إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ
‘যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।’(আস সেজদা ২৩)
إِنَّ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي آيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَا ۗ أَفَمَن يُلْقَىٰ فِي النَّارِ خَيْرٌ أَم مَّن يَأْتِي آمِنًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ ۖ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
‘নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে
বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়। যে ব্যক্তি জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ ? না যে কেয়ামতের দিন নিরাপদে আসবে ? তোমরা যা
ইচ্ছা কর, নিশ্চয় তিনি দেখেন যা তোমরা কর।’
( হা মীম সিজদাহ্ – ৪১ )
মহান আল্লাহর ক্রোদাগ্নি এই জন্য যে, তারা আল্লাহ্’র আয়াতকে হাঁসি তামাশা বানিয়েছিল এবং এর দ্বারা মানুষকে প্রতারিত করে, আখেরাতের ভয় দেখিয়ে সাধারণ লোকদের নিকট হতে পয়সা, অর্থ বা মূল্যবান বস্তু গ্রহন করে। বস্তুত পক্ষে সে তার নিজেকেই প্রতারিত করেছে। সুতরাং তাদের তৌবা ও গ্রহন কারা হবে না। যেমন আল্লাহ্ বলেন-
ذَٰلِكُم بِأَنَّكُمُ اتَّخَذْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَغَرَّتْكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ لَا يُخْرَجُونَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ
‘এটা এজন্যে যে,
তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন
তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে
না এবং তাদের কাছে তওবা চাওয়া হবে না।’
( আল জাসিয়াহ্ – ৩৬ )
সুতরাং আল্লাহ্ যাদেরকে অপরাধ করার পর কোন তৌবা করার সুযোগ দান করবেন না – তাদের পক্ষে ক্ষমা পাওয়ার আর কোন সুযোগ রইল না বিধায় এরা চিরস্থায়ী ভারে জাহান্নামের অধিবাসি হবে। কাজেই আজ যে সমস্থ মৌলভীগণ কুরআনের খতম, ওয়াজ এবং নামাজ বা তাবিজ বিক্রীর নামে পয়সা গ্রহণ করছে তাদের সহিত ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই বরং এরা জাহান্নামের স্থায়ী অধিবাসি। কাজেই এদের সঙ্গ পরিত্যাগ না করলে সাধারণ মুসলমানদের ও তাদের সঙ্গী হিসাবে একই শাস্তির আওতায় পড়তে হবে। কারণ যারা কুরআনের আয়াত বিক্রি করবে আল্লাহ্ তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহন করবেন,যেমন তিঁনি পূর্ববর্তীদের উপর করেছে, এ ব্যাপারে তিঁনি বদ্ধ পরিকর। যেমন –
مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ
(তঁনি) নাযিল করেছেন তাওরত ও ইঞ্জিল, এ
কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা।
নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন
আযাব। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
( আল ইমরান -৪ )
মহান আল্লাহ্’তালা আমাদের কে ঐ সমস্থ লোকদের হতে হেফাজত করুন যারা ইসলামকে
তাদের রুটি রুজির প্রাথেয় হিসাবে গ্রহন করেছে এবং পবিত্র কুরআনের আসল
উদ্দেশ্য ও প্রকৃত শিক্ষা হতে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অতপর ধর্মের
বিনিময়ে আমদের নিকট হতে আর্থিক মুল্য বা উপকরণ গ্রহন করতে চায় – যা প্রকৃত
পক্ষে কাফেরদের কাজ !
আল্লাহ্ কাফেরদের আচরণ সম্পর্কে বলেন –
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِي وُجُوهِ الَّذِينَ كَفَرُوا الْمُنكَرَ ۖ يَكَادُونَ يَسْطُونَ بِالَّذِينَ يَتْلُونَ عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا ۗ قُلْ أَفَأُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَٰلِكُمُ ۗ النَّارُ وَعَدَهَا اللَّهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
‘যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়,
তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে।
যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে
উঠে। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব ? তা আগুন;
আল্লাহ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
(আল হজ্জ – ৭৩ )
এই লিখাটির পর সবাই তাই প্রত্যক্ষ করবে।
আমরা তৌবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত। আমিন।
Leave a Reply