November 18, 2024, 8:31 pm
নিজ জামা’তকে উদ্দেশ্য করে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহদী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি আঃ বলেন,
“হে আমার জামাত! খোদাতায়ালা আপনাদের সাথে থাকুন। ঐ কাদের-করিম খোদা আপনাদের পরকালের সফরের জন্য এমনভাবে প্রস্তুত করুন, যেভাবে অাঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের প্রস্তুত করা হয়েছিল। ভালভাবে মনে রেখো! দুনিয়া এক অসার বস্তু। অভিশপ্ত ঐ জীবন, যা কেবল দুনিয়ার জন্য এবং হতভাগ্য ঐ ব্যক্তি যার সকল চিন্তা-ভাবনা দুনিয়ার জন্য। এরূপ মানুষ যদি আমার জামাতে থাকে, তবে সে বৃথাই আমার জামাতে প্রবেশ করেছে। কেননা, সে ঐ শুষ্ক শাখায় ন্যায়, যা ফল দিবে না।
হে সৌভাগ্যশালী ব্যক্তিরা! তোমরা দৃঢ়তার সাথে এই শিক্ষায় প্রবেশ কর, যা তোমাদের পরিত্রাণের জন্য আমাকে প্রদান করা হয়েছে। তোমরা খোদাকে এক অদ্বিতীয় জেনো এবং তার সাথে আকাশে ও পৃথিবীতে কোন বস্তুকে শরিক করো না। খোদা উপকরণ ব্যবহার করতে তোমাদের নিষেধ করেন না। কিন্তু যে ব্যক্তি খোদাকে পরিত্যাগ করতে উপকরণের উপরই ভরসা করে-সে মুশরিক। আদিকাল হতে খোদা বলে আসছেন, হৃদয় পবিত্র না হওয়া ব্যতীত পরিত্রাণ নেই। সুতরাং তোমরা পবিত্রচিত্ত হয়ে যাও এবং হীন হিংসা, বিদ্বেষ ও ক্রোধ হতে দূরে যাক। মানুষের নফসে আম্মারায় (অবাধ্য আত্মায়-অনুবাদক) কয়েক ধরনের কলুষ নিহিত থাকে। কিন্তু সবচেয়ে অধিক কলুষ হল অহংকার। অহংকার না থাকলে কোন ব্যক্তি কাফের থাকত না। সুতরাং তোমরা প্রকৃত বিনয়ী হয়ে যাও। সাধারণভাবে মানব জাতির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন কর। যে স্থলে তোমরা তাদের বেহেশত প্রাপ্তির জন্য বক্তৃতা ও উপদেশ শুনিয়ে থাক, সে স্থলে তোমাদের এই বক্তৃতা কিভাবে সঠিক হতে পারে—যদি তোমরা এই কয়েক দিনের দুনিয়াতে তাদের অমঙ্গল কামনা কর। খোদাতায়ালার প্রতি কর্তব্যসমূহ আন্তরিক ভীতির সাথে সম্পাদন কর। কেননা, তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। নামাযে খুব দোয়া কর, যাতে তোমাদের খোদা নিজের দিকে আকর্ষণ করেন এবং তোমাদের হৃদয়কে পবিত্র করেন। কেননা, মানুষ দুর্বল। প্রত্যেকটি মন্দ স্বভাব, যা দূর হয়, তা খোদার শক্তিতেই দূর হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ খোদার কাছ থেকে শক্তি লাভ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে কোন মন্দ স্বভাব দূর করতে সমর্থ হবে না। ইসলাম কেবলমাত্র এটা নয় যে, প্রথা অনুযায়ী নিজেকে কলেমা বিশ্বাসী বলে আখ্যায়িত করবে; বরং ইসলামের যথার্থতা হলো, তোমাদের আত্মা খোদাতায়ালার দরবারে অবনত হয়ে যাবে এবং খোদা ও তার আদেশগুলো প্রত্যেক দিক হতে তোমাদের পার্থিব জীবনের উপর প্রাধান্য দিবে।
হে আমার প্রিয় জামাত! নিশ্চিতভাবে জেনো, যুগ নিজের শেষ প্রান্তে এসে পৌছেছে এবং একটি সুস্পষ্ট বিপ্লব অভিব্যক্ত হয়েছে। অতএব তোমাদের আতাকে প্রতারিত করো না এবং অতি শীঘ্র সত্যবাদিতায় কামেল হয়ে যাও। কুরআন করিমকে নিজেদের নেতা হিসাবে আঁকড়ে ধর এবং সর্ববিষয়ে এ হতে আলো গ্রহণ কর। হাদিসকে আবর্জনার ন্যায় নিক্ষেপ করো না; কেননা এটা বড়ই প্রয়োজনীয়, এবং অত্যন্ত পরিশ্রমের সাথে এর ভান্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু যখন কুরআনের বিবরণ হতে হাদিসের কোন বিবরণ বিরোধপূর্ণ হয় তখন এরূপ হাদিস ত্যাগ করবে, যাতে গোমরাহিতে না পড়। খোদাতায়ালা কুরআন শরিফকে অত্যন্ত হেফাযতের সাথে তোমাদের কাছে পৌছিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এই পবিত্র কালামের সম্মান কর। এর উপর কোন বস্তুকে প্রাধান্য দিও না। কেননা সকল সত্যতা ও বিশ্বস্ততা এর উপর নির্ভরশীল। কোন ব্যক্তির কথা মানুষের হৃদয়কে ঐ পরিমাণে প্রভাবান্বিত করে, যে পরিমাণে ঐ ব্যক্তির তত্ত্বজ্ঞান ও তাকওয়ার উপর তাদের আস্থা থাকে।
এখন দেখ! খোদা স্বীয় হুজ্জত (দলিল-প্রমাণের সাহায্যে কোন কিছুর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করা-অনুবাদক) তোমাদের উপর এভাবে পূর্ণ করে দিয়েছেন যে, আমার দাবির অনুকূলে হাজার-হাজার দলিল-প্রমাণ সৃষ্টি করে তোমাদের এই সুযোগ দেয়া হয়েছে—যাতে তোমরা চিন্তা কর, যে ব্যক্তি তোমাদের এই জামাতের দিকে আহবান জানাচ্ছেন, তিনি কোন পর্যায়ের তত্ত্বজ্ঞানী এবং কি পরিমাণ যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করছেন। তোমরা আমার পূর্বের জীবনের উপর কোন দোষারোপ করতে বা মিথ্যা বা প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারবে না, যাতে তোমরা এ ধারণা করতে পার, যে ব্যক্তি পূর্ব হতেই মিথ্যা ও প্রতারণায় অভ্যস্ত, এটিও সে মিথ্যা বলেছে। তোমাদের মধ্যে কে আছ, যে আমার জীবনে দোষারোপ করতে পার? সুতরাং এটি খোদার অনুগ্রহ, তিনি প্রথম থেকেই আমাকে তাকওয়ার (খোদাভীতির) উপর প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। যারা চিন্তা করে, তাদের জন্য এটা একটি দলিল।
এছাড়া আমার খোদা শতাব্দীর ঠিক শিরোভাগে আমাকে প্রেরণ করেছেন এবং আমাকে সত্যবাদীরূপে মানার জন্য যে পরিমাণ দলিল-প্রমাণের প্রয়োজন ছিল তার সবটাই তোমাদের জন্য যোগান দিয়েছেন। আমার জন্য আকাশ হতে আরম্ভ করে পৃথিবী পর্যন্ত নিদর্শন প্রকাশ করেছেন এবং সকল নবী আদি হতে আদ্যাবধি আমার সংবাদ দিয়েছেন। সুতরাং এই বিষয়টি যদি মানুষের হতো তাহলে এতে এই বিপুল পরিমাণ দলিল-প্রমাণ কখনো একত্রিত হত না। উপরন্তু খোদাতায়ালার সকল কিতাব এই কথার সাক্ষী, যে খোদার নামে মিথ্যা বলে, খোদা তাকে শীঘ্র পাকড়াও করেন এবং অত্যন্ত লাঞ্ছনার সাথে তাকে ধ্বংস করেন। কিন্তু তোমরা দেখছ, আল্লাহর পক্ষ হতে আমার প্রেরিত হওয়ার দাবি ত্রিশ বছরের অধিক হয়েছে। যেমন বারাহীনে আমহদীয়ার প্রথম অংশের প্রতি লক্ষ্য করলে তোমরা বুঝতে পারবে। সুতরাং প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি বুঝতে পারে, খোদা কি কখনো এই রীতি গ্রহণ করেছেন এবং যখন হতে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তখন হতে তিনি কি কখনো এরূপ কাজ করেছেন, যে ব্যক্তি এরূপ মন্দ স্বভাববিশিষ্ট ধূর্ত, অশিষ্ট এবং খোদার নামে মিথ্যা কথা বলে এবং ত্রিশ বছর ধরে প্রতিদিন প্রতিরাত্রে খোদাতায়ালার নামে মিথ্যা কথা বলে নিজের মনগড়া এক নতুন ইলহাম বানিয়ে লোকদের বলে যে, খোদাতায়ালার পক্ষ হতে এই ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, এবং খোদাতায়ালা এরূপ ব্যক্তিকে ধ্বংস করার পরিবর্তে শক্তিশালী নিদর্শনাবলী দ্বারা তাকে সাহায্য করেন? তার দাবি সপ্রমাণ করার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আকাশে চন্দ্র ও সূর্যে গ্রহণ লাগিয়ে দেন? অনুরূপভাবে যে ভবিষ্যদ্বাণী পূর্বের কিতাবসমূহে কুরআন শরিফে হাদিসসমূহে এবং স্বয়ং তার কিতাব বারাহীনে আহমদীয়ায় লিপিবদ্ধ ছিল তা পূর্ণ করে জগদ্বাসীকে দেখান? এবং সত্যবাদীর ন্যায় ঠিক শতাব্দীর শিরোভাগে তাকে প্রেরণ করেন? এবং ঠিকই ক্রুশের প্রাধান্যের সময় যাকে খন্ডন করার জন্য ক্রুশ ধ্বংসকারী প্রতিশ্রুত মসীহের আগমন অবধারিত ছিল, তাকে এই দাবির সাথে দাড় করিয়ে দেন? এবং তার সমর্থনে দশ লক্ষের অধিক নিদর্শন দেখান? এবং পৃথিবীতে তাকে সম্মান প্রদান করেন? এবং পৃথিবীতে তার কবুলিয়ত বিস্তার করেন? এবং শত-শত ভবিষ্যদ্বাণী তার পক্ষে পূর্ণ করেন?
এবং প্রতিশ্রুত মসীহের আবির্ভাবের জন্য নবীগণ কর্তৃক নির্ধারিত দিনে তাকে সৃষ্টি করেন? এবং তার দোয়া কবুল করেন? এবং তার বর্ণনায় প্রভাব সৃষ্টি করেন? একইভাবে তাকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন? অথচ তিনি জানেন, সে একজন মিথ্যাবাদী এবং অন্যায়ভাবে জেনে-বুঝে তার প্রতি মিথ্যা ওহী আরোপ করে? তোমরা কি বলতে পার আমার পূর্বে খোদাতায়ালা অন্য কোন মুফতারির (যে ব্যক্তি খোদার নামে মিথ্যা কথা বলে) প্রতি এরূপ দয়া ও করুণা প্রদর্শন করেছিলেন?
অতএব হে খোদার বান্দারা! গাফেল হয়ো না। শয়তান তোমাদের যেন কুপ্ররোচণা না দেয়। নিশ্চিতভাবে জেন, ঐ ওয়াদা পূর্ণ হল যা আদি হতে খোদার পবিত্র নবীগণ করে আসছেন। আজ খোদার প্রেরিত পুরুষগণ ও শয়তানের মধ্যে শেষ যুদ্ধ। এটি ঐ-সময় ও ঐ-যুগ—যার প্রতি দানিয়াল নবীও ইঙ্গিত করেছিলেন। আমি সত্যবাদীদের জন্য একটি আশিসরূপে এসেছি। কিন্তু আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়েছে। আমাকে কাফের ও দাজ্জাল আখ্যা দেয়া হয়েছে। এরূপ হওয়াই জরুরী ছিল—যাতে এ ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়ে যায়, যা গায়রিল মাগযুবি আলাইহিম আয়াতে প্রচ্ছন্ন রয়েছে। কেননা খোদা মুনইম আলাইহিম’ এর ওয়াদা করে এই আয়াতে বলেছেন এই উম্মতের মধ্যে ঐসব ইহুদীও সৃষ্টি হবে, যারা ইহুদী আলেমদের সদৃশ হবে। তারা হযরত ইসা (আ.)-কে ক্রুশে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা ইসা (আ.)-কে কাফের, দাজ্জাল ও নাস্তিক আখ্যা দিয়েছিল। এখন চিন্তা কর, এটি কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত ছিল। এটি এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত ছিল, প্রতিশ্রুত মসীহ এই উম্মতের মধ্য হতে আগমন করবে। এজন্য তার যুগে ইহুদী স্বভাববিশিষ্ট মানুষও সৃষ্টি হয়ে যাবে—যারা নিজেদের আলেম বলবে । অতএব আজ তোমাদের দেশে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়ে গেছে। যদি এই আলেম না থাকত, তাহলে এই পর্যন্ত এই দেশের সব মুসলমান অধিবাসী আমাকে গ্রহণ করত। সুতরাং সকল অস্বীকারকারীর পাপ এদের ঘাড়ে চাপবে। এরা ন্যায়পরায়ণতার প্রাসাদে না নিজেরা প্রবেশ করছে, না স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। এরা কতই-না ষড়যন্ত্র করছে! এদের গৃহে সংগোপনে কতই-না পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এরা কি খোদার উপর জয়যুক্ত হয়ে যাবে? এরা কি সর্বশক্তিমান খোদার ইচ্ছায় বাধ সাধতে পারবে—যার সম্বন্ধে নবী ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। এরা এই দেশের খল প্রকৃতির আমীরদের এবং হতভাগ্য ঐশ্বর্যশালী বস্তুবাদী লোকদের উপর ভরসা করছে। কিন্তু খোদার দৃষ্টিতে এরা কি? খোদার দৃষ্টিতে এরা মৃত কীট মাত্র।
হে মানব মন্ডলী! শুনে রাখ! এটি তার ভবিষ্যদ্বাণী-যিনি পথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজের এই জামাতকে সকল দেশে বিস্তৃত করে দিবেন এবং হুজ্জত ও সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী দলিল দ্বারা সকলের উপর তাদের বিজয় দান করবেন। ঐদিন আসছে বরং ঐ দিন কাছে যখন পৃথিবীতে কেবলমাত্র এই একটি ধর্ম হবে যাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হবে। খোদা এই ধর্মকে এবং এই জামাতকে উচ্চ মর্যাদা ও অসাধারণ আশিসে বিভূষিত করবেন এবং যে কেউ একে শেষ করে দেয়ার চিন্তা করবে তাকে ব্যর্থ করে দেয়া হবে। এই বিজয় চিরকাল কায়েম থাকবে। এমনকি এর কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকবে। যদি আমার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয় তাহলে এই ঠাট্টা-বিদ্রুপে আমার কি ক্ষতি হবে? কেননা এমন কোন নবী নাই যার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়নি। অতএব, এটা জরুরী ছিল, প্রতিশ্রুত মসীহের সাথেও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হবে। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন:
আক্ষেপ আমার বান্দাদের জন্য, তাদের কাছে এমন কোন রাসুল আসেনি, যার সাথে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেনি (৩৬:৩১)। সুতরাং খোদার পক্ষ থেকে এটা একটি নিদর্শন, প্রত্যেক নবীর সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমন ব্যক্তি—যিনি সব মানুষের সামনে আকাশ হতে অবতীর্ণ হবেন এবং তার সাথে ফিরিশতাগণও থাকবেন, তার সাথে কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে? সুতরাং এই যুক্তি দ্বারাও বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ বুঝতে পারবেন, প্রতিশ্রুত মসীহের আকাশ হতে অবতরণ একটি মিথ্যা ধারণা মাত্র। স্মরণ রেখো, কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবে না। আমাদের সকল বিরুদ্ধবাদী যারা আজ জীবিত আছে, তারা সকলে মরবে, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই মরিয়পুত্র ঈসাকে আকাশ হতে অবতীর্ণ হতে দেখবে না। এরপর তাদের সন্তানেরাও মরবে, কিন্তু তাদের মধ্য হতেও কেউ মরিয়মপুত্র ঈসাকে আকাশ হতে অবতীর্ণ হতে দেখবে না। এরপর সন্তানদের সন্তানেরা মরবে, কিন্তু তারাও মরিয়মের পুত্রকে আকাশ হতে অবতীর্ণ হতে দেখবে না। তখন খোদা তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবেন যে, ক্রুশের প্রাধান্যের যুগও অতিবাহিত হয়েছে এবং পৃথিবীর অবস্থা অন্য রকম হয়ে গেছে, কিন্তু মরিয়মের পুত্র ইসা (আ.) এখনও আকাশ হতে অবতীর্ণ হলেন না। তখন বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এই বিশ্বাসের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়বে। এরপর আজ হতে তৃতীয় শতাব্দী পূর্ণ হবে না, যখন ইসা (আ.) এর অপেক্ষাকারীরা, কি মুসলমান, কি খৃস্টান, সকলে অত্যন্ত হতাশ ও বিরক্ত হয়ে মিথ্যা বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করবে তখন পৃথিবীতে একটিই ধর্ম হবে এবং একই নেতা। আমি তো একটি বীজ বপন করতে এসেছি। সুতরাং আমার হাত দ্বারা ঐ বীজ বপন করা হয়েছে। এখন এটা বৃদ্ধি লাভ করবে এবং বিকশিত হবে। কেউ একে প্রতিহত করতে পারবে না।
এই ধারণা করো না, আর্য-অর্থাৎ, হিন্দু দয়নন্দী ধর্মের অনুসারীরা কোন কাজের বস্তু। তারা ঐ ভীমরুলের ন্যায়, যার মধ্যে হুল ফুটানো ছাড়া আর কিছুই নাই। তারা জানে না তওহীদ কী বস্তু। তারা আধ্যাত্মিকতা হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। দোষ ধরা এবং খোদার পবিত্র নবীদের গালমন্দ দেয়া তাদের কাজ। তাদের বড় কীর্তি হলো, তারা শয়তানী কুপ্ররোচণার আপত্তির এক ভান্ডার জমা করছে এবং খোদাভীতি ও পবিত্রতার রুহ তাদের মধ্যে নেই। স্মরণ রেখো! আধ্যাতিকতা ব্যতীত কোন ধর্ম চলতে পারে না এবং আধ্যাত্মিকতাবিহীন ধর্ম কোন বস্তুই নয়। যে ধর্মে আধ্যাত্মিকতা নেই, যে ধর্মে খোদার সাথে বাক্যালাপের সম্পর্ক নেই এবং সত্যতা ও বিশ্বস্ততার রুহ নেই, যে ধর্মের সাথে ঐশী-আকর্ষণ নেই এবং যে ধর্মের কাছে অসাধারণ পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত নেই, সেই ধর্ম মৃত। তাকে ভয় করো না। তোমাদের মধ্যে লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি মানুষ জীবিত থাকবে, যারা এই ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখবে। কেননা, আর্যদের এই ধর্ম আকাশ হতে নয়, পৃথিবী হতে সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি আকাশের কথা পেশ না করে পৃথিবীর কথা উপস্থাপন করে। সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও এবং আনন্দে উচ্ছসিত হও, খোদা তোমাদের সাথে আছেন। যদি তোমরা সততা ও ঈমানের ওপর কায়ম থাকো তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের শিক্ষা প্রদান করবেন, ঐশী প্রশান্তি তোমাদের উপর অবতীর্ণ হবে, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তোমরা সাহায্য লাভ করবে, প্রতি পদক্ষেপে খোদা তোমাদের সাথে থাকবেন এবং কেউ তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। ধৈর্যের সাথে খোদার আশিসের অপেক্ষা কর । গালি শুন এবং নিরব থাক| মার খাও এবং ধৈর্য ধর। যতদূর সম্ভব মন্দের মোকাবেলা হতে বিরত থাক, যাতে আকাশে তোমাদের কবুলিয়ত (গ্রহণযোগ্যতা—চলতিকারক) লিখিত হয়। নিশ্চিতভাবে স্মরণ রেখো, যারা খোদাকে ভয় করে এবং যাদের হৃদয় খোদার ভয়ে বিগলিত হয়ে যায়, খোদা তাদের সাথেই থাকেন এবং তিনি তাদের শত্রুদের শত্রু হয়ে যান। পৃথিবী সত্যবাদীকে দেখতে পায় না। কিন্তু সর্বজ্ঞানী ও সর্বদশী খোদা সত্যবাদীদের দেখে থাকেন। তিনি নিজ হাতে তাদের রক্ষা করেন। যে ব্যক্তি সরল অন্তঃকরণে তোমাদের ভালবাসে এবং সত্য-সত্যই তোমাদের জন্য মরার জন্যও প্রস্তুত হয়ে যায় এবং তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আজ্ঞানুবর্তিতা করে এবং তোমাদের জন্য সব পরিত্যাগ করে, তোমরা কি তাকে ভালবাস না এবং তোমরা কি তাকে সবচেয়ে প্রিয় মনে কর না? সুতরাং তোমরা যেখানে মানুষ হয়ে ভালবাসার প্রতিদানে ভালবাস সেখানে খোদা কেন ভালবাসবেন না? খোদা ভালভাবে অবগত আছেন, প্রকৃতপক্ষে তার বিশ্বস্ত বন্ধু কে এবং কে বিশ্বাসঘাতক এবং দুনিয়াকে কে প্রাধান্য দেয়। অতএব তোমরা যদি এভাবে বিশ্বস্ত হয়ে যাও, তাহলে তোমাদের ও অন্যান্যের মধ্যে খোদার হাত (শক্তি -চলতিকারক) একটি পার্থক্য কায়েম করে দেখাবেন।”
-তাযকেরাতুশ শাহাদাতাঈন
নিজ জামা’তকে উদ্দেশ্য করে প্রতিশ্রুত মসীহ্ ও ইমাম মাহদী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি আঃ বলেন,
অতএব হে খোদার বান্দারা! গাফেল হয়ো না। শয়তান তোমাদের যেন কুপ্ররোচণা না দেয়। নিশ্চিতভাবে জেনো, ঐ ওয়াদা পূর্ণ হল যা আদি হতে খোদার পবিত্র নবীগণ করে আসছেন। আজ খোদার প্রেরিত পুরুষগণ ও শয়তানের মধ্যে শেষ যুদ্ধ। এটি ঐ-সময় ও ঐ-যুগ—যার প্রতি দানিয়াল নবীও ইঙ্গিত করেছিলেন। আমি সত্যবাদীদের জন্য একটি আশিসরূপে এসেছি। কিন্তু আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়েছে। আমাকে কাফের ও দাজ্জাল আখ্যা দেয়া হয়েছে। এরূপ হওয়াই জরুরী ছিল—যাতে এ ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়ে যায়, যা “গায়রিল মাগযুবি আলাইহিম” আয়াতে প্রচ্ছন্ন রয়েছে। কেননা খোদা ‘মুনইম আলাইহিম’ এর ওয়াদা করে এই আয়াতে বলেছেন এই উম্মতের মধ্যে ঐসব ইহুদীও সৃষ্টি হবে, যারা ইহুদী আলেমদের সদৃশ হবে। তারা হযরত ইসা (আ.)-কে ক্রুশে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা ইসা (আ.)-কে কাফের, দাজ্জাল ও নাস্তিক আখ্যা দিয়েছিল। এখন চিন্তা কর, এটি কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত ছিল। এটি এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত ছিল, প্রতিশ্রুত মসীহ এই উম্মতের মধ্য হতে আগমন করবে। এজন্য তার যুগে ইহুদী স্বভাববিশিষ্ট মানুষও সৃষ্টি হয়ে যাবে—যারা নিজেদের আলেম বলবে। অতএব আজ তোমাদের দেশে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়ে গেছে। যদি এই আলেম না থাকত, তাহলে এই পর্যন্ত এই দেশের সব মুসলমান অধিবাসী আমাকে গ্রহণ করত। সুতরাং সকল অস্বীকারকারীর পাপ এদের ঘাড়ে চাপবে। এরা ন্যায়পরায়ণতার প্রাসাদে না নিজেরা প্রবেশ করছে, না স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। এরা কতই-না ষড়যন্ত্র করছে! এদের গৃহে সংগোপনে কতই-না পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এরা কি খোদার উপর জয়যুক্ত হয়ে যাবে? এরা কি সর্বশক্তিমান খোদার ইচ্ছায় বাধ সাধতে পারবে—যার সম্বন্ধে নবী ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। এরা এই দেশের খল প্রকৃতির আমীরদের এবং হতভাগ্য ঐশ্বর্যশালী বস্তুবাদী লোকদের উপর ভরসা করছে। কিন্তু খোদার দৃষ্টিতে এরা কি? খোদার দৃষ্টিতে এরা মৃত কীট মাত্র।
এই ধারণা করো না, আর্য-অর্থাৎ হিন্দু দয়নন্দী ধর্মের অনুসারীরা কোন কাজের বস্তু। তারা ঐ ভীমরুলের ন্যায়, যার মধ্যে হুল ফুটানো ছাড়া আর কিছুই নাই। তারা জানে না তওহীদ কী বস্তু। তারা আধ্যাত্মিকতা হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। দোষ ধরা এবং খোদার পবিত্র নবীদের গালমন্দ দেয়া তাদের কাজ। তাদের বড় কীর্তি হলো, তারা শয়তানী কুপ্ররোচণার আপত্তির এক ভান্ডার জমা করছে এবং খোদাভীতি ও পবিত্রতার রুহ তাদের মধ্যে নেই। স্মরণ রেখো! আধ্যাত্মিকতা ব্যতীত কোন ধর্ম চলতে পারে না এবং আধ্যাত্মিকতাবিহীন ধর্ম কোন বস্তুই নয়। যে ধর্মে আধ্যাত্মিকতা নেই, যে ধর্মে খোদার সাথে বাক্যালাপের সম্পর্ক নেই এবং সত্যতা ও বিশ্বস্ততার রুহ নেই, যে ধর্মের সাথে ঐশী-আকর্ষণ নেই এবং যে ধর্মের কাছে অসাধারণ পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত নেই, সেই ধর্ম মৃত। তাকে ভয় করো না। তোমাদের মধ্যে লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি মানুষ জীবিত থাকবে, যারা এই ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখবে। কেননা, আর্যদের এই ধর্ম আকাশ হতে নয়, পৃথিবী হতে সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি আকাশের কথা পেশ না করে পৃথিবীর কথা উপস্থাপন করে। সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও এবং আনন্দে উচ্ছসিত হও, খোদা তোমাদের সাথে আছেন। যদি তোমরা সততা ও ঈমানের ওপর কায়ম থাকো তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের শিক্ষা প্রদান করবেন, ঐশী প্রশান্তি তোমাদের উপর অবতীর্ণ হবে, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তোমরা সাহায্য লাভ করবে, প্রতি পদক্ষেপে খোদা তোমাদের সাথে থাকবেন এবং কেউ তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। ধৈর্যের সাথে খোদার আশিসের অপেক্ষা কর । গালি শুন এবং নিরব থাক। মার খাও এবং ধৈর্য ধর। যতদূর সম্ভব মন্দের মোকাবেলা হতে বিরত থাক, যাতে আকাশে তোমাদের কবুলিয়ত (গ্রহণযোগ্যতা—চলতিকারক) লিখিত হয়। নিশ্চিতভাবে স্মরণ রেখো, যারা খোদাকে ভয় করে এবং যাদের হৃদয় খোদার ভয়ে বিগলিত হয়ে যায়, খোদা তাদের সাথেই থাকেন এবং তিনি তাদের শত্রুদের শত্রু হয়ে যান। পৃথিবী সত্যবাদীকে দেখতে পায় না। কিন্তু সর্বজ্ঞানী ও সর্বদশী খোদা সত্যবাদীদের দেখে থাকেন। তিনি নিজ হাতে তাদের রক্ষা করেন। যে ব্যক্তি সরল অন্তঃকরণে তোমাদের ভালবাসে এবং সত্য-সত্যই তোমাদের জন্য মরার জন্যও প্রস্তুত হয়ে যায় এবং তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী তোমাদের আজ্ঞানুবর্তিতা করে এবং তোমাদের জন্য সব পরিত্যাগ করে, তোমরা কি তাকে ভালবাস না এবং তোমরা কি তাকে সবচেয়ে প্রিয় মনে কর না? সুতরাং তোমরা যেখানে মানুষ হয়ে ভালবাসার প্রতিদানে ভালবাস সেখানে খোদা কেন ভালবাসবেন না? খোদা ভালভাবে অবগত আছেন, প্রকৃতপক্ষে তার বিশ্বস্ত বন্ধু কে এবং কে বিশ্বাসঘাতক এবং দুনিয়াকে কে প্রাধান্য দেয়। অতএব তোমরা যদি এভাবে বিশ্বস্ত হয়ে যাও, তাহলে তোমাদের ও অন্যান্যের মধ্যে খোদার হাত (শক্তি -চলতিকারক) একটি পার্থক্য কায়েম করে দেখাবেন।”-তাযকেরাতুশ শাহাদাতাঈন পুস্তক
Leave a Reply